লোহাগাড়া উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে নিয়মিত গণশুনানি চালু হওয়ায় সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি অনেকাংশে কমে এসেছে। সরাসরি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে নিজেদের অভিযোগ ও সমস্যার কথা বলতে পারায় একদিকে যেমন জনদুর্ভোগ কমছে, অন্যদিকে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হচ্ছে। সাধারণ মানুষ ও প্রশাসনের মধ্যে তৈরি হওয়া আস্থার এই সেতুবন্ধন লোহাগাড়ার সেবা প্রাপ্তির চিত্র বদলে দিচ্ছে। জানা যায়, গণশুনানি হলো এমন একটি মাধ্যম যেখানে জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট সমস্যা, অভিযোগ বা মতামত প্রশাসনের কাছে সরাসরি উপস্থাপন করা হয়। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে শোনেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে কিংবা প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সরেজমিনে তদন্তের মাধ্যমে দ্রুত সমাধানের ব্যবস্থা নেন। প্রচলিত দাপ্তরিক জটিলতা ও দীর্ঘসূত্রতা এড়িয়ে দ্রুততম সময়ে সেবা নিশ্চিত করতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন মুঠোফোন, খুদে বার্তা, সরাসরি সাক্ষাৎ ও লিখিতভাবে অসংখ্য অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে অনেক সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয় এবং অবশিষ্ট অভিযোগগুলো প্রতি বুধবার আয়োজিত গণশুনানির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়। চলতি বছরের ১৫ জুলাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে মো. সাইফুল ইসলাম যোগদানের পর থেকে এ পর্যন্ত ৬১টি সমস্যা নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি নিষ্পত্তি করা হয়েছে, ১১টি বর্তমানে তদন্তাধীন এবং ১০টির বিষয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চলমান রয়েছে। গণশুনানির মাধ্যমে সমাধান হওয়া উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে–জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিরসন, বিভিন্ন ধর্মীয় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মেটানো এবং এলাকার সামাজিক সমপ্রীতি বজায় রাখা।
গত বুধবার গণশুনানি কার্যক্রম সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে শুরু হওয়া এই গণশুনানি চলে দুপুর পর্যন্ত। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জায়গা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে আসা উভয়পক্ষের বক্তব্য শোনছেন ইউএনও। অভিযোগগুলো মনোযোগ দিয়ে শোনার পর কার্যকর সমাধানও প্রদান করা হয়। যা ভুক্তভোগীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এছাড়া জনদুর্ভোগ সমাধানে সরেজমিনে গিয়ে সরাসরি সমস্যার সমাধান করা ও স্থানীয়দের স্বস্তি ফিরিয়ে আনার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ভূমিকাকে স্থানীয়রা প্রশংসা করছেন।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আসহাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এই ধরনের গণশুনানি স্থানীয় প্রশাসনের সাথে জনগণের দূরত্ব কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নিয়মিত ও কার্যকরভাবে গণশুনানি চালু থাকলে লোহাগাড়ায় জনদুর্ভোগ আরো কমবে এবং প্রশাসনিক সেবায় ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে। সবমিলিয়ে লোহাগাড়ায় ইউএনও’র গণশুনানি এখন সাধারণ মানুষের আস্থার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়েছে। যেখানে কথা বলার সুযোগ মিলছে, আর সেই কথার বাস্তব প্রতিফলনও দেখা যাচ্ছে।
ইউএনও মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গণশুনানির মুল লক্ষ্য হচ্ছে জনগণের সমস্যা জনগণের সামনে স্বচ্ছতার সাথে সমাধান করা। এতে অনিয়ম কমে, জবাবদিহিতা বাড়ে ও দালালচক্রের দৌরাত্ম্য হ্রাস পায়। জনগণ যেন সঠিক সময়ে সঠিক সেবা পায়, সেই লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে। গণশুনানিতে পাওয়া অভিযোগগুলোর তালিকা সংরক্ষণ করা হচ্ছে। যেসব সমস্যা তৎক্ষণিক সমাধান সম্ভব নয়, সেগুলোর অগ্রগতি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে।












