শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ। ১৯৭১ সালের এ দিনে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আল–বদর, আল–শামসরা বাংলার শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বুদ্ধিজীবী হত্যার ঠিক দুই দিন পর ১৬ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বাধীন বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এবং স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। যথাযোগ্য মর্যাদায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
আজ সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি ও ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা মিরপুর শহিদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এ সময় তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধার অংশ হিসেবে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে শহিদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা এবং যুদ্ধাহত ও উপস্থিত বীর মুক্তিযোদ্ধারা একই দিনে সকাল ৭টা ২২ মিনিটে মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে এবং সকাল সাড়ে ৮টায় রায়ের বাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণের মধ্যদিয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। এ ছাড়া সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সর্বস্তরের জনগণ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক পত্রিকা আজ বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করবে। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ অন্যান্য বেসরকারি টিভি চ্যানেল দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ অনুষ্ঠান সমপ্রচার করবে। দেশের সকল জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে সকল মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপাসনালয়ে বিশেষ মোনাজাত ও প্রার্থনা করা হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাণী প্রদান করেছেন।
চট্টগ্রামে কর্মসূচি :
শহিদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে আজ বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হবে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক–সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিস্তম্ভে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এছাড়া জেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক), চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি), মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পেশাজীবী সংগঠন দিবসটি উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এ উপলক্ষে সরকারি অফিস ও গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্র এবং বাংলাদেশ বেতার–চট্টগ্রাম বিশেষ অনুষ্ঠান সমপ্রচার করবে এবং স্থানীয় দৈনিকগুলো দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিশেষ নিবন্ধ প্রকাশ করবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের গৃহীত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক সম্মেলন কক্ষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে এবং নগর ও জেলার বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনের মধ্যে বিশেষ অনুদান বিতরণ করা হবে।
এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন নগরীর পাহাড়তলী বধ্যভূমিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের শ্রদ্ধা জানাবেন বলে জানিয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের গণসংযোগ কর্মকর্তা আজিজ আহমেদ।
বিএনপির মহানগর শাখা এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন এদিন সকালে স্থানীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবে এবং নগরীর নূর আহমদ সড়কস্থ দলীয় কার্যালয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এছাড়া চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামীর মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা শাখা, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মিলাদ মাহফিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিএমইউজে) এবং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব অন্তর্বর্তী কমিটি, চট্টগ্রামের প্রতিটি উপজেলা প্রশাসন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিভাসু, শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।