শতবর্ষী বটবৃক্ষটি বাঁচাব বলে

রাঙামাটির ট্রাইবাল আদাম এলাকা স্থানীয়রা বলছেন, গাছটি বাঁচুক, তথ্য ভবনও হোক

রাঙামাটি প্রতিনিধি | বুধবার , ১ মে, ২০২৪ at ৬:১৪ পূর্বাহ্ণ

রাঙামাটি জেলা শহরের ট্রাইবাল আদামের শতবর্ষী বটবৃক্ষটি বাঁচাতে প্রশাসনের মুখোমুখি হয়েছেন পাড়ার বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়েছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত স্থানীয়দের দাবি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে বলে স্থান ত্যাগ করেন জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম)

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলা শহরের ট্রাইবাল আদামে জেলা তথ্য অফিসের তথ্য কমপ্লেক্স বা তথ্য ভবন নির্মাণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে জেলা প্রশাসন। তবে ওই জায়গায় একটি শতবর্ষী বটগাছ থাকায় অবকাঠামো নির্মাণের আগে বটগাছ কাটার প্রক্রিয়া শুরু হয়। কয়েক দফায় পুলিশ নিয়ে সেখানে গিয়ে ফিরে আসেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থলে স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়ে প্রশাসন। যদিও তথ্য ভবনের অবকাঠামো নির্মাণে স্থানীয়দের আপত্তি নেই। তবে প্রাচীন বটবৃক্ষ কাটতে দেবেন না তারা।

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, দেশের ২৬টি জেলায় তথ্য কমপ্লেক্স বা তথ্য ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। তার মধ্যে রাঙামাটি পার্বত্য জেলাও রয়েছে। জেলা শহরের ট্রাইবাল আদামে কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য নির্বাচন করেছে মন্ত্রণালয়। তবে বটগাছটি বাদ রেখে ৩৩ শতক জমি অধিগ্রহণ করতে চেয়েছিল মন্ত্রণালয়। কিন্তু ভূমির মালিক বটগাছসহ ৫০ শতক জমি বিক্রি করতে চাইছেন। তবে এ ব্যাপারে ভূমি মালিকের কোনো বক্তব্য জানা যায়নি।

গতকাল বেলা ১১টার দিকে ট্রাইবাল আদাম বটগাছতলায় যান জেলা প্রশাসনের অতিরিক্তি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জোবাইদা আক্তার, সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিজয় কুমার জোয়ার্দার, রাঙামাটি পৌরসভার মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরী, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. জাহেদুল ইসলাম, কোতোয়ালী থানার ওসি মুহাম্মদ আলীসহ অনেকে। এ সময় কয়েকশ মানুষের বাধার মুখে পড়েন পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। স্থানীয়দের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি মন্ত্রণালয়ে জানাবেন বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন এডিএম জোবাইদা আক্তার। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকদের ছবি ও ভিডিও করতেও বাধা দেওয়া হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, ট্রাইবাল আদাম এলাকার বাসিন্দা রিনা চাকমা, গীতা চাকমা ও মুনা চাকমার মালিকানাধীন ভূমিটি তথ্য অফিসের স্থায়ী তথ্য ভবনের জন্য অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকেই আপত্তি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। শ্রমিকরা শতবর্ষী গাছটি কাটার জন্য গিয়ে বাধার মুখে পড়েন। পাড়াবাসীর দাবি, অফিস ভবন নির্মাণে আপত্তি না থাকলেও শতবর্ষী বটগাছটি তারা কাটতে দেবেন না। যে গাছটি দীর্ঘকাল ধরে স্থানীয়দের ছায়া ও অঙিজেন দিয়ে আসছে সেটির গায়ে তারা আঘাত দিতে দেবেন না।

ট্রাইবাল আদাম এলাকার বাসিন্দা ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মলীগের সভাপতি সদানন্দ চাকমা বলেন, শত বছরের বটগাছটি কেটে ফেলতে এক পক্ষ কাজটি করছে। এই গরমের দিনে স্থানীয়রা এখানে এসে বিশ্রাম নেন। বটগাছটি নিয়ে স্থানীয়দের অনেক আবেগ, অনুভূতি রয়েছে। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছে, আমাদের একটাই কথা, এই বটগাছ কাটতে দেব না।

আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ও আওয়ামী লীগ নেতা অভয় প্রকাশ চাকমা বলেন, বটগাছটি অনেক পুরনো। এটি পুরো এলাকার মানুষের জন্য একটা প্রশান্তির জায়গা। এভাবে গাছটি আমরা কেটে ফেলতে দেব না।

স্থানীয়রা জানান, বটগাছটি কে কখন লাগিয়েছিলেন তাদের জানা নেই। দিনে দিনে শাখাপ্রশাখা ছড়িয়েছে। ওই এলাকার মানুষকে ছায়া দিয়ে আসছে শত বছরের বৃক্ষটি।

রাঙামাটি পৌরসভার কাউন্সিলর জামাল উদ্দিন বলেন, গাছটির কারণে এই এলাকাকে সবাই বটতলা নামে চেনেন। বটগাছটা পুরো এলাকার আশ্রয়স্থলের মতো। বিশাল অংশজুড়ে ছায়া দেয়। শুনেছি এটা অধিগ্রহণ হয়েছে একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য। এলাকাবাসীর কথা, গাছটি যদি কেটে ফেলে, ছায়ায় বসে বিশ্রাম নেওয়ার জায়গা থাকবে না।

ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) জোবাইদা আক্তার জানিয়েছেন, স্থানীয়দের বটগাছ কাটতে বাধা দেওয়ার বিষয়টি তিনি মন্ত্রণালয়ে জানাবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য অটোমেশনের বিকল্প নেই : অর্থ প্রতিমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধলায়ন্স ক্লাবের ২৭ তম জেলা কনভেনশন ৩ ও ৪ মে