লোহাগাড়ায় নুরুল ইসলাম (৫৫) নামে এক টেক্সি চালকের গুলিবিদ্ধ মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কুমিরাঘোনা বায়তুশ শরফ সড়কের আদর্শ পাড়া এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। নিহত নুরুল ইসলাম একই ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের লালীর বাপের পাড়া এলাকার মৃত আলী আহমদের পুত্র। তার ছেলে শফিকুল ইসলাম বড়হাতিয়া ইউনিয়ন ছাত্রশিবিরের সভাপতি। পুলিশ বলছে, তার দেহে ২৬টি ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে।
জানা যায়, ভোরে স্থানীয় লোকজন ফজরের নামাজ আদায় করার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে ঘটনাস্থলে নুরুল ইসলামকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। এ সময় তার শরীরের অর্ধেক অংশ টেক্সির ভেতর, বাকি অংশ সড়কের উপর পড়েছিল। সাথে সাথে পরিবারকে জানানো হয়। পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
গতকাল দুপুরে ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাস্থলের কাছে আখতারাবাদ কালু ব্রিক ম্যানুফ্যাকচার্স ইটভাটার অফিসে হানা দেয় অস্ত্রধারী স্থানীয় একদল সন্ত্রাসী। এ সময় অফিসে থাকা ইটভাটার কর্মচারী তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। পরে সন্ত্রাসীরা অফিসের আসবাবপত্র ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। রাত সাড়ে ৩টার দিকে টেক্সিচালক নুরুল ইসলাম কুমিরাঘোনা বায়তুশ শরফ সড়ক হয়ে যাত্রী আনার জন্য যাচ্ছিলেন। ইটভাটা এলাকায় পৌঁছলে সড়কের উপর একদল অস্ত্রধারী দেখতে পান। ভয়ে তিনি তাৎক্ষণিক টেক্সি ঘুরিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা টেক্সির পেছনে গুলি করে। ফলে ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ২০ গজ দূরে গিয়ে টেক্সির ভেতর তার মৃত্যু হয়। ভোর ৪টার দিকে ঘটনাস্থলের আশপাশে বসতঘরে থাকা লোকজন গুলির শব্দ শুনেছেন। তবে কেউ ঘর থেকে বের হননি। এ ঘটনার প্রায় ১০ দিন আগে ইটভাটার মালিকপক্ষের মঞ্জুর আলম কোম্পানি নামে একজনকে অপহরণ করেছিল সন্ত্রাসী বাহিনী। পরে মুক্তিপণে তাকে মুক্তি দেয়া হয়।
নিহতের ছেলে শফিকুল ইসলাম জানান, তার পিতা রাতের দিকে ভাড়ায় টেক্সি চালান। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে তিনি টেক্সি নিয়ে বাড়ি থেকে বের হন। ভোরে মোবাইল ফোনে জানতে পারেন তার পিতা সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন। দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। তার পরনে শীতের কাপড় থাকায় প্রথমে গুলির চিহ্ন দেখতে পাইনি। পরে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার পিতাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ সময় তার পিঠে একাধিক গুলির চিহ্ন দেখতে পেয়েছি।
আখতারাবাদ কালু ব্রিক ম্যানুফ্যাকচার্স ইটভাটার মালিকপক্ষের নাছির উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে ওই ইটভাটার মালিকপক্ষের একজনকে অপহরণ করেছিল স্থানীয় সন্ত্রাসী তৌহিদ বাহিনী। পরে মুক্তিপণ দিয়ে তাকে মুক্ত করা হয়। এরপর ইটভাটা থেকে পুনরায় চাঁদা দাবি করে ওই সন্ত্রাসী বাহিনী। দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় গত মঙ্গলবার দুপুরে সন্ত্রাসীরা এসে ইটভাটায় কর্মরত শ্রমিকদের তাড়িয়ে দেয়। রাতে এসে ইটভাটার অফিসের আসবাবপত্র ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় তারা জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে তারা আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হবেন বলে জানান।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. শারমিন আরজু বলেন, নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনরা। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তবে হাসপাতালে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে।
লোহাগাড়া থানার এসআই মাঈন উদ্দিন বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে মরদেহের সুরতহাল লিপিবদ্ধ করে। নিহতের শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২৬টি ছররা গুলির চিহ্ন রয়েছে। এছাড়া টেক্সিতেও রয়েছে গুলির চিহ্ন। সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী ও লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল জলিল। এএসপি মো. আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আশপাশের লোকজনের সাথে কথা বলেছি। ইটভাটার অফিস ভাঙচুরের সাথে খুনের ঘটনার সম্পৃক্ততা এবং বিভিন্ন দিক নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। আশা করছি দ্রুত তদন্ত পূর্বক ঘটনার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনতে সক্ষম হব।












