চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিল। এই বিলে এবার ১০ হাজার কৃষক আমন আবাদ করেছেন। গত আড়াই মাস আগে বপণ করা চারাগুলো এখন পরিপুষ্ট। এতে বিলজুড়ে এখন সবুজ আর সবুজ। যেনো মাঠজুড়ে সবুজ গালিচা বিছিয়ে দেয়া হয়েছে। মৃদু হাওয়ায় সবুজ চারার নৃত্য গুমাই বিলের কৃষকের বুকে ভাল ফলনের আশা জাগিয়ে তুলেছে।
জানা যায়, উপজেলার চারটি ইউনিয়ন ও পৌরসভার একাংশজুড়ে তিন হাজার পাঁচশ হেক্টরের বিশাল এ মাঠের অবস্থান। বিস্তৃত উর্বর দুই ফসলি এই জমি থেকে প্রচুর পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদিত হয়। প্রচলিত আছে–দেশের আড়াই দিনের খাদ্য উৎপাদন হয় এই বিলে। দেশের বৃহত্তম চলন বিলের পর অন্যতম বৃহত্তম চট্টগ্রামের এই শস্য ভান্ডারের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর থেকে উৎপাদিত ধানের বাম্পার ফলন গেল মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এভাবে খাদ্য উৎপাদন করে প্রতি বছর জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে এই বিলটি। ১৯৪৫ সালে রাঙ্গুনিয়ার কৃতী পুরুষ মরহুম আব্দুল বারী তালুকদার অক্লান্ত পরিশ্রম করে গুমাইবিল সংস্কার করে প্রথমবারের মতো আধুনিক চাষাবাদ শুরু করেন। ১৯৮০–৮১ সাল থেকে গুমাইবিলের জমি শুষ্ক মৌসুমে সেচের আওতায় আনা হয়।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আমন মৌসুমে এবার ১৫ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য্য করা হয়েছে। উপজেলার দুই হাজার কৃষকের মাঝে প্রণোদনা হিসেবে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছিলো। এরমধ্যে গুমাইবিলের ৩ হাজার ৪৩৫ হেক্টর জমিতে এবার আমন রোপণ করা হয়েছে। এবার বিলে ব্রীধান–৪৯, ৫১, ৫২, ৭৫, ১০৩, সাদা পাইজামসহ বিভিন্ন উন্নত জাতের আমন আবাদ করা হয়েছে। গেল মৌসুমে হেক্টর প্রতি ৫.৭ মেট্রিক টন ধান এবং চাল উৎপাদন হয়েছিল ৩.৭ মেট্রিক টন। বাজারে ধান ও চালের ভাল দাম পাওয়াতে এবার আমন মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও বেশি আবাদ হয়েছে বলে জানা যায়।
গুমাইবিলের কৃষক ফরিদুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ১০০ কানি (সাড়ে ১৬ হেক্টর) জমিতে আমন আবাদ করেছেন। ধান আবাদ থেকে ঘরে তোলা পর্যন্ত তার কানি প্রতি ২০ হাজার টাকা খরচ হবে। এবার শ্রমিকের মজুরী ও ভাত খাওয়ানোর পর ৮০০–১০০০ টাকা করে দিতে হয়েছে। ভালো ফলন হলে লাভের মুখ দেখবেন বলে তিনি জানান।
সিরাজুল ইসলাম নামে অপর একজন কৃষক জানান, এবার ৪৫ কানি জমিতে তিনি আমন আবাদ করেছেন। গত বোরো মৌসুমে ভালো ফলন পেয়েছেন। বাজারে প্রথম দিকে ধানের আড়ি ৩০০ টাকা হারে গেলেও মাঝখানে ২৫০ টাকা হয়ে গিয়েছিলো। তাই ধানের দামের ব্যাপারে মনিটরিং করা গেলে কৃষকরা লাভবান হবেন এবং আবাদেও উৎসাহিত হবেন।
গুমাইবিলের আরেক কৃষক মো. ওবাইদুল্লাহ বলেন, এবার ৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেছি। হেক্টর প্রতি ইতোমধ্যে ৫৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন পাওয়া পর্যন্ত হেক্টর প্রতি গড়ে ৯০ হাজার টাকা করে খরচ হতে পারে। মাঠে চারাগুলো এখন পরিপুষ্ট। তাই সবুজে সবুজে ভরে ওঠেছে। কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত না করলে এ বছর ভালো ফলন পাব।
গুমাইবিলে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, গত জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আমন আবাদ শুরু হয়েছিল। মাঝখানে বন্যায় প্লাবিত হলেও বন্যার পানি সহনশীল জাতের আবাদ হওয়ায় তাতে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এখন পর্যন্ত আবাদ ভালোই আছে। আশা করি এবারও ধানে বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, গুমাইবিলের আমন আবাদ খুব ভালো হয়েছে। কৃষি অফিসের মাঠ পর্যায়ে তদারকি, সময়মত কীটনাশক প্রয়োগ ও কীট দমনে প্রাকৃতিক পদ্ধতির ব্যবহার, কৃষকদের অক্লান্ত পরিশ্রম সর্বোপরি আবহাওয়া ভালো থাকলে এবার আমনের ফলন প্রত্যাশার চেয়েও ভালো হবে। কৃষকদের প্রতিনিয়ত পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।