‘শিশিরে শিশিরে শরৎ আকাশে, ভোরের আগমনী’– গানের এই কলির মধ্য দিয়ে বর্ষা পেরিয়ে শরৎ এর আগমন। শরৎ এর আগমনে প্রকৃতি এক অপরূপ সাজে সজ্জিত হয়। ভোরে হালকা কুয়াশা, ভেজা ঘাস, কিছুক্ষণ পরে সূর্যের নির্মল আলোয় শিশির ভেজা ঘাসের শুকনো রূপ, বৃক্ষরাজির অপরূপ সৌন্দর্য প্রকৃতিকে সাজিয়ে তুলে অন্যরকম সাজে।
বার মাসের ষড়ঋতুর এই বাংলাদেশে ভাদ্র–আশ্বিন মাস জুড়ে প্রভাতের সোনালী রাঙাবে শারদ। শরতের দিনগুলি মায়াবী ও রঙিন। প্রকৃতি কখনো হয় প্রাণোজ্জ্বল, কখনো বা প্রদীপ্ত, কখনো অভিমানী,কখনো বা শান্তশিষ্ট। শরতের প্রকৃতির বিচিত্র রুপে মুগ্ধ হয়েছেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গ্রামীণ পরিবেশে শরৎ আসে সাড়ম্বরে। আর নগরজীবনে শরৎ অতিবাহিত হয় ব্যস্ততার মাঝে। শরতের আভা একান্তভাবে অনুভবের সময় নগরজীবনে পরিলক্ষিত হয় না। কাশবনের উপরে সূর্যের তির্যক আলো ও প্রকৃতির বুকে গাছগাছালির হিমেল বাতাস বয়ে যায় প্রতিনিয়ত। পড়ন্ত বিকালে মেঘের আভায় দোল খায় কাশবন। মাঠে চিরসবুজ ধানক্ষেত, জুঁই–শেফালী–শিউলি ফুলের সৌন্দর্য, জলে ফোঁটা পদ্ম, শাপলা ও শ্যাওলার সৌন্দর্য দেখে মনে হয় দেশমাতা অপার সৌন্দর্য নিয়ে প্রকৃতির বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
শরতে হিন্দুধর্মের অন্যতম বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। পূজার আমেজে প্রকৃতি হয়ে উঠে আরও সুন্দর ও বৈচিত্র্যময়। শরতের মেঘহীন নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা প্রকৃতিপ্রেমীদের মন কেড়ে নেয়। শরতের শান্ত স্নিগ্ধ কোমল রূপ দেখে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রকৃতির প্রেমে পড়েছিলেন। প্রকৃতির মতোই সুন্দর হয়ে উঠুক প্রতিটি মানুষের হৃদয়, প্রকৃতির মতোই নির্মল হোক প্রতিটি মানুষের জীবন।