নির্মাণাধীন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে বিজয় দিবসের আগে দৃশ্যমান করার নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। একইসঙ্গে শহীদ মিনারকে জনবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এছাড়া বয়স্কদের উপযোগী সিড়ি নির্মাণ এবং পথচারীরা যাতে সহজে শহীদ মিনার দেখতে পারেন তা নিশ্চিত করে কাজ করতে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন মেয়র। গতকাল শনিবার নবনির্মিত শহীদ মিনারে মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার প্রতিনিধিদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবমিনিময় সভায় এ নির্দেশনা দেন মেয়র। সভায় ২ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় পুনরায় সভা করার পাশাপাশি প্রতি মাসের ২য় শনিবার সকাল ১১টায় শহীদ মিনার নির্মাণ বিষয়ে সভা করার সিদ্ধান্ত হয়।
জানা গেছে, ২৮১ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বাজেটে চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের কাজ চলছে। ইত্যেমধ্যে ২০৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৮৭ শতাংশ এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। এ প্রকল্পের আওতায় পুরনো শহীদ মিনারের আদল ঠিক রেখে নির্মাণ করা হচ্ছে নতুন শহীদ মিনার ও উন্মুক্ত গ্যালারি। এছাড়া পুরনো পাবলিক লাইব্রেরি ভেঙে ১৫ তলা গণগ্রন্থাগার ভবন ও পুরনো মুসলিম হল ভেঙে নির্মাণ করা হয়েছে ৮ তলা ভবন। গত ২৮ অক্টোবর কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত ‘বঙ্গবন্ধু টানেল’ উদ্বোধনের দিন চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পেরও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সভায় চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক কর্মীরা নতুনভাবে নির্মিত শহীদ মিনারের নানা অসংগতি তুলে ধরে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, আগে যে শহীদ মিনার ছিল সেটি রাস্তা থেকে দেখা যেত। এখন সেটা রাস্তা শুধু নয়, আশপাশের এলাকায় বিল্ডিংয়ের ছাদে দাঁড়ালেও দেখতে কষ্ট হয়। আবার ফুল দিতে উঠার সিঁড়িগুলো উঁচু, অনেকটা তিনতলার সমান। এত সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে বয়স্ক ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের ওঠা অসম্ভব হবে। আবার নামার স্থানও সংকুচিত। আগেরটায় একসঙ্গে অনেকে উঠতে–নামতে পারত। এখন সেটা সম্ভব হবে না। তাই জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা জানাতে আসা হাজার হাজার লোক কিভাবে যাবে–আসবে সে প্রশ্ন তুলেন সংস্কৃতি কর্মীরা। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেয়র শহীদ মিনারকে দৃশ্যমান ও জনবান্ধব করার নির্দেশনা দেন।
এদিকে নতুন শহীদ মিনারে মুক্তিযুদ্ধের গৌরব, আবেগ এবং নান্দনিকতা– কিছুই নতুন এ স্থাপনায় ফুটে ওঠেনি বলেও অভিযোগ করেন সংস্কৃতি কর্মীরা। সভায় কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, আমরা তো একটি মুক্ত স্থাপনা চেয়েছিলাম। আগের মতো একই অবয়বে একটি স্থাপনা চেয়েছিলাম। এভাবে ইট–পাথরে ঢাকা শহীদ মিনার আমরা চাইনি। এটা অবশ্যই পরিবর্তন করতে হবে।
এ বিষয়ে নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আমাদের আপত্তির বিষয়টি জানিয়েছি। বিজয় দিবসে আমাদের পক্ষে এই শহীদ মিনারে ফুল দেয়া সম্ভব হবে না, এমনও কেউ কেউ বলেছেন। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে যারা আছেন, উনারা বিষয়গুলো নোট করেছেন। ২ ডিসেম্বর আরেকটি সভা হবে। দেখা যাক, সেখানে কি সিদ্ধান্ত আসে। সভায় চট্টগ্রাম গণপূর্ত বিভাগ–১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ সংস্কৃতিকর্মীদের আপত্তির বিষয়টি তিনি ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে তুলে ধরবেন বলে জানান।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে সংস্কারের জন্য ভাঙা হয় চট্টগ্রামের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। সংস্কার কার্যক্রমের জন্য নগরের মিউনিসিপ্যাল মডেল হাইস্কুল প্রাঙ্গণে চসিকের নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে গত দুই বছর ধরে একুশে ফেব্রুয়ারিসহ জাতীয় দিবসগুলোতে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসছেন চট্টগ্রামবাসী।
গতকালকের মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক ডা. মাহফুজুর রহমান, কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন, নগর আওয়ামী লীগের সহ–সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন বাবুল, প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি আবু সুফিয়ান, ১৪ দলীয় জোট নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ইন্দু নন্দন দত্ত, মিটুল দাশ, মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার মোজাফফর আহমদ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ইদ্রিস আলম, কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী, গাজী মো. শফিউল আজিম, আবদুস সালাম মাসুম, আব্দুল হালিম দোভাষ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা এবং সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, তপন চক্রবর্তী, নাট্য ব্যক্তিত্ব আহমেদ ইকবাল হায়দার, চসিকের উপ–সচিব আশেকে রসুল চৌধুরী টিপু, সৃজনশীল প্রকাশক পরিষদের সভাপতি শাহ আলম নিপু, মুক্তিযোদ্ধা আবু তৈয়ব, সাংস্কৃতিক সংগঠক দেওয়ান মাকসুদ, অঞ্চল চৌধুরী, শারমিন হোসেন, শীলা দাস গুপ্তা, সুচরিত দাস খোকন, শেখ শওকত ইকবাল, প্রদীপ খাস্তগীর, নূর নবী মিলন, মো. আলী টিটু, দেবাশীষ সূত্র, অনন্য বড়ুয়া, অলক মাহমুদ, প্রণব চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান, চন্দন পাল, অসীম বিকাশ, প্রকল্প পরিচালক লুৎফুর রহমান, গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বদরুল আলম খানসহ সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ।