ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান খোলা আইনবহির্ভূত জানিয়ে সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান আইনসিদ্ধভাবে পরিচালনা না করলে ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সবার মনে রাখা উচিত, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালানো সমীচীন নয়। গতকাল সোমবার নগর ভবনের টাইগারপাস অস্থায়ী কার্যালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) রাজস্ব বিভাগের সভায় তিনি এসব কথা বলেন। সভায় রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, নগরে ছোট–বড় মিলিয়ে ১০ লক্ষাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বর্তমানে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দেড় লক্ষেরও কম। ফলে বিপুল পরিমাণ সম্ভাব্য রাজস্ব আদায় হচ্ছে না। ব্যবসায়ীদের মধ্যে সচেতনতার অভাব, কর ফাঁকির প্রবণতা এবং রাজস্ব বিভাগের লজিস্টিক ও এঙপোজার ঘাটতিকে এই পরিস্থিতির প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় সভায়।
ডা. শাহাদাত হোসেন রাজস্ব শাখার কর্মকর্তাদের নগরের বাণিজ্যিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোর শতভাগ ট্রেড লাইসেন্স নিশ্চিত করার নির্দেশনা দিয়ে বলেন, আগামী জুলাই মাসের মধ্যে ট্রেড লাইসেন্সের সংখ্যা দ্বিগুণ করতে হবে। এজন্য কর্পোরেশনের নিজস্ব মার্কেটসহ সকল মার্কেটে সরেজমিন পরিদর্শন করতে হবে। আমাকে প্রতিদিনের রাজস্ব আদায়ের সারসংক্ষেপ রিপোর্ট জমা দিবেন। দায়িত্বে অবহেলা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মেয়র বলেন, শহরের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে রাজস্ব আদায় জোরদার করতে হবে। চট্টগ্রাম বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং বাণিজ্যিক রাজধানী হলেও ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য খাতে রাজস্ব আদায় এখনো সম্ভাবনার তুলনায় কম। এই অবস্থার পরিবর্তনে রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তা–কর্মচারীদের আরও সক্রিয়, দায়িত্বশীল ও মাঠমুখী হতে হবে।
সভায় বিভিন্ন কোচিং সেন্টার–এর ট্রেড লাইসেন্স না করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, কোচিং সেন্টারসহ সব বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। কিন্তু অভিযোগ আছে কোচিংগুলো ট্রেড লাইসেন্স নেয় না এবং অনুমতি ছাড়া ইচ্ছামতো বিজ্ঞাপন প্রচার করে শহরের সৌন্দর্য নষ্ট করে। এবিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বিজ্ঞাপন প্রচারের ক্ষেত্রে কর্পোরেশনের অনুমতি ও নির্ধারিত ফি আদায় নিশ্চিত করতে হবে। গৃহকর প্রসঙ্গে ডা. শাহাদাত বলেন, করদাতাদের আস্থা ফেরাতে আপিল নিষ্পত্তি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, নগরবাসীর করের টাকাই নগর উন্নয়নের মূল শক্তি। সুশাসন, জবাবদিহিতা ও কার্যকর রাজস্ব ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চট্টগ্রামকে আমরা একটি আধুনিক ও সমৃদ্ধ নগরীতে রূপান্তর করব। রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে সভায় রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন, বিগত কয়েক বছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ের হার ইতোমধ্যে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে শপসাইন ও বিজ্ঞাপন ফি খাতে চলতি অর্থবছরের ছয় মাসেই আগের বছরগুলোর বাৎসরিক আদায়ের চেয়ে বেশি রাজস্ব সংগ্রহ হয়েছে, যা আগামী দিনে আরও বাড়বে। রাজস্ব আদায় জোরদার করতে লাইসেন্স ও হোল্ডিং শাখার কর কর্মকর্তা, উপকর কর্মকর্তা ও লাইসেন্স ইন্সপেক্টরদের ভেস্ট ও আইডি কার্ড প্রদান, নিয়মিত সভা, টার্গেট নির্ধারণ, প্রতিদিন মনিটরিং, সার্কেল অফিস পরিদর্শন ও মাঠপর্যায়ে ভিজিট বাড়ানো হয়েছে। সভায় জানানো হয়, আগে প্রতিটি সার্কেলে মাসে ১–২টি আপিল বোর্ড বসত এবং উপস্থিতি ছিল ২০–৩০ জন। বর্তমানে প্রতি সার্কেলে মাসে ৫টি আপিল বোর্ড অনুষ্ঠিত হচ্ছে এবং প্রতিটিতে উপস্থিতি ১০০ জনের বেশি। ত্রৈমাসিক অ্যাসেসমেন্টের সময় নতুন বা সমপ্রসারিত কোনো হোল্ডিং যেন বাদ না যায়, সে বিষয়েও কড়া মনিটরিং চলছে ।
সভায় রাজস্ব আদায় আরও বাড়াতে কয়েকটি কৌশলগত করণীয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে– প্রতি বছর রাজস্ব সম্মেলন আয়োজন, এনবিআর, বন্দর, চেম্বার ও বড় কর্পোরেট হাউজগুলোর সাথে সমন্বয়, গণমাধ্যম ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর সচেতনতামূলক প্রচারণা, সার্কেলগুলোতে পর্যাপ্ত লজিস্টিক সহায়তা, শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগ, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং ভালো কাজের জন্য কর্মচারীদের প্রণোদনা প্রদান। সভায় বক্তব্য রাখেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা সরোয়ার কামাল, রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সাব্বির রহমান সানি, স্টেট অফিসার অভিষেক দাশ ও প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির চৌধুরী।












