কক্সবাজারের চকরিয়ায় শখের বশে মাতামুহুরী নদীতে মাছ ধরতে নেমে চোরাবালিতে তলিয়ে গিয়ে দুই যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে বেতুয়া বাজারস্থ মাতামুহুরী সেতুর দক্ষিণ পাশে আনিচপাড়ার কাছে এ ঘটনা ঘটে। অবৈধভাবে শ্যালোমেশিনে বালু উত্তোলনের ফলে নদীতে শত শত চোরাবালির সৃষ্টি হয়ে মরণফাঁদ তৈরি হয়েছে বলে জানান স্থানীয়রা।
মারা যাওয়া দুই যুবক হলেন– উপজেলার পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কালাগাজী সিকদার পাড়ার মো. ইদ্রিস মিয়ার পুত্র মো. মনছুর আলম (২৫) ও ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সেকান্দার পাড়ার আবদুস সালামের পুত্র মোহাম্মদ মুবিন (২০)। তম্মধ্যে কয়েকমাস আগে বিয়ে করেন মনছুর আলম।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল ৯টার দিকে বেতুয়া বাজারস্থ মাতামুহুরী সেতুর কাছে আনিচপাড়া স্থানে মাছ ধরতে নামেন পাঁচ–ছয়জন যুবক। এরপর গভীর চোরাবালিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে পড়েন দুইজন। এটি জানাজানি হলে প্রথমে স্থানীয় লোকজন ও জেলেরা জাল ফেলে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও ব্যর্থ হয়। এরপর ডাক পড়ে ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরিদলের। তারা প্রায় ছয় ঘণ্টা ধরে নদীতে তল্লাশি চালিয়ে গভীর চোরাবালি থেকে একসঙ্গে দুই যুবকের লাশ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। পূর্ব বড় ভেওলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফারহানা আফরিন মুন্না দৈনিক আজাদীকে বলেন, স্থানীয় পাঁচ–ছয়জন যুবক মিলে শখের বশে মাতামুহুরী নদীতে মাছ ধরবেন। এজন্য একদিন আগে নদীর মাঝখানে বাঁশ, খড়কুটো ও লতাপাতা দিয়ে জাঁক (যেখানে মাছ এসে অবস্থান করবে) দিয়ে রাখা হয়। আজ (গতকাল) বুধবার সকাল ৯টার দিকে ওই জাঁককে ঘিরে মাছ ধরতে নামার প্রস্তুতি নেয় তারা। নদীতে প্রথমে নামেন মনছুর ও মুবিন। সেই মুহূর্তে চোরাবালিতে তলিয়ে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় তারা। বাকিরা নদীতে নামলেও দুইজন নিখোঁজ হয়ে পড়ায় তারা ঘাবড়ে গিয়ে তীরের কাছে ফিরে আসে।
চেয়ারম্যান মুন্না জানান, মাতামুহুরী নদীর আনিচপাড়া স্থানে দীর্ঘদিন ধরে একটি চক্র অবৈধভাবে শ্যালোমেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারণে সেখানে গভীর চোরাবালির সৃষ্টি হয়। সেই গভীর চোরাবালিতে তলিয়ে গিয়ে প্রাণ হারালো দুই যুবক।
চকরিয়া থানার নিয়ন্ত্রণাধীন মাতামুহুরী পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ মো. মিজানুর রহমান বলেন, স্থানীয়দের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হলে ফায়ার সার্ভিস ও ডুবুরিদলের সহায়তায় নিখোঁজের প্রায় সাত ঘণ্টা পর দুই যুবক মনছুর ও মুবিনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী দৈনিক আজাদীকে বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় চকরিয়া ফায়ার স্টেশনের কর্মী ও চট্টগ্রামের ডুবুরিদলের উদ্ধার তৎপরতায় দুই যুবকের লাশ উদ্ধারের পর আইনগত প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।