লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনা থেকে মানুষ মুক্তি চায়

| বুধবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:২১ পূর্বাহ্ণ

তেলের মূল্য বৃদ্ধি, পরিবহন খাতে ভাড়া বৃদ্ধি, সকল পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অসহনীয় লোডশেডিংয়ের কারণে দেশের জনগণ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। অনেকের অভিযোগ, জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিতা নেই। এ অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। গত ১৬ এপ্রিল দৈনিক আজাদীতে ‘তাপদাহে লোডশেডিং যন্ত্রণা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, তাপদাহ, সাথে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা।

চট্টগ্রামে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। রমজান ও পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষের জীবনযাত্রার ব্যস্ততায় তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ের প্রভাব পড়েছে ব্যাপকভাবে। তীব্র গরমের মাঝে নগরীর অনেক এলাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিংয়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। যখন তাপদাহে মানুষ হাঁপিয়ে উঠছে ঠিক তখনই নগরীর অনেক এলাকায় এক ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে। বিভিন্ন এলাকার ভুক্তভোগীরা এমন তথ্য আজাদীকে ফোন করে জানিয়েছেন। পিডিবির সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরাও তীব্র গরমে লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন। পিডিবি জানিয়েছে, কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে।

অন্যদিকে তাপদাহে ক্রেতারা বড় বড় এসিযুক্ত শপিং মলে চলে যাওয়ায় ক্রেতা সংকটে ভুগছেন ফুটপাতের হকার ও ছোট আকারের দোকানিরা। গরম ও লোডশেডিংয়ে সর্বত্র হাঁপিয়ে উঠেছে মানুষ। নগরীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভুক্তভোগীরা ফোনে লোডশেডিংয়ের কথা জানান আজাদীকে।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অসহনীয় গরমের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের লোডশেডিং। যতটুকু খবর পাওয়া গেছে, শহরের তুলনায় গ্রামগঞ্জে লোডশেডিংয়ের ভয়াবহতা বেশি। সেখানে পল্লী বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। তীব্র গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। অসুস্থ হয়ে পড়ছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন দিনে ও রাতের বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎ থাকছে না। কিছু কিছু সময় লোডশেডিং এর কথা মাথায় থাকলেও প্রায় সময়ই বিদ্যুৎ সরবরাহ পাচ্ছেন না। সঞ্চালন ব্যবস্থায় ত্রুটি, গ্রিড বিগড়ে যাওয়া এবং ট্রান্সফরমার বিকল হওয়ার ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। যদিও পিডিবি দাবি করে থাকে, দেশে লোডশেডিং বলতে কিছুই নেই। জরাজীর্ণ সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে হচ্ছে। এ কারণে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে। তাঁরা বলেন, গত শুক্রবার চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কিছুটা কম ছিল। এটি আমাদের কোনো সমস্যা না। আমাদের কয়েকটি পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রয়েছে। এই কারণে আমরা প্রয়োজনীয় লোড পাচ্ছি না। তাই বিদ্যুতের কিছুটা ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।

বিদ্যুৎ খাতকে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। এই খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বিতরণ ও সঞ্চালন ব্যবস্থার উন্নয়নে বড় বাজেটও ধরা হয়েছে। দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। গ্রাহকরা বলছেন, হাজার হাজার কোটি টাকার সুফল কই। ক্ষুব্ধ অনেকে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্যুতের কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিচ্ছেন।

সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বেশকিছু দিন ধরে তীব্র গরম অনুভূত হচ্ছে। প্রকৃতিতে যেন গ্রীষ্মের ভয়াবহ তাপদাহ চলছে। তাপদাহে নাকাল দেশের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। এই গরমের তীব্র দাহকালে বিদ্যুতের লোডশেডিং যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। যদিও আমাদের দেশে লোডশেডিং একটি নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা। এই ভ্যাপসা গরমে লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষজন। শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের অবস্থা কিছুটা ভালো হলেও গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দাদের অভিযোগ, বিদ্যুৎ একবার গেলে আর আসে না। শহরনগর থেকে গ্রামজনপদ সর্বত্রই হঠাৎ এ বিদ্যুৎ সংকট। এ গরমে টিকে থাকা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে আর এতেই শুরু হয়ে গেছে অসহনীয় লোডশেডিং। এর নেই কোনো শিডিউল। ইচ্ছেমতো বিদ্যুৎ নিচ্ছে আর দিচ্ছে।

ভুক্তভোগীরা বলেন, একদিকে এতো গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন অন্যদিকে এমন লোডশেডিং বিড়ম্বনা। দিনের বেলা লোডশেডিং মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু রাতের বেলা এ লোডশেডিং কোনোভাবেই মেনে নেওয়ার মতো নয়। এভাবে চলতে থাকলে মানুষ নিমিষেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। তাই লোডশেডিংয়ের বিড়ম্বনা থেকে মানুষ মুক্তি চায়। মানুষ চায় এমন দুর্ভোগ থেকে মুক্তি।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে