চট্টগ্রাম কাস্টমসের অকশন শেডের প্রাঙ্গণে দীর্ঘ সময় পড়ে থাকা প্রায় শত কোটি টাকার ২ হাজার ৭৮৩ টন ড্রেজিং পাইপ ও অন্যান্য সরঞ্জাম দুই লটে বিশেষ নিলামে তুলেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। তবে এসব পণ্য বিক্রি করার জন্য কাস্টমস কোনো ধরনের সংরক্ষিত মূল্য নির্ধারণ করেনি। গত ২০ নভেম্বর থেকে বিডারদের (নিলামে অংশগ্রহণকারী) কাছ থেকে অনলাইনে প্রস্তাবিত দরপত্র নেয়া শুরু হয়েছে। দরপত্র নেয়া হবে আগামী ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৪টা পর্যন্ত। আগ্রহী বিডাররা পণ্য পরিদর্শন করতে পারবেন আগামী ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, গত ২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান চীন থেকে ২০ ফুট এবং ৪০ ফুট সাইজের কন্টেনারে ১ হাজার ৯০০টি ব্যবহৃত ড্রেজিং পাইপ আমদানি করে। ব্যবহৃত ড্রেজিং পাইপ আমদানি করার কারণে খালাস স্থগিত করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব পণ্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিলামে তোলার জন্য এনওসি (অনাপত্তিপত্র) না মেলায় এতদিন নিলামে তোলা সম্ভব হয়নি। তবে অবশেষে ১০ নভেম্বর এনওসি পাওয়ায় দীর্ঘদিনের বাধা কেটে যায়। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের উপ–সচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অনাপত্তিপত্রে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব আহরণের বিষয়টি মাথায় রেখে দুই লট পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দেয়া হলো। তবে শর্তের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে–বিধি মোতাবেক শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে, আমদানি মোতাবেক শুল্ককর পরিশোধ করতে হবে। আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য বিধি বিধান প্রতিপালন করতে হবে। নিলামকৃত পণ্যের ব্যবহার
উপযোগিতা থাকতে হবে। এ অনুমতি শুধুমাত্র উল্লেখিত আমদানিকৃত পণ্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, অন্য কোনো পণ্য নিলামে বিক্রির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ভবিষ্যতে এ অনুমতিকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের কর্মকর্তারা বলছেন, চীন থেকে আমদানিকৃত ২ হাজার ৭০০ টন ওজনের পাইপের আমদানিমূল্য ছিল ৮০ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া ৮৩টন ওজনের অন্যান্য পণ্যের দাম ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয় চালানে। গত ২০২০ সালেই নিলামে বিক্রি করতে এসব পাইপ চট্টগ্রাম কাস্টমসের কাছে হস্তান্তর করেছিল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টমস নিলাম ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াকুব চৌধুরী দৈনিক আজাদীকে বলেন, বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ায় বিশেষ নিলামে প্রায় শত কোটি টাকা মূল্যের দুই লট ড্রেজিং পাইপ সরঞ্জাম নিলামে তুলেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এসব পাইপ এতদিন চট্টগ্রাম কাস্টমসের জন্য একপ্রকার বোঝা ছিল। অবশেষে নিলামে তোলার কারণে সরকার এসব পাইপ বিক্রি করে রাজস্ব আয় করতে পারবে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের উপ–কমিশনার এইচ এম কবির দৈনিক আজাদীকে বলেন, বন্দরের কন্টেনারের জট নিরসনে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিয়মিত বিরতিতে নিলাম কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে এবার বিশেষ নিলামে দুই লট ড্রেজিং পাইপ ও সরঞ্জাম তোলা হয়েছে। আগ্রহী বিডারদের কাছে অনলাইনে প্রস্তাবিত দর মূল্য নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। সর্বমোট ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ কোনো চার্জ পায় না।












