চট্টগ্রাম নগরীর প্রবেশদ্বার কর্ণফুলীর মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্টে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ৪৩ দিন পার হলেও এখনো অবধি চেকপোস্টে পুলিশের দেখা মিলছে না। সচল হয়নি তল্লাশি। ভাটা পড়েছে মাদক উদ্ধারও।
বলা যায় পুরো অরক্ষিত চেকপোস্ট। যে সকল মাদক ব্যবসায়ী বা অপরাধ চক্রের সদস্যরা এই পথ অতিক্রম করতে ভীত সন্ত্রস্ত থাকতো, তারাও যেন অবাধে চলাচল করার সাহস পেয়ে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় নগরীর নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত হচ্ছে প্রশ্ন নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সংশ্লিষ্টদের। তাঁরা বলেছেন, এখনো পুলিশ ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তাই যথেষ্ট নিরাপত্তা নেই। রেগুলার চেকপোস্টে যথাযথভাবেই দায়িত্ব পালন করছে না কেউ। তা ছাড়া চেকপোস্টের অবস্থা করুন। ভেঙে চুরে তছনছ। সিসিটিভি ক্যামেরাও নেই, কোথাও কিছু ঘটলে দেখাও যাবে না।
কর্ণফুলী উপজেলার লোকজন তথা চট্টগ্রামের সচেতন মহলের দাবি, শহরের প্রবেশ মুখ মইজ্জ্যারটেকে দ্রুত চেকপোস্ট সচল করা হোক। গত ৪৩ দিন যাবত চেকপোস্ট না থাকায় ও ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায়, কি পরিমাণ যে জ্যাম আর মাদক প্রবেশ করছে বলে প্রশ্ন উঠেছে তা সীমাহীন।
সুতরাং মাদক ও অপরাধ চক্রের লাগাম নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য চেকপোস্ট খুবই দরকার।
কিন্তু ৫ আগস্টের পর হঠাৎ করেই বন্ধ রয়েছে চেকপোস্টের নিরাপত্তা কার্যক্রম। অবশ্য সিএমপির এই চেকপোস্টের অবস্থা ৫ আগস্টের পর এতটাই করুণ যে, ওখানে বসে এখন ডিউটি করার মতো অবস্থা বা পরিবেশ কোনটাই নেই। তবে সচলেও উদ্যোগ নজরে পড়ার মতো নেই।
কেননা, থানা পুলিশ বক্স ও পাশের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের কোন অংশ বিশেষ আর অবশিষ্ট রাখেননি দুষ্কৃতিকারীরা। গত ৪৩ দিন আগে শত শত জনতা তা নিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট অচল থাকায় সুযোগ নিচ্ছে বিভিন্ন চোরাকারবারি অপরাধীরা। দাবি, চেকপোস্ট ‘শিথিল’ থাকায় শহরে অবাধে ঢুকছে মাদক ও অস্ত্র। কারবারিরা শহরের প্রবেশ মুখ সহজেই ডিঙিয়ে সীমান্ত জেলার ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্যের চালান সারাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে তা অনেকটা নিশ্চিত বলা গেলেও বাস্তবতায় পুলিশ অনেকটা অসহায় আর বিমর্ষ অবস্থায় রয়েছে। তাঁদের মুভমেন্ট হচ্ছে কম।
এদিকে নানা অপরাধের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, এই মইজ্জ্যারটেক পুলিশ চেকপোস্টটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চেকার পয়েন্ট। চট্টগ্রাম টু কক্সবাজারের বিভিন্ন পথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট ফাঁকি দিয়ে কারবারিরা মাদক, স্বর্ণ ও নানা অবৈধ জিনিসপত্র সহজে পার করতে পারলেও। অনেক অপরাধীরা সহজে মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট পার হতে পারতেন না। ধরা পড়তেন স্বল্প সময়ে। কেজি কেজি স্বর্ণ আর এক লাখ দুই লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধারও সম্ভব হয়েছে এই মইজ্জ্যারটেক চেকপোস্ট থেকে।
অপরাধ বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত ২০২০ সালের ৬ আগস্ট টেকনাফে সাবেক সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যা মামলায় ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশ গ্রেপ্তারের পর সারাদেশে পুলিশের স্থায়ী ও অস্থায়ী চেকপোস্টগুলোর তল্লাশি কার্যক্রম ছিলো অনেকটা শূন্য। কিন্তু এর চেয়ে মারাত্মক পরিস্থিতিতে পড়েছে বর্তমান পুলিশ। যা আগের অবস্থায় ফিরতে পুলিশকে অনেক সংগ্রাম ও চড়াই উতরাই পার করতে হবে। তাঁতে কোন সন্দেহ নেই।
জানা যায়, গত ২৭ আগস্ট মইজ্জ্যারটেক পুলিশ বক্সে ভাঙচুর ও হামলার ঘটনায় অজ্ঞাত ৫০০-৬০০ জন কে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট বিগত সরকার পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালানোর খবরে বে-আইনি জনতা মিছিল সহকারে কর্ণফুলী থানাধীন এই পুলিশ চেকপোস্টে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন।
ওইদিন আতঙ্ক সৃষ্টি করে পুলিশ বক্স লুটপাটের মাধ্যমে সরকারি মালামাল ও যানবাহন চুরি করা হয়েছে। এতে ৪১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার লুণ্ঠন (চোরাই মূল্য) ও ভাঙচুর করে ক্ষতিসাধন করেছে আনুমানিক আরো ৫ লক্ষ টাকার।
এ প্রসঙ্গে আলোচিত ক্রাইম রিপোর্টার শাহীন মাহমুদ রাসেল বলেন, ‘কেউ কেউ পুলিশের সমালোচনা করেন এটা ঠিক। কিন্তু একটা বিষয়ে সবাই একমত থাকেন যে, পুলিশকে যতই অকার্যকর বলে মনে করা হোক না কেন, পুলিশকে বিলুপ্ত করা তো দূরের কথা শহরের প্রবেশ মুখ থেকে পুলিশ চেকপোস্ট উঠিয়ে নেওয়ার জন্য কেউ মতামত ব্যক্ত করবে না। বরং যে পুলিশের অকার্যকারিতা নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন সেই পুলিশকে অধিক সংখ্যায় ও অধিক সংখ্যক স্থানে মোতায়েনের সুপারিশ করেন। নিজেদের কাছাকাছি পুলিশ থাকাটা অন্তরে অন্তরে পছন্দ করে জনগণ।’
এ বিষয়ে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনির হোসেন এর কাছে জানতে চাওয়া হয় পুলিশ চেকপোস্ট কবে চালু হবে, কিন্তু কোন সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে পরে জানাবেন।’
এই পুলিশ বক্স কবে চালু হবে এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিএমপি বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘নতুন করে পুলিশ চেকপোস্ট বা বক্স দ্রুত সংস্কার করা হবে। পুলিশ সব সময় জনগণের নিরাপত্তায় বিশ্বাসী।’