মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরি ও সবার আগে টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করা। ইনজুরি কাটিয়ে তামিম ইকবালের ফিরে আসা, সাথে সেঞ্চুরি। প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকার চাইতে ৬৮ রানে এগিয়ে থাকা। এরপর চতুর্থ দিনের শেষ বেলায় শ্রীলংকার দ্বিতীয় ইনিংসে দুই উইকেট তুলে নেওয়া। সবমিলিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের গত দুদিন বেশ ভালই কেটেছে বাংলাদেশের। শেষ দিনেও থাকছে উত্তেজনা। কারণ এখনো ঠিক বলা যাচ্ছে না কী হতে পারে চট্টগ্রাম টেস্টের ফলাফল। কে হাসবে শেষ হাসি। নাকি ড্র নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হবে দুই দলকে। ফলে নানা সমীকরণের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা চট্টগ্রাম টেস্টের শেষ দিনের উত্তেজনা যে মাঠ ও মাঠের বাইরে দুই দেশের দর্শকের মাঝে থাকছে তা নিশ্চিত বলা যায়।
প্রথম ইনিংসে শ্রীলংকার ৩৯৭ রানের জবাবে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ৪৬৫ রানে। শ্রীলংকা গতকাল দিন শেষ করে ২ উইকেটে ৩৯ রান নিয়ে। ৮ উইকেট হাতে নিয়ে লংকানরা পিছিয়ে এখন ২৯ রানে। ফলে আজ টেস্টের শেষ দিনে এগিয়ে থেকেই মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তবে শেষ দিনে কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যাট করতে হবে লংকানদের।
আগের দিনের ৩ উইকেটে ৩১৮ রান নিয়ে গতকাল চতুর্থ দিন শুরু করে বাংলাদেশের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান মুশফিক এবং লিটন দাশ। দুজন এগিয়ে যাচ্ছিলেন একই গতিতে। কিন্তু ম্যধাহ্ন বিরতি পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন থাকলেও এরপর আর একসাথে চলতে পারলেন না দুজন। মুশফিক আগের দিনের হাফ সেঞ্চুরিটাকে সেঞ্চুরিতে নিয়ে গেলেও আগেই থামতে হয়েছে লিটন দাশকে। যদিও মুশফিকের আগেই সেঞ্চুরি পাওয়ার পথে ছিলেন লিটন কুমার দাশ। কিন্তু ৮৮ রানে বাজে এক শট খেলে তিনি শেষ করে দেন নিজের সম্ভাবনা। প্রথম সেশন নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাটালেও দ্বিতীয় সেশনে রানের গতি নিয়ে ভাবার আগেই জোড়া ধাক্কা। লাঞ্চের পর প্রথম বলেই আউট লিটন। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরে করা কাসুন রাজিথার বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন তিনি। থামে ১৮৯ বলে ৮৮ রানের ইনিংসটি।
এরপর উইকেটে আসেন আগেরদিন ইনজুরির কারণে মাঠে ছেড়ে যাওয়া তামিম। ততক্ষণে অবশ্য মুশফিক টেস্টে ৫ হাজার রান পূরণ করে ফেলেছেন। জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উপস্থিত সামান্য দর্শক তখন যেন একটু নড়েচড়ে বসেছিল। কারণ এরপর তামিমের সামনে যে ৫ হাজার রান পূরণের পালা। কিন্তু হতাশ করলেন তামিম। রাজিথার পরের বলেই বোল্ড হয়ে সে সম্ভাবনাকে কবর দিয়ে দিলেন তামিম। আগের দিনের ১৩৩ রানের সাথে আর কোনো রান যোগ না করেই ফিরলেন তিনি। এরপর মুশফিক ও সাকিবের জুটিতে লিড নিয়ে চারশ পেরিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। শুরু থেকেই খানিকটা নড়বড়ে থাকা সাকিব পারলেন না নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে। আসিথা ফান্র্ান্ডোর করা শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে ক্যাচ দেন উইকেট রক্ষকের হাতে। ফিরেন মাত্র ২১ রান করে।
এরপর মুশফিকের প্রতিরোধের দেয়ালে ফাটল ধরে চা বিরতির পর। লাসিথ এম্বুলদেনিয়াকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে থামে মুশফিকের ১০৫ রানের ইনিংসটি। এই ইনিংস খেলতে মোকাবেলা করেছেন ২৮২ বল। আর উইকেটে ছিলেন ৪৪৯ মিনিট। ইনিংসে বাউন্ডারি ছিল মাত্র ৪টি। সেঞ্চুরি ছোঁয়ার ইনিংসে এত কম বাউন্ডারি নেই বাংলাদেশের আর কোনো ব্যাটসম্যানের। শেষ দিকে তাইজুল ইসলামের ২০ রানের সুবাদে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থামে ৪৬৫ রানে। শরীফুল আহত হয়ে ফিরে গেলে বাংলাদেশকে অল আউট ঘোষণা করা হয়।
৬৯ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ ভালোভাবেই করেছিলেন দুই লংকান ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে ও ওয়াদা ফার্নান্দোর জুটিতে। দ্বাদশ ওভারে তাইজুলের থ্রো সরাসরি স্টাম্পে লাগায় রান আউট হয়ে ফিরেন ওশাদা ফার্নান্দো। তিনি করেন ১৯ রান। এরপর নিজের দ্বিতীয় ওভারে বল করতে এসে তাইজুল বোল্ড করেন নাইটওয়াচম্যান এম্বুলদেনিয়াকে। এখনো ২৯ রানে পিছিয়ে থাকা শ্রীলংকা আজ মাঠে নামবে নতুন আশা নিয়ে। অধিনায়ক করুনারত্নে অপরাজিত আছেন ১৮ রানে।