‘শঙ্কা’ থাকলেও সংঘাত এড়িয়ে শান্তিপূর্ণভাবে চট্টগ্রামে বিভাগীয় সমাবেশ ‘সফল’ করতে চায় বিএনপি। এ লক্ষ্যে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এর অংশ হিসেবে নগর বিএনপি’র উদ্যোগে প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে গত কয়েকদিন ধরে লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। হয়েছে প্রস্তুতি সভা। একইভাবে উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের উদ্যোগেও প্রতিটি থানা ও পৌরসভায় দফায় দফায় প্রস্ততি সভা ও লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন অন্যান্য সাংগঠনিক জেলায়ও একইভাবে প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
আজ দুপুর ২টায় নগরের নাসিমন ভবনস্থ নগর বিএনপি’র দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহম্মদ সড়কে এ বিভাগীয় সমাবেশ হওয়ার কথা রয়েছে। ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ১০ দফা’ বাস্তবায়নের দাবিতে চট্টগ্রামসহ দেশের ১০টি বিভাগীয় শহরেই এ সমাবেশ হবে। সমাবেশগুলোতে কারা অতিথি হবেন তাও ঠিক করে দিয়েছে কেন্দ্র। চট্টগ্রামে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান ও মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুকসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী থাকবেন ময়মনসিংহের সমাবেশে।
বিএনপি নেতারা বলছেন, তাদের সমাবেশকে ঘিরে পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নেতাদের ভাষায় বিষয়টি ‘গায়ে পড়ে ঝগড়া লাগানো’র মত। এছাড়া বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ১৬ জানুয়ারি কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহম্মদ সড়কে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে নগর বিএনপি। এ দিন পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় দলটির নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় একই রাতে চারটি মামলা করে পুলিশ। তখন বিএনপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, সমাবেশস্থলের প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে বাধা দেয়া সংঘাতের সূচনা হয়। এর আগে গত বছরের ১২ অক্টোবর নগরের পলোগ্রাউন্ডে বিভাগীয় সমাবেশ করেছিল বিএনপি। সমাবেশে আসার পথে কয়েক জায়গায় বাধা দেয়ার অভিযোগও ছিল তখন। পূর্বের এসব অভিজ্ঞতা টেনে বিএনপি নেতাদের কেউ কেউ এবারও বাধা পাওয়ার শঙ্কা করছেন। তবে শান্তিপূর্ণভাবেই সমাবেশ শেষ করতে চান বলেও জানান তারা।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম দৈনিক আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম বিভাগের ১০ টি সাংগঠনিক জেলা থেকে নেতাকর্মীরা স্বতঃস্পূর্তভাবে অংশ নিবেন। এতে মিছিলের নগরী হয়ে উঠবে চট্টগ্রাম। সমাবেশস্থল জনসমুদ্রে রূপ নিবে।
নগর বিএনপি’র আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক আজাদীকে বলেন, নগরের ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা যোগ দিবেন। অঙ্গসংগঠনগুলোও আলাদাভাবে আসবে। সমাবেশ সফল হবে।
বিভাগীয় সমাবেশ মাঠের পরিবর্তে দলী কার্যালয়ের সামনে সড়ক দখল করে কেন আয়োজন করা হচ্ছে জানতে চাইলে বলেন, পলোগ্রাউন্ডে করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে মেলার প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে বরাদ্দ দেয়নি। দ্বিতীয় ভেন্যু হিসেবে লালদীঘি মাঠ চেয়েছিলাম। সেখানেও অনুমতি দিচ্ছে না। লালদীঘি মাঠে নাকি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড হবে, কোনো রাজনৈতিক সমাবেশ হবে না। এটা কেমন কথা বুঝতে পারছি না। এ মাঠ হচ্ছে আন্দোলনের সূতিকাগার, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘিরে এ মাঠের ঐতিহ্য আছে। কিন্তু সেটাও বন্ধ করে দিল।
বিএনপি’র সমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগের ‘পাল্টা সমাবেশ’ আহ্বান বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, অতীতে আমরা কোনো সময় পাল্টা সমাবেশের ডাক দিইনি। তারা নাকি বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিবে। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম দেখে মনে হচ্ছে তারা গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে চাচ্ছে। এর আগে পলোগ্রাউন্ডে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশের সময় আমবাগান রোডে গাড়ি বহরে হামলা করেছিল সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের কর্মীরা। কাপ্তাই থেকে আসার সময় রাঙ্গুনিয়াসহ বাধা দিয়েছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে আসার সময়ও বাধা দিয়েছিল। যেহেতু বিভাগীয় সমাবেশ এবারও বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন আসবে। কোথাও বাধা দিল তার দায়ভার তাদেরকেই বহন করতে হবে।
গত ১৬ জানুয়ারি নূর আহম্মদ সড়কে মিছিল নিয়ে প্রবেশে বাধা দেয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছিল বিএনপি নেতাকর্মীরা। এবার এ ধরনের সংঘাত এড়াতে কি করছেন জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত বলেন, আমাদের লোক মারামারি করার জন্য সমাবেশে আসে না। ওই সময় সমাবেশস্থলের প্রবেশপথে ব্যারিকেড দিয়ে পুলিশ বাধা দিয়েছিল। যেহেতু প্রশাসনের সাথে কথা বলে এবার সমাবেশ করছি তাই তাদের দায়িত্ব লোকজন যেন বাধাহীনভাবে প্রবেশ করতে পারে। ব্যারিকেড না দিয়ে পথ খোলা রাখার জন্য বলেছি।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান দৈনিক আজাদীকে বলেন, দক্ষিণ জেলার আওতাধীন প্রতিটি উপজেলা ও পৌরসভা থেকে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের নেতৃত্বে প্রচুর লোক সমাবেশে যোগ দিবে। সমাবেশকে ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। লিফলেট বিতরণ ও প্রস্তুতি সভা হয়েছে প্রতিটি সাংগঠনিক ইউনিটে।
চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম দৈনিক আজাদীকে বলেন, উত্তর জেলা থেকেও ব্যাপক উপস্থিতি থাকবে। এ জন্য প্রস্তুতি সভাও করেছি। জেলায় এবং উপজেলা ও পৌরসভায় পৃথক এ প্রস্তুতি সভা হয়েছে বলেও জানান তিনি।