লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে গত দুই বছরে বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন প্রায় ৮ হাজার রোগী। চিকিৎসাসেবার পাশাপাশি সাধারণ রোগীরা পেয়েছেন ওষুধ ও চশমা। সপ্তাহের শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত এই চিকিৎসাসেবা প্রদান করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০ থেকে ৩০ জন রোগী চক্ষু চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেন।
জানা যায়, লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নির্ধারিত একটি কক্ষে চক্ষু বিষয়ক আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা সজ্জিত কমিউনিটি আই সেন্টার অবস্থিত। ২০২২ সালের ১৫ জুন এর কার্যক্রম শুরু হয়। যেখানে চক্ষু বিষয়ে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স শান্তা বড়ুয়া ও রোমানা এরশাদ চক্ষু সেবায় সহায়ক হিসেবে কর্মরত আছেন। চক্ষু বিষয়ে প্রশিক্ষিত স্টাফ নার্সদের সহায়তায় ইন্টারনেট ও অত্যাধুনিক সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। ফলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত বেইজ সেন্টারে অবস্থানরত চক্ষু বিশেষজ্ঞের সাথে অনলাইনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমন্বিত উন্নত চক্ষু চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। সেবা নেয়া রোগীদের অনলাইনে নিবন্ধন করে রাখা হয়। যাতে পরবর্তী সময়েও আগের ব্যবস্থাপত্র দেখে চিকিৎসা দেয়া যায়।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কমিউনিটি আই সেন্টারে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবার মধ্যে রয়েছে চোখের ছানি অপারেশন, দৃষ্টি পরীক্ষা ও চশমা প্রদান, গ্লুকোমা রোগ, ডায়াবেটিস জনিত চক্ষু রোগ, শিশু চক্ষু রোগ, রেটিনার রোগসমূহ, চোখের বিভিন্ন আঘাত জনিত সমস্যা, চোখের কর্ণিয়া সমস্যা, নেত্রনালীর রোগসহ চোখের অন্যান্য রোগ।
গত বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙের কমিউনিটি আই সেন্টারের সামনে অপেক্ষা করছেন বেশ কয়েকজন চক্ষু রোগী। রোগীর সিরিয়াল অনুযায়ী ভেতরে ঢুকে পর্যায়ক্রমে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা সত্তরোর্ধ্ব রোগী আমান উল্লাহ জানান, বয়সের ভারে ঠিকমতো চোখে দেখতে পান না। মাঝে মাঝে দুচোখ চুলকায় ও পানি পড়ে। আগে একবার চোখের অপারেশনও হয়েছে। কমিউনিটি আই সেন্টারে চিকিৎসাসেবা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন তিনি।
কমিউনিটি আই সেন্টারে চিকিৎসা নিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, এক সময় চোখের চিকিৎসার জন্য জেলা ও উপজেলা সদরের প্রাইভেট হাসপাতালে যেতে হতো। এতে ভোগান্তির কমতি ছিল না। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে উন্নত চক্ষুসেবা ও পরামর্শ পেয়ে খুশি তারা।
কমিউনিটি আই সেন্টারের দায়িত্বে থাকা স্টাফ নার্স শান্তা বড়ুয়া জানান, রোগীরা তাদের চোখের সমস্যা নিয়ে এখানে আসেন। এরপর তাদের সাথে কথা বলে মূল সমস্যা নির্ণয় করা হয়। পরে সেসব সমস্যাগুলো অনলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকদের কাছে পাঠান। তারা সেখান থেকে অনলাইনে ব্যবস্থাপত্র পাঠিয়ে দেন। সেটা অনুযায়ী রোগীদের বিনামূল্যে ওষুধসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রদান করা হয়। এছাড়া কারো জটিল সমস্যা হলে রোগীর সাথে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলে ব্যবস্থাপত্র দেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। এরচেয়ে বেশি জটিল সমস্যা হলে রোগীকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়।
লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মো. হানিফ জানান, অন্ধজনের চোখে আলো দেওয়াই এই প্রকল্পের কাজ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙে অন্য চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি এই সেবাও দেয়া হচ্ছে। এতে গ্রাম–গঞ্জের সাধারণ হতদরিদ্র রোগীরাও বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসহ ওষুধ ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম পাচ্ছেন।