লোহাগাড়ায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বাস্থ্য ও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা।
অধিকাংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে মিছিল সহকারে এসে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
কোনো কোনো প্রার্থী মোটরসাইকেল শোভাযাত্রাও করেছেন।
এসময় প্রার্থীদের সাথে আসা দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে বেশিরভাগের মুখে মাস্ক ছিল না।
মনোনয়ন জমা দিতে আসা অধিকাংশ প্রার্থীর মুখেও মাস্ক দেখা যায়নি। বেশির ভাগ প্রার্থী আচরণ ও স্বাস্থ্যবিধির প্রতি তোয়াক্কা করেননি।
ফলে স্বাস্থ্য ও আচরণবিধি মেনে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসা প্রার্থীরা কিছুটা অস্বস্তিবোধ করেন।
লোহাগাড়া উপজেলা নির্বাচন অফিস সূত্রমতে, আগামী ২০ অক্টোবর লোহাগাড়া সদর, আমিরাবাদ ও আধুনগর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
আজ বুধবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ছিল প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন।
আজ সকাল থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত চেয়ারম্যান, সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত নারী সদস্য প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৩ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আধুনগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, সাধারন সদস্য পদে ৩৯ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১০ জন এবং আমিরাবাদ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ৮ জন, সাধারণ সদস্য পদে ৫৫ জন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য পদে ১১ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, চেয়ারম্যান প্রার্থী শাহাব উদ্দিন চৌধুরী, নুরুচ্ছফা চৌধুরী, এস এম ইউনুচ ও নুরুল কবিরসহ অধিকাংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে মিছিল সহকারে নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে আসেন। কেউ কেউ মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে আসেন।
তবে পুলিশের হস্তক্ষেপে প্রার্থীদের সাথে আসা কর্মী-সমর্থকরা রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রবেশ করতে পারেনি।
চেয়ারম্যান প্রার্থীদের সাথে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা ও মিছিল সহকারে আসা নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশির ভাগের মুখে মাস্ক ছিল না।
অনেক প্রার্থীকেও মাস্কবিহীন অবস্থায় নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে দেখা গেছে। প্রার্থীদের এসব মিছিল ও মোটর শোভাযাত্রার কারণে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাশাপাশি এলাকায় করোনার সংক্রমণের ঝুঁকিও তৈরি করছে বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
আচরণ ও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মিছিল সহকারে মনোনয়নপত্র জমা দিতে আসার বিষয়ে লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, “মিছিল হলো জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি মাধ্যম। তারপরও আচরণবিধির প্রতি লক্ষ্য রেখে কর্মী-সমর্থকদের নিষেধ করেছিলাম। তারা উৎসাহিত হয়ে মিছিল করেছে। মিছিল নিয়ে আমি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত গিয়েছি। মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় আচরণবিধি মেনে জমা দিয়েছি। সেখানে আমরা কয়েকজন ছিলাম।”
লোহাগাড়া সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নুরুচ্ছফা চৌধুরী বলেন, “আমরা মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময় মিছিল করেছি কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শুধু আমরা কয়েকজন ছিলাম। আর রিটার্নিং অফিসার নিষেধ করায় মনোনয়ন জমা শেষে আর কোনো মিছিল করিনি।”
আমিরাবাদ ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ প্রার্থী এস এম ইউনুচ বলেন, “মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়ার সময় ৪০-৪৫ জন কর্মী-সমর্থক আমার সাথে ছিল। তারা নির্বাচন কার্যালয়ের সামনে পর্যন্ত গেছে। আর রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন জমা দেয়ার সময় আমরা কয়েকজন ছিলাম। এতে আচরণ বা স্বাস্থ্যবিধি ভঙ্গ হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।”
লোহাগাড়ায় দায়িত্বপ্রাপ্ত (সংযুক্ত) বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফয়সাল আলম জানান, অধিকাংশ চেয়ারম্যান প্রার্থী আচরণ ও স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করেছে। তারা মিছিল সহকারে মনোনয়নপত্র জমা দিতে এসেছেন। তবে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় প্রত্যেক প্রার্থীর সাথে কয়েকজন করে ছিল। মনোনয়নপত্র গ্রহণ করার সময় প্রার্থীদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। ফলে তারা মনোনয়ন জমা দিয়ে ফিরে যাওয়ার সময় আর মিছিল করেনি। এখন থেকে কোনো প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”