শঙ্কা, তবুও থেমে নেই ঈদ প্রস্তুতি

আগাম কেনাকাটা করছেন অনেকে ।। করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২২ মার্চ, ২০২১ at ৬:৫০ পূর্বাহ্ণ

সাম্প্রতিক সময়ে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছে শঙ্কা ও উদ্বেগ। তবে শঙ্কা-উদ্বেগের মাঝেও থেমে নেই ব্যবসায়ীদের ঈদ প্রস্তুতি। গত বছর সরকার ১৬ রমজান থেকে সীমিত পরিসরে মার্কেট খুলে দিলেও সেই সময় ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন। আগামী মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। স্বাভাবিকভাবে শপিংমল-ফ্যাশন হাউসের মালিকরা সারা বছর এই এক মাসের দিকেই তাকিয়ে থাকেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পুরো বছর মোট বিক্রির ৭০ শতাংশ আসে রমজান মাসে। তবে গতবছরের মতো এবছরও করোনা ভেল্কি দিচ্ছে। তাই স্বভাবত ব্যবসায়ীদের কপালে ভাঁজ পড়া শুরু হয়েছে। তারপরেও পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবেলায় পুরোদমে ঈদের প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এদিকে ঈদকে সামনে রেখে কিছু ক্রেতা আগাম কেনাকাটা সেরে নিচ্ছেন। সরেজমিনে গতকাল দেখা গেছে, নগরীর টেরিবাজার, রেয়াজুদ্দিন বাজার, নিউ মার্কেট, জহুর হকার্স মার্কেট, ভিআইপি টাওয়ার, আমিন সেন্টার, ইউনেস্কো সেন্টার, সেন্ট্রাল প্লাজা, স্যানমার ওশান সিটি, শপিং কমপ্লেক্স, ফিনলে স্কয়ার, আফমি প্লাজা ও মিমি সুপার মার্কেটে বিভিন্ন কাপড়ের শো-রুমের ব্যবসায়ীরা ক্রেতার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের কর্মচারীরা নতুন জামা শো-রুমে থরে থরে সাজাচ্ছেন। তবে মার্কেটগুলোতে ঈদের আমেজ লক্ষ্য করা না গেলেও কিছু কিছু ক্রেতা তাদের পছন্দের পোশাক খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছেন।
রেয়াজুদ্দিন বাজারে মার্কেটিং করতে আসা বেসরকারি কলেজের শিক্ষার্থী ঈশিতা সুলতানা জানান, রমজান মানুষে ভালোভাবে দেখেশুনে শপিং করা যায় না। গত বছর যেহেতু বেচাকেনা হয়নি, তাই ব্যবসায়ীদের কালেকশনও বলতে গেলে রয়ে গেছে। এছাড়া কিছু কিছু দোকানে নতুন কালেকশনও এসেছে। তাই ঈদের শপিং করতে এসেছি।
জানা গেছে, প্রতি বছরই ক্রেতা আকর্ষণে নতুন নতুন ডিজাইনের পণ্য নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে তারা ঈদ বাজারের ৬০ শতাংশ প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন। ফলে দোকান এবং ফ্যাশন হাউসগুলোতে শোভা পাচ্ছে ঈদের নতুন জামা। অন্যদিকে ঈদের বাজারে ভিনদেশী পোশাকের দাপটের কারণে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দেশীয় ফ্যাশন হাউস মালিকরা। তারা জানান, আমাদের দেশে প্রতি বছর লাফিয়ে লাফিয়ে পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। সারাবছর কষ্ট শিকার করে আমরা ঈদের এই সময়ের জন্য অপেক্ষা করি। কিন্তু দেখা যায়, আমাদের গড়া মার্কেটটি ভারতীয় পণ্যের দখলে চলে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের শো-রুমে অনেক ক্রেতা এসে ভারত-পাকিস্তানের কাপড়ের খোঁজ নেন। প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণ ভারতীয় পণ্য রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে চোরাইপথে দেশের বাজারে প্রবেশ করে। অথচ আমাদের পণ্যের গুণগত মান ভারত-পাকিস্তানের পণ্যের চেয়ে অনেক ভালো। তারপরেও আমরা আশা করছি, এ বছর সব বয়সী ক্রেতার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে দেশীয় পোশাকই।
ঈদের প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে ফ্যাশন ডিজাইনার এবং তুলি’স ক্রিয়েশনের স্বত্বাধিকারী রেহনুমা তুলি দৈনিক আজাদীকে বলেন, গতবছর ঈদে কোভিডের কারণে আমরা শো-রুম ওপেন করে ব্যবসা করতে পারিনি। তবে সেই কাজটি তখন আমরা অনলাইনে সেরেছি। এবারও করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। সেই রকম কিছু হলে হয়তো আবারও অনলাইনের ওপরই নির্ভর করতে হবে। তবে ঈদের পূর্ণ প্রস্তুতি সেরে রাখছি। আমরা প্রতিটি ব্লক, হ্যান্ড প্রিন্ট এবং কারচুপির কাজ করা ফ্যাশনেবল পোশাক ক্রেতাদের জন্য নিয়ে আসি। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে ভারতীয় কাপড়ের আগ্রাসনে আমরা কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আমাদের দেশের কাপড় তৈরিতে আমাদের ম্যাটেরিয়াল কস্ট বেশি লাগছে। আবার ভারতীয় কাপড় কম খরচে পাচ্ছে ক্রেতারা। তাই ভারতীয় কাপড় আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ককর বাড়িয়ে দিলে দেশীয় উদ্যোক্তারা টিকে থাকতে পারবেন।
ফ্যাশন ডিজাইনার এবং মেঘ রোদ্দুর প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মেঘলা সরোয়ার বলেন, ঈদ কেন্দ্রীক ভালোই প্রস্তুতি চলছিল। তবে করোনার সংক্রমণ বাড়ার কারণে আমি আপাতত আমার কারখানা বন্ধ রাখার চিন্তা করছি। আমি মূলত ঈদকে কেন্দ্র করেই প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এখন বুঝতে পারছি না, পরিস্থিতি কোনদিকে যাবে।
টেরি বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মান্নান বলেন, ঈদ উপলক্ষে আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। অনেকের কাছে গতবছরের কালেকশন রয়ে গেছে। এছাড়া অনেকে নতুন নতুন কালেকশন নিয়ে এসেছে।
মিমি সুপার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, করোনার কারণে গত বছর আমাদের অনেক লোকসান দিতে হয়েছে। এবারও করোনা বাড়ছে, তাই আমরা সৃষ্টিকর্তার দিকে তাকিয়ে আছি। তবে আমাদের প্রস্তুতি থেমে নেই।
সানমার ওশান সিটি ও নাসিরাবাদের ফিনলে স্কয়ার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আসাদ ইফতেখার বলেন, আমরা ঈদ কেন্দ্রীক শতভাগ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। এটা ঠিক, করোনা বাড়ার কারণে আমরা মানসিক চাপে আছি। তবে আশা করি পরিস্থিতি গত বছরের মতো হবে না। গত বছর মানুষের মধ্যে যে ধরণের আতঙ্ক ছিল, সেটি এবার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আশা করি, এ বছর পরিস্থিতি ব্যবসায়ীদের অনূকুলে থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৮ এপ্রিল থেকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ
পরবর্তী নিবন্ধজাতির পিতার নাম আর কেউ মুছতে পারবে না : প্রধানমন্ত্রী