শহীদ ডা. মিলন : প্রতিবাদী চেতনার আরেক নাম

| সোমবার , ২৭ নভেম্বর, ২০২৩ at ৬:১২ পূর্বাহ্ণ

ডা. শামসুল আলম খান মিলন। স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের শহীদ। যিনি ডা. মিলন হিসাবে পরিচিত। তার মৃত্যুকে গণতন্ত্রের জন্য মহান আত্মত্যাগ হিসাবে গণ্য করা হয়। মৃত্যুকালে পেশায় চিকিৎসক শামসুল আলম খান মিলন ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষক হিসাবে নিয়োজিত ছিলেন। এছাড়া তিনি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের তৎকালীন যুগ্মমহাসচিব। ডা. মিলনের জন্ম ১৯৫৭ সালের ২১ আগস্ট ঢাকা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে। ১৯৭৩ সালে তিনি সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে শিল্পকলা বিভাগে ২য় স্থান অধিকার করে এসএসসি পাস করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি এইচএসসি পাস করেন নটরডেম কলেজের ছাত্র হিসাবে। এর পর চিকিৎসক হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ১৯৮৩ সালে তিনি এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন ও ডাক্তারী পেশায় যোগ দেন। ১৯৯০ সালের এই দিনে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে তৎকালীন সরকারের সামরিক বাহিনীর হাতে শহীদ হন ডা. শামসুল আলম খান মিলন। ঘটনাকালে দেশব্যাপী রাজপথরেলপথ অবরোধ আন্দোলন চলছিল। ২৭ নভেম্বর ১৯৯০ তারিখে বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের একটি সভায় যোগ দিতে রিকশাযোগে পিজি হাসপাতালে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় যাচ্ছিলেন ডা. মিলন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসি এলাকা অতিক্রমকালে সন্ত্রাসীরা তার ওপর গুলি চালায়। তাৎক্ষণিকভাবে তার মৃত্যু হয়। তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ চত্বরে দাফন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের দক্ষিণপূর্ব কোণের সীমানা ঘেঁষে নির্মিত ছোট্ট ত্রিকোণাকৃতি স্মৃতিন্তম্ভটি তাঁর আত্মদানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করে। সেদিন ডা. মিলনের আত্মত্যাগের ঘটনায় সমগ্র দেশ অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে উঠেছিল, আন্দোলনকারী ছাত্রজনতার ইস্পাতকঠিন প্রতিজ্ঞার মুখে স্বৈরাচারী এরশাদের আস্ফালন বাতাসে মিলিয়ে যায়। গদি রক্ষার জন্য তিনি মরণ কামড় দেন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। সংবাদপত্রের ওপর আরোপ করা হয় কঠোর বিধিনিষেধ। বলা হয় যেকোনো সংবাদ প্রকাশের আগে সরকারের নিয়োজিত কর্মকর্তাকে দেখিয়ে নিতে হবে। এর প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দেন। ফলে এরশাদ ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশে কোনো পত্রিকা বের হয়নি। তখন সরকারের মালিকানাধীন একাধিক পত্রিকা ছিল। তারপরও দলমতনির্বিশেষে সাংবাদিকেরা গণতন্ত্রের সংগ্রামে সামনের কাতারে দাঁড়িয়েছিলেন। জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাশাপাশি এরশাদ কারফিউ জারি করেন; কিন্তু আন্দোলনরত মানুষকে কারফিউগুলিকাঁদানে গ্যাসের শেল কিছুই নিবৃত্ত করতে পারেনি। জনতার বিদ্রোহ মোকাবিলার সাধ্য স্বৈরাচারীর ছিল না। ৬ ডিসেম্বর এরশাদ পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএই দিনে
পরবর্তী নিবন্ধকালারমার ছড়ায় গ্রন্থাগার চাই