লোকাল বাস নেই, অবৈধ সিএনজি টেক্সির দৌরাত্ম্য

কাপ্তাই সড়কে প্রতিদিন ঘটছে দুর্ঘটনা

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৫০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে রেজিস্ট্রেশনবিহীন সিএনজি চালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলেছে। ২০০৯ সালে যাত্রীবাহী লোকাল বাস চলাচল বন্ধের পর থেকে এমন পরিস্থিতি শুরু হয়েছে। একদিকে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশার দৌরাত্ম্য অন্যদিকে অদক্ষ চালকের কারণে ৫২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সড়কটিতে দিন দিন বাড়ছে যানজট, নিত্য ঘটছে দুর্ঘটনা।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বাস টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম-চন্দ্রঘোনা, চট্টগ্রাম-ধামাইর হাট ও চট্টগ্রাম-কাপ্তাই এই তিন রুটে যাত্রীবাহী বিরতিহীন সার্ভিস চালু রয়েছে। এর আগে এই সড়কে লোকাল বাস চালু থাকলেও তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে স্বল্প দূরত্বে চলাচল করা যাত্রীদের ভরসা সিএনজিচালিত অটোরিকশা। এতে সড়কে দিন দিন বাড়ছে সিএনজি অটোরিকশা। এখন পর্যন্ত কাপ্তাই সড়কে অন্তত ১০ হাজারের অধিক সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। যার মধ্যে শতকরা ৬০ ভাগই নম্বরবিহীন এবং বাকিগুলো রেজিস্ট্রেশনবিহীন।
অধিকাংশক্ষেত্রে ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকরাই চালাচ্ছেন এ সব অটোরিকশা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এ সব যানবাহনে দুর্ঘটনা ঘটে বেশি। দুর্ঘটনার পর পুলিশ অভিযান চালালেও, পরে আবারো সড়কে ফিরে আসে এ সব যানবাহন। এজন্য, সড়কে প্রশাসনের নজরদারি না থাকাকেই দায়ী করছেন তারা।
জানা গেছে, চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে গেল বছর অন্তত ৫০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে ১৫ জন। আহত হয়েছে শতাধিক যাত্রী। শুধুমাত্র গত দেড় মাসে এ সড়কে ১০টি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে ৮ জন। আহত হয়েছে ১০ জন। সর্বশেষে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি কন্যার জন্মনিবন্ধন আনতে গিয়ে রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পাপন বড়ুয়া (৪০) নামে একজন প্রকৌশলী। সম্প্রতি এই সড়কে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়াদের মধ্যে সাজিয়া খাতুন (৫৫), সাজেদুল ফয়সাল (২৩), আকতার হোসেন (৯), মন্টু দে (৬৫), মো. নেজাম (৩৫), জামাল উদ্দিন (৫০) উল্লেখযোগ্য। অবৈধ যানবাহনমুক্ত হয়ে সড়কটিতে নিরাপদ হবে চলাচল, এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।
সরেজমিন দেখা গেছে, স্বল্প দূরত্বের যাত্রীরা চলাচল করছেন সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। পেছনের আসনে ঠাসাঠাসি করে বসতে হচ্ছে তিনজনকে। চালকের পাশে অবৈধভাবে অতিরিক্ত আসন সংযোজন করে বসানো হচ্ছে দুইপাশে দুইজন। ফলে একটি অটোরিকশায় যাত্রী থাকে পাঁচজন। অনেক সময় অতিরিক্ত আরও দুই বা তারও বেশি যাত্রী ঝুলিয়ে নেওয়া হয়, সাথে পণ্যও পরিবহন করা হয়। অদক্ষ চালকরাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালাচ্ছেন এ সব গাড়ি।
রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাটের ওষুধের দোকানদার খোকন দে জানান, সড়কে একসময় বাস চলাচল ছিল। তখন সড়কে এতো গাড়ির চাপ ছিলো না। এ সব বাস বন্ধের পর থেকেই সড়কে বেড়েছে অটোরিকশা। বেড়েছে দুর্ঘটনা।
চন্দ্রঘোনার কদমতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. রেজাউল করিম বলেন, নানা কাজে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়, এতে সড়কে সিএনজি অটোরিকশাই একমাত্র ভরসা। আগে লোকাল বাস, টেম্পোসহ অনেক ধরণের গণপরিবহন ছিল। এতে ভাড়াও ছিল কম, চলাচলও ছিল নিরাপদ।
মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন নামে এক ব্যাংকার বলেন, গণপরিবহন না থাকায় সিএনজি অটোরিকশায় ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। মেক্সিমাম ক্ষেত্রেই এ গাড়িগুলোর স্টিয়ারিং থাকে অদক্ষ চালকদের হাতে। তারা কে কার আগে যাবে, কে কাকে অতিক্রম করবে, এই প্রতিযোগিতায় দুর্ঘটনার সৃষ্টি করছে। আবার যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা ও অবৈধ সিএনজি স্ট্যান্ডের কারণে যানজট তো আছেই।
এই প্রসঙ্গে রোয়াজারহাট অটোরিকশা সমবায় সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম মনু বলেন, প্রশিক্ষিত চালক ও বৈধ গাড়ি নিশ্চিত করা গেলে এই সড়কে দুর্ঘটনা কমবে। এক্ষেত্রে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে আমরা সাহায্য করবো।
এদিকে লোকাল সার্ভিস বন্ধ করা প্রসঙ্গে জেলা পরিবহন বাস ও মিনিবাস ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইউনুস বলেন, ২০০৮ সাল থেকেই লোকাল বাসে যাত্রী কমতে থাকে। তখন হাতেগোনা কয়েকজন যাত্রী পাওয়া যেত। দিনদিন লোকসান বাড়ায় মালিকরা বাস চলাচল বন্ধ করে দেন।
তিনি বলেন, লোকাল বাস আবার চালু করার পক্ষে আমরাও। এ জন্য প্রশাসনকে পথ তৈরি করতে হবে। যে হারে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে তাতে বাস চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। এ জন্য অবৈধ অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে প্রশাসনকে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস বলেন, স্বল্প দূরত্বে চলাচলের জন্য বাস না থাকায় বিপাকে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা। ফলে বেড়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও অদক্ষ চালকের সংখ্যা। তবে এ সবের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া লোকাল বাস আবার চালুর ব্যাপারে পরিবহন সংগঠনগুলো উদ্যোগ নিলে আমরা সহায়তা করবো।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবাসিক এলাকা ও কৃষি জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান হবে না
পরবর্তী নিবন্ধখেলাপি মামলা হয় প্রতিদিন গড়ে পাঁচটি, নিষ্পত্তি তিনটি