শরৎকুমারীর চৌধুরাণী(১৮৬১–১৯২০)। ছিলেন ঠাকুরবাড়ির বিশেষ ঘনিষ্ঠ ও ভারতীয় সম্পাদকীয় গোষ্ঠীর অন্তর্গত বাঙালি লেখিকা। শরৎকুমারীর জন্ম ১৮৬১ সালের ১৫ জুলাই বৃটিশ ভারতের বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার ব্যারাকপুরের চাণকে তার মাতুলালয়ে। পিতা শশীভূষণ বসুর কর্মস্থল ছিল লাহোর। সেখানে তিন বৎসর বয়সে স্থানীয় বঙ্গবিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ছয় বৎসর বয়সে লাহোর ইউরোপিয়ান স্কুলে শিক্ষাপ্রাপ্ত হন। হাওড়া আন্দুলের বিখ্যাত চৌধুরী পরিবারের অ্যাটর্নি অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীর সাথে ১৮৭১ সালে ১২ মার্চ তার বিবাহ হয়। স্বামী–স্ত্রী উভয়েরই ঠাকুর পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে ‘লাহোরিণী’ বলে উল্লেখ করতেন। রবীন্দ্রনাথ তাঁকে কোনো লেখার প্লট দিলে চার–পাঁচ দিনের ভেতর উৎকৃষ্ঠ এক লেখা উপহারের মধ্যদিয়ে তিনি তার প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতেন। ভারতীর সম্পাদকীয় গোষ্ঠীতে উভয়েরই উৎসাহী সভ্য এবং মাতৃভাষার পরম অনুরাগী ছিলেন। ‘ভারতী‘, ‘ভারতী ও বালক‘, ‘সাধনা‘, ‘ভান্ডার‘, ‘বঙ্গদর্শন‘, ‘ধ্রুব‘, ‘সবুজপত্র‘, ‘মানসী ও মর্মবাণী‘, ‘বিশ্বভারতী‘ প্রভৃতি পত্রিকায় তার সাক্ষরহীন বহু রচনা প্রকাশিত হয়েছে। একমাত্র উপন্যাস শুভবিবাহ ছাড়া কোনো রচনাই তার জীবদ্দশায় পুস্তকাকারে প্রকাশিত হয় নি। ‘শুভবিবাহ‘ প্রকাশিত হয়েছিল ১৯০৬ সালে। বাস্তব চিত্রণের জন্য উপন্যাসটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক বিশেষ প্রশংসিত হয়েছিল। ‘বঙ্গদর্শন‘ পত্রিকায় কবিগুরু বিস্তৃত সমালোচনা করে বলেন -‘রোমান্টিক উপন্যাস বাংলা সাহিত্যে আছে, কিন্তু বাস্তব চিত্রের অত্যন্ত অভাব, এজন্য এই গ্রন্থকে আমরা সাহিত্যের একটি বিশেষ লাভ বলিয়া গণ্য করিলাম’। পরবর্তীতে শ্রী ব্রজেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শ্রী সজনীকান্ত দাসের যৌথ সম্পাদনায় শরৎকুমারীর চৌধুরাণী রচনাবলী প্রকাশিত হয়। এ সম্পাদিত গ্রন্থ থেকে আমরা তাঁর রচনা সম্পর্কে জানতে পারি। শরৎকুমারীর চৌধুরাণী ১৯২০ সালের ১১ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।