‘শরীর নড়ে না ঠিকই, কিন্তু হৃদয় তো থেমে নাই’

জুলুসে একজন রউফ

নেজাম উদ্দিন আবির | সোমবার , ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ at ৮:৩১ পূর্বাহ্ণ

চারপাশে মাইকে গজল বাজছে। হাতে হাতে সবুজ পতাকা। ব্যানারে ছেয়ে আছে সড়ক। আর আছে মানুষ; মানুষের ঢল। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (.) উপলক্ষে নগরে শনিবার জশনে জুলুসের চিত্র ছিল এমন। জনস্রোতের মাঝে একটি দৃশ্য হৃদয় ছুঁয়ে গেল। রাস্তার পাশ ঘেঁষে ছোট একটি চাকাযুক্ত স্টিলের পাটাতনে বুকের উপর ভর দিয়ে শুয়ে এবং হাত দিয়ে ঠেলে ঠেলে এগিয়ে যাচ্ছেন এক বৃদ্ধ। নাম মোহাম্মদ রউফ। বয়স সত্তরের কোটায়। কোমর থেকে নিচের অংশ অচল। পেশা ভিক্ষাবৃত্তি। তার ছোট গাড়িটিতে ছিল দুটি সবুজ পতাকা, তাতে লেখা ‘ণধ জধংঁষধষষধয (.)’। মাথার উপর পাতলা ত্রিপল, সামনে একটি প্লাস্টিকের বালতি। ওটা সাধারণত ভিক্ষার জন্য ব্যবহৃত হয়। কিন্তু আজ তার উদ্দেশ্য ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। শনিবার ছিল ১২ রবিউল আউয়াল। মহানবী হযরত মুহাম্মদের (.) জন্মদিন। রউফ এসেছিলেন ভিক্ষা নিতে নয়, নবীজির (.) স্মরণে আয়োজিত জুলুসে অংশ দিতে। ভালোবাসা জানাতে। এক যুবক তাকে জিজ্ঞেস করলেন, চাচা, আপনার তো আসার দরকার ছিল না। শরীর খারাপ। রউফ হেসে বললেন, নবীজির মিলাদ মানে আমার জীবনের সবচেয়ে পবিত্র দিন। শরীর নড়ে না ঠিকই, কিন্তু হৃদয় তো থেমে নাই। চারপাশের ব্যস্ত জনতার মাঝে কোলাহলে হারিয়ে যাওয়ার বদলে রউফের স্টিলের গাড়ির চাকার টুং টাং শব্দ যেন এক নীরব বার্তা ছড়িয়ে দিলভালোবাসা কোনো বাহ্যিক ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে না, তা আসে হৃদয়ের গভীর থেকে। প্রচণ্ড গরমে গায়ে থাকা পাতলা কাপড় ভিজে যাচ্ছিল। কিন্তু চোখেমুখে ছিল প্রশান্তি। কারো দয়া বা সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করেননি। নিজের মতো করেই ছিলেন তিনি। জুলুস শেষ। তিনি চলেছেন নিজ গন্তব্যে। তিনি কোথায় থাকেন, কী খান, কে তার দেখভাল করে, এসব তথ্য কারো জানার কথা নয়। যারা তাকে দেখেছেন, তাদের মনে প্রশ্ন জেগেছে, ভালোবাসা শুধু শারীরিক সক্ষমতার ওপর নির্ভর করে না।

গভীর ইচ্ছা থাকলে যেকোনো বাধা জয় করা যায়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজুলুসে অসুস্থ ও পদদলিত হয়ে দুজনের মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধ৭৮৬