শততম জাহাজ নোঙরের মাইলফলক

মাতারবাড়ী বন্দর

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৫ আগস্ট, ২০২২ at ৪:৫৪ পূর্বাহ্ণ

দেশের ভবিষ্যতের ‘পাওয়ার এন্ড পোর্ট হাব’ হিসেবে গড়ে উঠতে যাওয়া মাতারবাড়ী বন্দরে শততম জাহাজের নোঙর সম্পন্ন হয়েছে গতকাল। ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাহাজ ভিড়ানোর যে যাত্রা শুরু হয়েছিল তা গতকাল শততম জাহাজের মাইলফলক স্পর্শ করেছে। মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মিত জেটিতে জাহাজ বার্থিংয়ের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভবিষ্যতে এই বন্দরই দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের বড় একটি অংশের চাহিদা মোকাবেলা করবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে মাতারবাড়ীতে বন্দর গড়ে তোলা হচ্ছে। এর আগে জাপানের সহায়তায় মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের
জন্য আমদানিকৃত কয়লা নিয়ে আসা জাহাজ ভিড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে শুরু করা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০২০ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রথম জাহাজ বার্থিং নিয়েছিল মাতারবাড়ীতে। পানামা পতাকাবাহী বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ভেনাস ট্রায়াম্প নোঙর করেছিল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে। প্রথম জেটির কার্যক্রম শুরুর ছয় মাসেরও বেশি সময় পর ২০২১ সালের ১৫ জুলাই শুরু হয় দ্বিতীয় জেটির কার্যক্রম। গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে এই দুইটি জেটিতে জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম চলছে। বিশেষ করে বিভিন্ন ধরনের ইকুইপমেন্ট নিয়ে আসা জাহাজগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবর্তে সরাসরি মাতারবাড়ীতেই বার্থিং দেয়া হচ্ছে। এই যাত্রার ধারাবাহিকতায় গতকাল শততম জাহাজটি মাতারবাড়ীতে নোঙর করেছে। ‘এমভি হোসি ফরচুন’ নামের জাহাজটি মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য চীন থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রজেক্ট মেটেরিয়ালস নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছে। বহির্নোঙর থেকে বন্দরের পাইলট মোহাম্মদ নূর আলম সিদ্দিকী চীনা জাহাজ এমভি হোসি ফরচুনকে চালিয়ে মাতারবাড়ী জেটিতে নিয়ে আসেন। গতকাল বিকেল ৫টা নাগাদা জাহাজটির বার্থিং সম্পন্ন হয়। বন্দরের শক্তিশালী টাগ কান্ডারী-১০ জাহাজটির বার্থিং এ সহায়তা করে বলেও চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন।
বন্দর সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাপান সফরকালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নের বিষয়ে বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-জি) ইনিশিয়েটিভ ঘোষণার প্রেক্ষিতে কঙবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়ীতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পরবর্তীতে জাপানি বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতেই মাতারবাড়ীতে বাণিজ্যিক বন্দর নির্মাণের বিষয়টি সবার নজরে আসে। এরপর থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তত্ত্ববধানে মাতারবাড়ীতে বন্দর উন্নয়নের কার্যক্রম শুরু হয়।
বন্দর সচিব জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিপিজিসিবিএল) যৌথ প্রচেষ্টায় কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেটিতে ইতোপূর্বে ৯৯টি সমুদ্রগামী জাহাজ হ্যান্ডলিং কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যা শুধু কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্যই নয়, দেশের রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। মাতারবাড়ীর দুইটি জেটিতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ১৭ হাজার ৯১ টন পণ্য হ্যান্ডলিং করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২ কোটি ৮ লাখ ৬ হাজার ২৩০ টাকা রাজস্ব আয় করেছে। সবচেয়ে বড় কথা ওখানে জেটি কিংবা বন্দর ফ্যাসিলিটি গড়ে তোলা সম্ভব না হলেও কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইকুইপমেন্টসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট ম্যাটেরিয়ালস চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমেই হ্যান্ডলিং করতে হতো, যাতে পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে যেতো।
সূত্র জানায়, মাতারবাড়ীতে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রথম পর্যায়ের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে ২০২৫ সালে এবং বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জাহাজ ভিড়বে এ জেটিতে। বর্তমানে সিপিজিসিবিএল নির্মিত জেটিতে ঢোকার জন্য চ্যানেলের প্রশস্থতা ২৫০ মিটার। বাণিজ্যিক বন্দরের প্রয়োজনে এই চ্যানেলের প্রশস্থতা ৩৫০ মিটারে উন্নীত করা হবে। গভীর বঙ্গোপসাগর থেকে এই চ্যানেল ধরে জাহাজ মাতারবাড়ী জেটিতে ভিড়বে। ইতোমধ্যে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণসহ নানামুখী সুবিধা নিশ্চিত করা হয়েছে। আগামী বছর মাতারবাড়ী কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮০ হাজার টন কয়লাবোঝাই প্যানাম্যাঙ সাইজের জাহাজ ভিড়বে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দর সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক জানিয়েছেন, মাতারবাড়ীকে ঘিরে সরকারের যে মহাযজ্ঞ চলছে চট্টগ্রাম বন্দর তার গর্বিত অংশীদার। ভবিষ্যতে চট্টগ্রাম বন্দরের এই অংশীদারিত্ব জাতীয় অর্থনীতিকেই আরো অনেক বেশি সমৃদ্ধ করবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধরাত ১০টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়ার নির্দেশনা, দুই ব্যাংক কর্মকর্তাকে শোকজ!
পরবর্তী নিবন্ধলংগদুতে ইউপিডিএফ কর্মীকে গুলি করে হত্যার অভিযোগ