শীতকালীন সবজির জন্য ইতিমধ্যে খ্যাতি অর্জন করেছে শঙ্খচর। চন্দনাইশ ও সাতকানিয়া উপজেলা সীমান্তের মধ্যদিয়ে বিস্তীর্ণ এই চর প্রবাহিত হয়। এ চরে উৎপাদিত সবজি স্বাদে ও পুষ্টিগুণে অতুলনীয় হওয়ায় শীত মৌসুমে চাহিদাও থাকে প্রচুর। বিশেষ করে চট্টগ্রাম নগরীর বড় বড় কাঁচা বাজারে প্রচুর পরিমাণে সবজি যায় এখান থেকে। মুলা, বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম, টমেটো, বাংলা লাউ, মিষ্টি লাউ, শষা, তিতকরলা, ধনেপাতা, ঝিঙা, চিচিংগা, ঢেঁড়শ, বরবটি শঙ্খচরে উৎপাদিত শীতকালীন সবজির মধ্যে অন্যতম। কিন্তু এবারের চিত্রটা একটু অন্যরকম।
এখন শুরু হয়েছে শীত, অথচ এই চরের কৃষকরা শীতকালীন সবজি এখনো পুরোপুরি বাজারে তুলতে পারেননি। গত ২২ অক্টোবর থেকে টানা ৩ দিনের বর্ষণে প্রথম দফায় এই চরে চাষকৃত সব ধরনের সবজি নষ্ট হয়ে যায়। ফলে এখনো শীতের সবজি তারা বাজারে তুলতে পারেননি। গতকাল শুক্রবার সকালে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সবজি বাজার দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশন চত্বরে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে এ তথ্য পাওয়া যায়।
এই সময়ে কৃষকরা কেবলমাত্র মুলা, বরবটি, ঢেঁড়শ, বাংলা লাউ, মিষ্টি লাউ, ধনেপাতা বাজারজাত করতে পারলেও শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম বাজারে দেখা যায়নি। বিশাল বাজার ঘুরে অর্ধঝুঁড়ি ফুলকপি ও অর্ধঝুড়ি বাঁধাকপি দেখা যায়। বাজারে কয়েক ঝুঁড়ি বেগুন দেখা গেলেও তা পর্যাপ্ত নয়। তবে পর্যাপ্ত পরিমানে মুলা বাজারে আনলেও ১০ দিনের ব্যবধানে দাম অর্ধেকে নেমে আসায় কৃষকরা হতাশ। ১০ দিন আগে ৮০ কেজির ১ ঝুঁড়ি মুলা বিক্রি হয়েছে ২ হাজার টাকা, তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৭ শ থেকে ৮শ টাকায়। এভাবে বাজারে আসা সকল সবজির দর অর্ধেকে নেমে এসেছে। সপ্তাহ আগে ১ কেজি ধনেপাতা ১শ থেকে দেড়শ টাকা বিক্রি হলেও তা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকায়। বাজারে অর্ধঝুঁড়ি (২২ কেজি) ফুলকপি নিয়ে এসেছেন শঙ্খচরের প্রবীণ কৃষক দোহাজারী চাগাচর এলাকার সিরাজুল মুবিন। প্রতিকেজি ফুলকপি ৭০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন। এসময় তিনি বলেন, গত মাসের টানা বৃষ্টির কারণে প্রথম দফায় করা ফুলকপি, বাঁধাকপি ও বেগুন ক্ষেত সম্পূর্ণ বিনষ্ট হয়ে যায়। ফলে চলতি মাসের শুরুর দিকে নতুন করে আবারও চাষ করতে হয়েছে এসব সবজি। ফলে এ চরের হাজার হাজার কৃষকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় চাষকৃত শীতের এসব সবজি পুরোপুরি বাজারে আসতে আরো এক মাসের মতো সময় লাগবে। বৃষ্টিতে প্রথম দফায় ফুলকপি ক্ষেত নষ্ট না হলে বর্তমানে প্রচুর ফুলকপি বিক্রি করতে পারতাম। একই এলাকার কৃষক আবু তাহের ২ ঝুঁড়ি (৮৫ কেজি) বেগুন বাজারে এনে তা কেজি প্রতি ৫৫ টাকায় বিক্রি করেছেন।
সাতকানিয়ার উত্তর কালিয়াইশ এলাকার কৃষক মো. হাসান জানান, বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দ্বিতীয়বার চাষ করেও স্বস্তিতে নেই। কারণ চাষকৃত সবজি বাজারে তুলতে আরো এক মাসের মতো সময় লাগবে। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের সবজি বাজারে আসায় এখানকার সবজির
দামও অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই এ মৌসুমে আর লাভের মুখ দেখবো কিনা তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।
ভোরে শক্সখচরে গিয়ে দেখা যায়, গত মাসে বৃষ্টিতে সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কৃষকরা নতুনভাবে আবার চাষ করেছেন বেগুন, ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটোসহ অন্যান্য সবজি। প্রথমবার করা শিমের ফুল ঝড়ে পড়া গাছে নতুনভাবে ফুল আসতে শুরু করেছে, কিছু কিছু ক্ষেতে শিম ধরা শুরু করলেও তা বাজারে তুলতে কমপক্ষে ২০ দিন সময় লাগবে বলে জানান কৃষকরা।
নগরীর কালুরঘাট কামাল বাজারের পাইকারী সবজি ব্যবসায়ী হাসান সওদাগর জানান, চলতি মৌসুমে দোহাজারী রেলওয়ে স্টেশনের সবজি বাজারে পর্যাপ্ত মুলা পাওয়া গেলেও শীতের অন্যতম সবজি ফুলকপি, বাঁধাকপি, শিম ও বেগুন এখনো পাওয়া যাচ্ছেনা। অথচ অন্যান্য মৌসুমে এ সময়ে বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন সবজিতে ভরপুর থাকতো দোহাজারীর সবজি বাজার।