দীর্ঘ প্রায় এক বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ। তবে এক বছরের জড়তাটা বেশ ভালোই টের পেলেন টাইগার ব্যাটসম্যানরা। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে সিরিজের প্রথম টেস্টের প্রথম দিনে গতকাল অতি সাবধানী বাংলাদেশকে দেখা গেল। আর সাবধান হতে গিয়েই বিপদের মুখে পড়তে যাচ্ছিলেন স্বাগতিকরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বোলিং যে একেবারে খুব চ্যালেঞ্জিং ছিল, তা কিন্তু নয়। অথচ বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা ছিলেন অতি সাবধানী। বলতে গেলে ব্যাটিংয়ে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছিলেন তামিম-সাকিবরা। ফলে দিন শেষে স্বস্তির পাশাপাশি হতাশাও বিরাজ করছে বাংলাদেশ শিবিরে।
সিরিজের প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৪২ রান। অথচ সেটা হতে পারতো আরো কম উইকেট হারিয়ে তিনশ বার তার কাছাকাছি। কিন্তু অতি সাবধানী হতে গিয়ে একাধিক উইকেট বিলিয়ে দিতে হয়েছে টাইগারদের। তারপরও ২৪২ রানে দিন পার করাতেই যেন স্বস্তি। অথচ এক বছর পর টেস্ট ক্রিকেটে সৌভাগ্য নিয়ে ফেরেন টাইগার দলপতি মোমিনুল। টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। কিন্তু তার এই সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করতে পারেননি তামিম ইকবাল। দুটি চার মেরে ভালো কিছুর ইঙ্গিত ছিল তামিমের ব্যাটে। কিন্তু পঞ্চম ওভারেই হতাশায় ডুবতে হলো স্বাগতিক শিবিরকে। কেমার রোচের দুর্দান্ত এক ডেলিভারি তামিমের ব্যাটের পর প্যাডে লেগে উড়িয়ে নিয়ে যায় স্টাম্পের বেলস। ৯ রান করে ড্রেসিং রুমে ফিরতে হয় তামিমকে।
এরপর সাদমানকে নিয়ে বেশ ভালো কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। কিন্তু ওয়ানডের মত টেস্টেও নিজের ভাগ্য ফেরাতে পারলেন না তিনি। সেই ২৫ থেকে ৩০ এর বলয় ভাঙতে পারলেন না আর। ফিরলেন ২৫ রান করে। তাও দৃষ্টিকটু রান আউট। এরপর অধিনায়ক মোমিনুল যোগ দেন সাদমানের সাথে। রানের চাকার গতিও বাড়তে থাকে ধীরে ধীরে। গড়ে উঠে বেশ ভালো একটি জুটি। শুরুতে রানের জন্য লড়াই করলেও ধীরে ধীরে ছন্দে ফিরছিলেন মোমিনুল। কিন্তু অহেতুক একটি ভুল শট খেলতে গিয়ে উইকেট দিয়ে এলেন টাইগার দলপতি। ভাঙে ৫৩ রানের জুটি। মোমিনুল ফেরেন ২৬ রান করে। এরপর মুশফিককে নিয়ে আবার পথ চলা শুরু সাদমান ইসলামের। কিন্তু দলকে বড় ধাক্কা দিয়ে ফিরলেন এই ওপেনার। ওয়ারিকানের বলে এলবিডব্লিউর শিকার হয়ে ফেরেন স্বাগতিকদের পক্ষে একমাত্র হাফ সেঞ্চুরিয়ান সাদমান। কিন্তু তিনটি রিভিউ থাকলেও রিভিউ নেননি এই ওপেনার। অথচ টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, তিনি আউট ছিলেন না। প্রায় চারঘণ্টা একপ্রান্ত আগলে রাখা সাদমান ফিরলে বড় ধাক্কা খায় বাংলাদেশ। তার ১৫৪ বলে ৫৯ রানের ধৈর্যশীল ইনিংসটিতে চারের মার ছিল ৬টি। এরপর দলের দুই বড় ভরসা সাকিব ও মুশফিকের পথ চলা শুরু। দুজন বেশ সচল রেখেছিলেন রানের চাকা। এই দুজনের কাধে চড়ে দিন পার করবে তেমনটি যখন প্রত্যাশা ছিল স্বাগতিক শিবিরে। কিন্তু আবারো সেই ওয়ারিকানের ধাক্কা। এবার তার শিকার মুশফিক। ভাঙলো ৫৯ রানের জুটি। মুশফিক ফিরলেন ৩৮ রান করে। স্লিপে কর্নওয়ালের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন টাইগারদের বড় ভরসা মুশফিক। এরপর লিটন দাশকে নিয়ে আবার পথ চলা শুরু সাকিবের। সেখানেও ঘটতে পারতো বিপত্তি। মাত্র দুই রানের মাথায় লিটনের ক্যাচটি যদি না পড়তো তাহলে বাংলাদেশকে কত বড় বিপদে পড়তে গতো সেটা ছিল সহজেই অনুমেয়। তবে জীবন পাওয়া লিটন ক্রমশ হয়ে উঠেন আগ্রাসী। সাকিবের সাথে গড়েন অবিচ্ছিন্ন ৪৯ রানের জুটি। আর তাতেই ২৪২ রানে দিন শেষ হয় স্বাগতিকদের। সাকিব অপরাজিত ৩৯ রানে আর লিটন ৩৪। আজ আবারো মাঠে নামবেন তারা। দলের স্বীকৃত ব্যাটসম্যান বলতে এখন এ দুজনই। এখন তারা ইনিংসটাকে কতদূর টেনে নিয়ে যেতে পারেন সেটাই দেখার বিষয়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে সফল বোলার স্পিনার জোমেল ওয়ারিকান।