x
প্রায় সাড়ে নয় বছর পর আগামী ২৬ জুলাই অনুষ্ঠিত হচ্ছে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল। কিন্তু কাউন্সিলরের তালিকা নিয়ে এরই মধ্যে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক। দলের ত্যাগী নেতাকর্মীদের অভিযোগ, সম্মেলন ঘিরে তৈরি করা কাউন্সিলর তালিকায় বিএনপি-জামায়াতের চিহ্নিত নেতাসহ বিতর্কিত ১৩০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যে কারণে ইতোমধ্যে ১৪০ জন নেতা কাউন্সিলর তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য জেলা আওয়ামী লীগ বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন।
অভিযোগ উঠেছে, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম টাকার বিনিময়ে গোপনে এই কাউন্সিলর তালিকা চূড়ান্ত করেন। বহিরাগত অনেকের নাম থাকলেও তালিকায় দলের অনেক ত্যাগী ও প্রবীণ নেতার নাম নেই। কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর দেওয়া এ আবেদনে প্রায় ১৩০ জন বিতর্কিত কাউন্সিলরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে রয়েছে পেকুয়ার আলোচিত যুদ্ধাপরাধী মৃত্যুুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসিম আলীর দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমের নামও। তিনি পেকুয়া উপজেলা বিএনপির আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ২০১৬ সালে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মগনামা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন।
বিতর্কিত এ তালিকায় রয়েছে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সালাহ উদ্দিনের চাচা বিএনপি নেতা আসাদ উল্লাহ, বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান চৌধুরী, স্বাধীনতা বিরোধী আকতারুজ্জামান চৌধুরী, বিএনপি নেতা মো. আলম মাঝি, আজিজ উদ্দিন চৌধুরী, মেহের আলী, শাহাদাত, মো. শাহজাহান, জয়নাল আলী, আজিজুল হক, মহিউদ্দিন, জামায়াত নেতা করিম উল্লাহসহ ১৩০ জনের নাম।
আবেদনে বলা হয়, আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন, বিএনপি-জামায়াত রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে কাউন্সিলর হিসাবে নাম থাকায় বিব্রত হন দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতারা। যার কারণে কাউন্সিলর থেকে তাদের নাম প্রত্যাহার করার অনুরোধ জানান।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও পেকুয়া উপজেলার সাবেক আহ্বায়ক আবু হেনা মোস্তফা কামাল পুরো প্রক্রিয়ার জন্য পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিমকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেছেন, সাংগঠনিক টিমের প্রধান হিসেবে পেকুয়ার ৬টি ইউনিয়নে গোপনে কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করে গঠনতন্ত্র অমান্য করে সম্মেলন করেছেন রেজাউল। বিষয়টি নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও কোনো কার্যকারিতা দেখা যাচ্ছে না। ফলে বির্তকিতদের সঙ্গে এই ১৪০ জন কাউন্সিলর নাম রাখতে রাজী নন।
তিনি জানান, বিষয়টি জেলা আওয়ামী লীগকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও অবহিত করা হচ্ছে। এই সাংগঠনিক টিম বাতিল করে বিতর্কমুক্ত কাউন্সিলর তালিকা তৈরি করে সম্মেলন আয়োজনের দাবি জানান তিনি।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জিএম আবুল কাসেম বলেন, বিএনপি-জামায়াত নেতার পাশাপাশি অনেকের স্ত্রী ও কাজের লোকদেরও কাউন্সিলর করা হয়েছে। এই তালিকা বাতিল করে স্বচ্ছ তালিকা করা দরকার।
পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম শহীদ উল্লাহ বিএনপির সঙ্গে জড়িত কয়েকজন ব্যক্তি কাউন্সিলর তালিকায় এসেছে বলে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম গত সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তারপরও তাকে নিয়ে যেহেতু বিতর্ক আছে সেহেতু তিনিসহ কয়েকজনকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
অভিযোগ অস্বীকার করে পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের প্রধান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল করিম বলেন, কাউন্সিলর তালিকা নিয়ে কেউ অভিযোগ করলে তা জেলা আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা করে মীমাংসা করার সুযোগ রয়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কাউন্সিলর তালিকায় কোনো অনিয়ম হয়ে থাকলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।