লোহাগাড়ায় জনপ্রিয় হচ্ছে জৈব সার

বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্য, বাণিজ্যিকভাবেও তৈরি হচ্ছে

লোহাগাড়া প্রতিনিধি | সোমবার , ১৪ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

লোহাগাড়ায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। ব্যবহারে সফলতা, কম দাম, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী হওয়ায় কৃষকের কাছে রাসায়নিকের বিকল্প এই সার ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এজন্য দিন দিন এই সারের উৎপাদন ও চাহিদা বাড়ছে।
জানা যায়, উর্বর মাটিতে ৫ শতাংশ জৈব পদার্থ থাকার কথা। এতে মাটিতে পানির ধারণক্ষমতা ও বায়ু চলাচলের সুযোগ বাড়ে। কিন্তু দেশের বেশিরভাগ এলাকায় মাটিতে জৈব পদার্থের পরিমাণ মাত্র ১-২ শতাংশ। তাই মাটিতে জৈব সারের ব্যবহার বাড়ালে মাটির প্রাকৃতিক উর্বরতা বাড়বে। জৈব সার মাটিকে
নরম করে এবং পানির ধারণক্ষমতা বাড়াতে ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন অণুজীবের বসবাসের পরিবেশ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে ক্রমে ভূমির উর্বরতা কমে যেতে থাকে।
সরেজমিনে গতকাল দেখা যায়, উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মৌলানা পাড়ায় ৬ শতক জায়গায় ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সুপার অর্গানিক ফার্টিলাইজার নামে জৈব সারের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। স্থানীয় কাইছার খান সিদ্দিকী নামে এক যুবক উক্ত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পড়ালেখা শেষ করে তিনি বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২২ বছর চাকরি করেছেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা ও স্থানীয় কৃষকের মাধ্যমে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যে চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে স্থায়ীভাবে থেকে নিজ এলাকায় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে স্থাপন করেন জৈব সার কারখানা। এর আগে তিনি গাজীপুর এগ্রিকালচার ইনস্টিটিউট থেকে এক মাসব্যাপী হাতে-কলমে জৈব সার তৈরির প্রশিক্ষণ নেন। এরপর অভিজ্ঞতার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে জৈব সার তৈরির কারখানা পরিদর্শন করেন।
তিনি জানান, জৈব সার তৈরিতে উপাদান হিসেবে দেশি গরুর গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, মাছের নাড়িভুঁড়ি, ছাই ও লিকুইড ফার্টিলাইজার ব্যবহার করা হয়। প্রতিটি উপাদান সংমিশ্রণ করে ক্রাশিং ও নিটিং মেশিনের মাধ্যমে প্রক্রিয়া করে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা হয় জৈব সার। প্রক্রিয়া শেষে দুই থেকে আড়াই মাসে প্রায় ১০০ টন জৈব সার তৈরি হয় তার কারখানায়। চাহিদা অনুযায়ী সারের উৎপাদন বাড়বে।
তার কারখানায় উৎপাদিত জৈব সার প্রতি কেজি ১৫ টাকায় বিক্রি করা হয়। বর্তমানে ১০ জন শ্রমিক কারখানায় কর্মরত আছেন। অনলাইন মার্কেট ও স্থানীয় কৃষকের কাছে এই সার বিক্রি করা হয়। জমিতে জৈব সার ব্যবহার করে নিরাপদ ফসল উৎপাদনে বিপ্লব ঘটাতে চান তিনি। দামে সস্তা ও অধিক কার্যকর জৈব সার ব্যবহার করে ইতোমধ্যে অনেক কৃষক উপকৃত হয়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার উৎপাদিত জৈব সার পরীক্ষা করে গুণগত মান ভালো পেয়েছেন। কারখানাটি সরকারি অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।
স্থানীয় কৃষক শাহাব উদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে ১৪ শতক জমিতে শাক-সবজি চাষাবাদ করেছেন তিনি। বীজ বপনের ১৫ দিনে শাকের ভালো ফলন পেয়েছেন। খরচও কমেছে। রাসায়নিক সার ব্যবহার করলে লাগত ২৫ দিন। জৈব সার ব্যবহারে জমির গুণগত মানও ভালো রয়েছে। তার দেখাদেখিতে অনেকে জমিতে জৈব সার ব্যবহার করছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্য পেতে মাটিতে জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর বিকল্প নেই। তাই বর্তমানে জৈব সার দিয়ে ফসল ফলানোর প্রক্রিয়া জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাটির গঠন ও গুণাগুণ ঠিক রাখতে হলে জৈব সার ব্যবহার করে মাটিকে উৎপাদনক্ষম করতে হবে। তাই জৈব সার তৈরি ও সংরক্ষণের ব্যাপারে কৃষকদের যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএক স্ট্যান্ডে এত স্যালাইন!
পরবর্তী নিবন্ধআর্জেন্টিনা-ব্রাজিল পতাকার রঙে পাহাড়ের তিন সেতু