শুরুতে অনাবৃষ্টি, এরপর ভারী বৃষ্টিতে ১২ দিনের টানা বন্যা। ক্ষতি কাটিয়ে কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রাণপণ চেষ্টার মাঝেই আবারও পোকার আক্রমণ। দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন মাটি থেকে সোনা ফলানো কৃষকের। কিন্তু সব শঙ্কা কাটিয়ে সংগ্রামী কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি। দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠে উঁকি দিচ্ছে সোনালী ধান। ধান পাকা শুরু হয়েছে। যতদূর চোখ যায়–সবুজ আর সোনালী ধানের সমারোহ। আমনের বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও সংশ্লিষ্টরা। উপজেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রাঙ্গুনিয়ায় ১৫ হাজার ৪৪৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আমন চাষ হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাইবিলে ইতোপূর্বে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হলেও এবার সাড়ে ৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ধানের হিসাবে প্রতি হেক্টরে সাড়ে ৫ মেট্টিক টন। কিন্তু ফলন ৬ মেট্টিক টন আশা করা হচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ধান কাটার উপযুক্ত হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
উপজেলার বিভিন্ন আমনের মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, বিলগুলো পাকা আমনের সোনালী আভায় আলোকিত হয়ে উঠেছে। এবার উপজেলায় আমনের ফলন ভালো হওয়ায় খুশিতে আছেন কৃষকরা। গুমাই ও তৈলিয়াভাঙ্গা বিল ছাড়াও উপজেলার রাজানগর, হোসনাবাদ, পদুয়া, সরফভাটা, পারুয়া, পোমরা, মরিয়মনগর, চন্দ্রঘোনা, রাঙ্গুনিয়া হোসনাবাদ, লালানগর ও দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন বিলে সবুজের আবহ পেরিয়ে পাকা আমন সোনালি হাসির শোভা ধারণ করছে। ধান কেটে ঘরে তুলতে এখন থেকেই ধান কাটা শ্রমিক সংগ্রহ করছেন কৃষকরা। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন হাটবাজারে বাইরের শ্যমিকরা এসে ভিড় করছেন। এক একজন শ্রমিক ৭০০/৮০০ টাকা করে দরদাম করে নিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা। এছাড়া কানি প্রতি ৩০০০ টাকা করে ধান কাটার বায়না নিচ্ছেন ২–৩ জনের শ্রমিক দল।
গুমাইবিলের কৃষক মো. নুরুদ্দিন জানান, তিনি ৭ হেক্টর জমিতে আমন চাষাবাদ করেছেন। হেক্টর প্রতি চাষাবাদে তার ৯০ থেকে ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত আমন গাছ বেশ পরিপুষ্ট রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৬ টন ধান পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন তিনি। বর্তমান বাজার দর কেজি প্রতি ৩০ টাকা হিসেবে হেক্টর প্রতি ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করা সম্ভব হবে। এই হিসেবে হেক্টর প্রতি লাভ ৭০–৮০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।
মো. মোকাররম নামে একজন জানান, তিনি ৮ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করেন। এরমধ্যে ব্রীধান–৫১ জাত চাষাবাদ করেছেন ৩ হেক্টর জমিতে। অনাবৃষ্টির সময় সেচ দিয়ে চাষাবাদ করার পর ভারীবৃষ্টিতে তার ১০ শতাংশ চারা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর কৃষি অফিসের পরামর্শে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার আগেই বীজতলা তৈরি করে নতুন উদ্যোমে চাষাবাদ করেন তিনি। কিন্তু আবারও পোকার আক্রমণ দেখা দেয়। পরে আলোক ফাদসহ নানা প্রযুক্তির সাহায্যে তা ধমন করে বর্তমানে ভাল ফলন আসতে শুরু করেছে।
উপ–সহকারী কৃষি কর্মকর্তা উত্তম কুমার শীল জানান, এখন কৃষকরা নতুন প্রযুক্তি গ্রহণ করেছেন। দুই ফসলি জমিকে ৩ ফসলি জমিতে পরিণত করতে কৃষকদের দিয়ে প্রথমে আমন মৌসুমে স্বল্প মেয়াদী হাইব্রিড অ্যারাইজ এজেড–৭০০৬ জাতের ধান চাষ করানোর পর সুরভী–১ জাতের ধান বোরো মৌসুমে আগাম চাষ করালাম। এতে অনেকেই আগাম ধান ঘরে তুলেছেন। যেখানে ফলন হেক্টর প্রতি ছয় টনের বেশি পাওয়া গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস জানান, রাঙ্গুনিয়ায় এবার উচ্চ ফলনশীল উপশি জাতের আমন চাষাবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে ধান কাটা শুরু হয়েছে। আমার উপস্থিতিতে উপজেলার পোমরা ও হোসনাবাদ থেকে নমুনা শস্য কাটা হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে ২০ বর্গমিটারে ধান কাটা হয়। এরপর আদ্রতা বাদ দিয়ে ধান ওজন করে দেখা গেছে ব্রি ধান–৮৭–এ হেক্টর প্রতি ৪.৮৫ টন ফলন এসেছে। সকল শংকা কাটিয়ে কৃষকরা ভাল ফলন পেতে শুরু করেছে বলে তিনি জানান।