শঙ্খনদে কয়েক কিমি অংশ জুড়ে ভাঙন

চাষযোগ্য জমি হারিয়ে পথে বসেছেন শত শত কৃষক ঝুঁকির মুখে কোটি টাকা মূল্যের লালুটিয়া সেচ প্রকল্প

মুহাম্মদ এরশাদ, চন্দনাইশ | বুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:২৩ পূর্বাহ্ণ

চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভার রায়জোয়ারা, লালুটিয়া ও চৌকিদার ফাঁড়ি এলাকার কয়েক কিলোমিটার অংশ জুড়ে শঙ্খনদের ভাঙন শুরু হয়েছে। এক সময়কার শঙ্খনদের ভাঙন কবলিত এলাকা হিসেবে পরিচিত দক্ষিণাংশ সাতকানিয়ার কালিয়াইশ ও ধর্মপুর ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার জুড়ে বিগত সরকারের আমলে পানি উন্নয়ন বোর্ড টেকসই প্রতিরক্ষা বাঁধ আরসিসি ব্লক বসায়। ফলে শঙ্খনদের দক্ষিণাংশ কালিয়াইশ, ধর্মপুর, খাগরিয়া, বাজালিয়া, পুরানগড় ইউনিয়নের জনগণ ভয়াবহ ভাঙন থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু নদীর ধর্মই হলো এক কূল ভরে তো অন্য কূল ভাঙে। তেমনি বিগত কয়েক বছর ধরে শঙ্খনদের উত্তরাংশ চন্দনাইশের দোহাজারী পৌরসভা এলাকার রায়জোয়ারা, লালুটিয়া, চৌকিদার ফাঁড়ি অংশের কয়েক কিলোমিটার অংশজুড়ে ভয়াবহ ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ওইসব এলাকার শত শত একর চাষযোগ্য জমির প্রায় ৫শ মিটার গভীর পর্যন্ত নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। যেখানে শত শত চাষি মৌসুমী সবজিসহ বিভিন্ন রকমের সবজির চাষাবাদ করেন। বর্তমানে যেভাবে ভাঙন শুরু হয়েছে অচিরেই পুরো চরাঞ্চল বিলীন হওয়ার পাশাপাশি গণবসতিপূর্ণ এলাকা রায়জোয়ারা গ্রামটিও পুরোপুরি বিলীন হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও দোহাজারী চৌকিদার ফাঁড়ি অংশের বিস্তীর্ণ এলাকায়ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোটি টাকা মূল্যের সরকারি লালুটিয়া সেচ প্রকল্পটিও ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে। এ অবস্থায় শঙ্খচরের শত শত কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা বিগত সময়ের মতো ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

রায়জোয়ারা এলাকার বাসিন্দা মো. আনোয়ার হোসেন জানান, শঙ্খচরটি চট্টগ্রামের সবজি ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত। চরের পাশেই গণবসতিপূর্ণ আমাদের রায়জোয়ারা গ্রাম। বর্তমানে যে হারে ভাঙন শুরু হয়েছে, তাতে এখনই প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে পুরো শঙ্খচরটি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি পুরো রায়জোয়ারা গ্রামটিও বিলীন হয়ে যাবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে শুধু রায়জোয়ারা ও লালুটিয়া অংশে দুই কিলোমিটার জুড়ে প্রায় ৫শ মিটারের মতো চরাঞ্চল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। চাষযোগ্য জমি হারিয়ে পথে বসেছে শত শত কৃষক। ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে কোটি কোটি টাকা মূল্যের সরকারি লালুটিয়া পাম্প হাউজটিও। ভাঙন অব্যাহত থাকলে পুরো পাম্প হাউজটিও ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, চৌকিদার ফাঁড়ি অংশে স্থানীয়দের খামারসহ বিস্তীর্ণ সবজি ক্ষেত ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে।

শঙ্খচরের কৃষক মাহামুদুল হক মাহাদু জানান, ইতিমধ্যে অসংখ্য কৃষকের ফসলি জমি নদে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে চট্টগ্রামের সবজি ভান্ডার হিসেবে খ্যাত পুরো শঙ্খচরই এক সময় পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম পওর বিভাগ১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে সাহীদ জানান, শঙ্খনদের ভাঙন কবলিত এলাকা রায়জোয়ারা, লালুটিয়া, চৌকিদার ফাঁড়ি অংশ ইতিমধ্যে পরিদর্শন করেছেন। ভাঙন কবলিত এসব অংশে টেকসই প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জন্য বিগত বাজেট পরবর্তী একটি প্রজেক্টের জন্য প্রক্রিয়াও শুরু করা হয়েছে। তবে বর্তমানে নির্দেশনা রয়েছে নতুন কোনো প্রজেক্ট না বানানোর। পরবর্তী নির্দেশনা পেলে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে। তবে ইতিমধ্যে চন্দনাইশের বৈলতলী, সাতকানিয়ার পুরানগড়সহ বেশকিছু পয়েন্টে ভাঙন প্রতিরোধে আরসিসি ব্লক বসানোর কাজ চলবে। পরবর্তী নির্দেশনা মতে রায়জোয়ারা, লালুটিয়া, চৌকিদার ফাঁড়িসহ যেসব পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবিস্মরণীয়, ঐতিহাসিক জয়
পরবর্তী নিবন্ধ‘আজাদী এগিয়ে যাক সামনের পানে, পাঠকের ভালোবাসায়’