বিপিএলে রান পাননি অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। রান খড়াতে ভুগছিল তার ব্যাট। এরপর সিলেটে টি–টোয়েন্টি সিরিজ হার। সব মিলিয়ে একটা প্রতিকূল অবস্থা। এসবকে পেছনে রেখে চট্টগ্রামে হেসে উঠলো তার ব্যাট। আর তাতে করে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে দারুণ জয় দিয়ে শ্রীলংকার বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু করল স্বাগতিক বাংলাদেশ। গতকাল বুধবার সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ৬ উইকেটে হারায় শ্রীলংকাকে। ১২৯ বলে অপরাজিত ১২২ রানের ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেন শান্ত। এছাড়া মুশফিকুর রহিম করেন অপরাজিত ৭৩ রান। এই জয়ে সিরিজে ১–০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। প্রথমে ব্যাট করে ৪৮ দশমিক ৫ ওভারে সব উইকেট হারিয়ে ২৫৫ রান করে সফরকারী শ্রীলংকা। জবাবে শান্তর অধিনায়কোচিত ইনিংসে ভর করে ৩২ বল বাকী রেখে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ফিল্ডিংয়ে নামে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৯ বলে ৭১ রান যোগ করেন শ্রীলংকার দুই ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কা ও আভিস্কা ফার্নান্দো। দশম ওভারে নিজের দ্বিতীয় ওভার করতে এসে বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক–থ্রু এনে দেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমকে ক্যাচ দিয়ে তানজিমের শিকার হন ৩৩ বলে ৩৩ রান করা আভিস্কা। পরের ওভারে আবারও সাফল্য পান তানজিম। ২৮ বলে ৩৬ রান করে আউট হন নিশাঙ্কা।
শ্রীলংকার দুই ওপেনারকে বিদায়ের পর নিজের তৃতীয় ওভারেও উইকেটের দেখা পান তানজিম। ৩ রান করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন সাদিরা সামারাবিক্রমা। তানজিমের তোপে ৮৪ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে শ্রীলংকা। এরপর উইকেট পতনের ধাক্কা সামাল দিয়ে দলের রান ১০০ পার করেন অধিনায়ক কুশল মেন্ডিস ও চারিথ আসালঙ্কা। ২৬তম ওভারে কুশল ও আসালঙ্কার জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ৩৭ বলে ১২ রান করে মিরাজের বলে বোল্ড হন আসালঙ্কা। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ৭৩ বলে ৪৪ রান যোগ করেন মেন্ডিস–আসালংঙ্কা। পঞ্চম উইকেটে জানিথ লিয়ানাগেকে নিয়ে ৬৮ বলে ৬৯ রানের জুটি গড়েন কুশল। এই জুটিতে ওয়ানডেতে ২৯ তম হাফ–সেঞ্চুরি পূর্ণ করে থামেন কুশল। পেসার তাসকিনের বলে মিড অনে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তকে ক্যাচ দেন ৭৫ বলে ৫৯ রান করা কুশল।
দলীয় ১৯৭ রানে কুশল ফেরার পর লিয়ানাগের সাথে পরের ব্যাটারদের বড় জুটি বাঁধতে দেননি তাসকিন। হাসারাঙ্গা ডি সিলভাকে ১৩ ও মহেশ থিকশানাকে ১ রানে শিকার ফিরিয়ে দেন তিনি। টানা তৃতীয় হাফ–সেঞ্চুরি পূর্ন করে ব্যক্তিগত ৬৭ রানে পেসার শরিফুলের বলে উইকেটরক্ষক মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন লিয়ানাগে। লিয়ানাগে ফেরার পর বাকী দুই উইকেটে শ্রীলংকার রান বেশি দূর যেতে পারেনি। ৭ বল বাকী থাকতে ২৫৫ রানে অলআউট হয় শ্রীলংকা। বাংলাদেশের শরিফুল ৫১ রানে, তাসকিন ৬০ রানে ও তানজিম ৪৪ রানে ৩টি করে উইকেট নেন। ৩৩ রানে ১ উইকেট পান মিরাজ।
২৫৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই লংকান পেসার দিলশান মাদুশঙ্কার ডেলিভারিতে বোল্ড হন বাংলাদেশের ওপেনার লিটন দাস। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ১৩ বার খালি হাতে ফেরার মধ্যে এই নিয়ে ষষ্ঠবার গোল্ডেন ডাক মারলেন লিটন। তৃতীয় ওভারে মাদুশঙ্কার দ্বিতীয় শিকার হন ৩ রান করা সৌম্য। ক্রিজে নতুন ব্যাটার তাওহিদ হৃদয়কে ৩ রানে ফিরিয়ে দেন প্রমোদ মাদুশান। ২৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর বাংলাদেশকে চাপমুক্ত করেন অধিনায়ক শান্ত ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হাফ–সেঞ্চুরির জুটিতে দলকে লড়াইয়ে ফেরান তারা। ১৬তম ওভারে মারমুখী মেজাজে থাকা মাহমুদউল্লাহর বিদায় ঘণ্টা বাজান লাহিরু কুমারা। আউট হওয়ার আগে ৪টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৭ বলে ৩৭ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। অধিনায়ক শান্ত–মাহমুদউল্লাহ ৬২ বলে ৬৯ রান যোগ করেন। দলীয় ৯২ রানে মাহমুদউল্লাহ ফেরার পর ক্রিজে শান্তর সঙ্গী হন মুশফিকুর রহিম। এরপর বাউন্ডারি মেরে ৫২ বলে ওয়ানডেতে নবম অর্ধশতক পূর্ণ করেন শান্ত। ব্যক্তিগত হাফ–সেঞ্চুরির পর মুশফিকের সাথে চতুর্থবারের মত জুটিতে ৫০ পূর্ণ করেন শান্ত। এরপর ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৯তম হাফ–সেঞ্চুরির স্বাদ নেন ৫৯ বল খেলা মুশফিক। ৩৮তম ওভারের শেষ বলে চার মেরে ওয়ানডেতে তৃতীয় সেঞ্চুরি করেন শান্ত। এর আগে শ্রীলংকার বিপক্ষে ৮৯ ও ৯০ রানে আউট হলেও, এবার সেঞ্চুরি তুলে নিতে ভুল করেননি ১০৮ বল খেলে ১১টি চার ও ১টি ছক্কা মারা শান্ত। শান্তর সেঞ্চুরিতে শেষ ৭২ বলে ৩৮ রান প্রয়োজন পড়ে বাংলাদেশের।
এই প্রয়োজন অনায়াসে মিটিয়ে বাংলাদেশকে জয় উপহার দেন শান্ত ও মুশফিক। ১৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ১২৯ বলে ক্যারিয়ার সেরা অপরাজিত ১২২ রান করেন শান্ত। ৮টি বাউন্ডারিতে ৮৪ বলে অনবদ্য ৭৩ রান করেন মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে ১৭৫ বলে অবিচ্ছিন্ন ১৬৫ রানের জুটি গড়েন শান্ত ও মুশফিক। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের পক্ষে দ্বিতীয় ও শ্রীলংকার বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি এটি। আগামীকাল ১৫ মার্চ জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মাঠে নামবে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা।
