ঘড়ির কাঁটা তখন সকাল দশটা। জামালখান মোড়ের এক পাশে দাঁড়িয়েছিল বাসটি। সামনের কাচে বড় অক্ষরে লেখা ‘আলোকিত মানুষ চাই’। এটি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। একটু পর দুয়েকজন শিক্ষার্থীকে উঠতে দেখা যায় বাসে। ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, শাহ ওয়ালিউল্লাহ ইনস্টিটিউটসহ পার্শ্ববর্তী বেশ কয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরই চোখে পড়ছিল তখন। বাসে উঠেই সোজা বইয়ের তাকে চোখ তাদের। কারও চোখ সাইয়েন্স ফিকশনে, কারো গল্প কারোবা কবিতায়। এটি-ওটি বেছে পছন্দসই বই বাসায়ও নিয়ে যাচ্ছিল কেউ কেউ। কেউ আবার বাসে দাঁড়িয়েই কিছুক্ষণ পড়ে নেমে পড়ছিল।
মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন এভাবে শহর ঘুরে আলো ছড়াচ্ছে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। করোনাকালেও থেমে নেই এ লাইব্রেরির বাসের চাকা। কেবল কঠোর লকডাউনের সময়কালীন কিছুদিন কার্যক্রম বন্ধ ছিল বলে জানালেন লাইব্রেরি কর্মকর্তা মাসুদ আলম। আড়াই বছর ধরে চট্টগ্রামে এই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির সঙ্গী হয়ে ঘুরছেন তিনি। তিনি জানালেন, কম হলেও ২৮ থেকে ৩০ হাজার বই রয়েছে এই লাইব্রেরিতে। পাঠ্যপুস্তক ছাড়া সব ধরনের বই এখানে পাওয়া যায়। এর মাঝে গল্প, কবিতা, ছড়া, উপন্যাস, সায়েন্স ফিকশন, রম্য, কিশোর কাহিনী, গোয়েন্দা কাহিনী অন্যতম। শহরের ৪০টি স্পটে এই লাইব্রেরি থামে। যদিও রুট ভিত্তিক রুটিন মেনে চলে এই বাস।
যেভাবে নেয়া যায় বই : ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি থেকে বই পেতে হলে আগে এই লাইব্রেরির সদস্য হতে হয়। একশ টাকায় সাধারণ সদস্য আর বিশেষ সদস্য হতে দুইশ টাকা ফি পরিশোধ করতে হয়। ফি পরিশোধ করে একটি ফরম পূরণের মাধ্যমে বাসেই সদস্য হওয়ার সুযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে যে কেউ এখানকার সদস্য হতে পারেন। সদস্য হলেও লাইব্রেরি থেকে বই বাসায় নেয়ার সুযোগ পেতে মাসিক দশ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। একজন সদস্য সাধারণত একটি বই নিতে পারেন। তবে একাধিক সদস্য হলে বইও একাধিক নেয়ার সুযোগ রয়েছে। এই লাইব্রেরির কম হলেও ২১ হাজার সদস্য রয়েছে বলে জানালেন লাইব্রেরি কর্মকর্তা মাসুদ আলম। যা সারা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। এসব সদস্যরা প্রতি মাসে এই লাইব্রেরি থেকে বই নেন। পড়ে পুনরায় ফেরত দেন। গত মাসে তিন হাজার বই লেনদেন হয়েছে জানিয়ে মাসুদ আলম বলেন, এখন বই লেনদেনের সংখ্যাটা বাড়ছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলায় শিক্ষার্থী পাঠকরা পুনরায় লাইব্রেরিতে ভিড় করছে। এতে করে পাঠকের সংখ্যা বাড়ছে। এটি ছাড়া অপর একটি পিকআপ (মোবাইল) লাইব্রেরিও চট্টগ্রামে চলমান রয়েছে।
প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা শহর ঘুরে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি জ্ঞান বিতরণ করছে জানিয়ে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের চট্টগ্রাম মহানগর সংগঠক ও চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব অধ্যাপক আব্দুল আলীম আজাদীকে বলেন, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে আলোকিত মানুষ গড়া। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রেরই একটি প্রকল্প। এটি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি সাধারণ পাঠকদেরও বইমুখী করায় ভূমিকা রাখছে।