লোহাগাড়ায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে চলছে ৪০ প্রাথমিক বিদ্যালয়

মোহাম্মদ মারুফ, লোহাগাড়া | শনিবার , ১৯ জুলাই, ২০২৫ at ১০:৩৬ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়া উপজেলায় ৪০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। এসব বিদ্যালয় চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে। এতে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম। এছাড়া দিন দিন বিদ্যালয়গুলোতে কমছে শিক্ষার গুণগত মানও। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে লোহাগাড়া উপজেলা। শিক্ষার আলো ছড়াতে উপজেলায় রয়েছে ১০৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যা ৪টি ক্লাস্টারে ভাগ করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক। সহকারী শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে চলছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। উপজেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৯ হাজার ৫৭৭ জন।

প্রধান শিক্ষকবিহীন কয়েকটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একাধিক সহকারী শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, প্রধান শিক্ষক না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা বিদ্যালয়গুলোর পাঠদান থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কার্যক্রম সামলাচ্ছেন। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসেবে যারা দায়িত্ব পালন করছেন, তারাও সহকারী শিক্ষক। তাই অনেক ক্ষেত্রেই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে থাকা শিক্ষককে বিদ্যালয়ের অন্য সহকারী শিক্ষকদের সঠিকভাবে পরিচালনা করতে গিয়ে চরম বেগ পেতে হচ্ছে। অনেক সহকারী শিক্ষকই ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের নির্দেশনা মানতে অনীহা প্রকাশ করেন। যার ফলে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া মারাত্মকভাবে বিঘ্ন ঘটছে। তাই বিদ্যালয়গুলোতে দ্রুত প্রধান শিক্ষক পদায়ন খুবই জরুরি।

প্রধান শিক্ষকবিহীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা জানান, এসব বিদ্যালয়ে যারা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে রয়েছেন, তারা মূলত বিদ্যালয়েরই একজন সহকারী শিক্ষক। বেশিরভাগ সময় তারা দাপ্তরিক কাজে ব্যস্ত থাকেন। এ কারণে বিদ্যালয়ে নিয়মিত আসতে পারেন না। এছাড়া বিদ্যালয়ে অন্যান্য সহকারী শিক্ষকও তার নির্দেশনা সঠিকভাবে মানছেন না। ফলে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখায় সমস্যা হচ্ছে। তাই দ্রুত এসব বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষক পদায়ন করে শিক্ষার গুণগত মান ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

মধ্য লোহাগাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শাহিন আক্তার জানান, একজন একসাথে দুটি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক কষ্ট হচ্ছে। ২০২০ সাল থেকে এ দায়িত্ব পালন করে আসছি। কোনো পদোন্নতি এখনো পাইনি। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষার মান আরো ত্বরান্বিত হবে।

বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি লোহাগাড়া উপজেলা শাখার সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম জানান, যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান শিক্ষক নেই সেগুলোতে অচিরেই প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া জরুরি। কারণ বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের সময় অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়। লোহাগাড়ায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শূন্যপদে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হলে শিক্ষার মান আরো প্রসার হবে। বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রধান শিক্ষকেরা প্রশাসনিক ও একাডেমিক দায়িত্ব পালন করেন। প্রধান শিক্ষক না থাকলে শিক্ষার পাশাপাশি প্রশাসনিক কার্যক্রমও ব্যাহত হয়।

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুল খালেক জানান, প্রধান শিক্ষক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার কেন্দ্রবিন্দু। সেক্ষেত্রে পদটি শূন্য থাকলে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় বিঘ্নিত ঘটার পাশাপাশি নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিদ্যালয়ে শিক্ষার মানোন্নয়ন ও সুন্দর পরিবেশে ফিরে আনতে প্রধান শিক্ষকের বিকল্প নেই। আশা করছি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

লোহাগাড়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইবনে মাসুদ রানা জানান, আগামী মাসে (আগস্ট) সমন্বয় সভায় বিষয়টা উপস্থাপন করা হবে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুপারিশ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকা বিদ্যালয়ের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসকল মসজিদের সভাপতি হবে প্রশাসনের কর্মকর্তারা : ধর্ম উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধকাপ্তাই হ্রদ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা