লোকসংখ্যা ৭০ লাখ, গণশৌচাগার ২৭

চট্রগ্রাম নগর সাতটির অবস্থা নাজুক আট বছরে কমেছে ১৬টি

আজাদী প্রতিবেদন | শনিবার , ২৮ জানুয়ারি, ২০২৩ at ৭:৫১ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালে নগরে গণশৌচাগার ছিল ৪৩টি। গত আট বছরে তা কমে হয়েছে ২৭টি। অথচ এ সময়ে নগরে বেড়েছে জনসংখ্যা। অর্থাৎ জনসংখ্যা বাড়লেও স্বাস্থ্যসম্মত নগরের উপকরণ গণশৌচাগার বাড়েনি চট্টগ্রাম শহরে। বরং কমেছে। এছাড়া বিদ্যমান গণশৌচাগারগুলোর পরিবেশও মানসম্মত নয়। এর মধ্যে আবার সাতটির অবস্থা খুব নাজুক।

এ অবস্থায় নগরবাসী বলছেন, দীর্ঘক্ষণ ঘরের বাইরে থাকা লোকজনকে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষায় চসিকের উচিত গণশৌচাগার নির্মাণে জোর দেয়া। গণশৌচাগারের অভাবে চলার পথে অনেক সময় প্রস্রাব আটকে রাখতে হয় বলে অভিযোগ করেন তারা। চিকিৎসকরা বলছেন, দীর্ঘক্ষণ প্রস্রাব আটকে রাখলে কিডনিতে পাথর ও তলপেটে ব্যথাসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ে।

চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম দৈনিক আজাদীকে বলেন, পাবলিক ডিমান্ড (জনগণের চাহিদা) থাকলে আমরা গণশৗচাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি করব। কোথায় কোথায় এ গণশৌচাগার নির্মাণ করা যায় সে বিষয়ে প্রয়োজনে জরিপ করা হবে। বিভিন্ন মার্কেটের আওতাভুক্ত যেসব গণশৌচাগার রয়েছে তা সংশ্লিষ্ট মার্কেটের দোকানমালিক সমিতির মাধ্যমে পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

বেড়েছে জনসংখ্যা, কমেছে গণশৌচাগার : বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০১৪ সালে বস্তিশুমারির তথ্য প্রকাশ করে। তখন চট্টগ্রাম শহরের জনসংখ্যা বলা হয়, ২৫ লাখ ৯২ হাজার ৪৩৯ জন। বিবিএস এর সর্বশেষ জনসংখ্যার তথ্য (২০২২) অনুযায়ী, শহরের জনসংখ্যা ৩২ লাখ ২৭ হাজার ২৪৬ জন। অর্থাৎ ৮ বছরে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৮০৭ জন। আবার চসিকের বিভিন্ন নথিপত্রে শহরের জনসংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৬০ লক্ষ (আনুমানিক)। এছাড়া আরো ১৫ লক্ষ (আনুমানিক) ভাসমান জনসংখ্যা আছে। ওই হিসেবে স্থায়ী এবং ভাসমান মিলে নগরে জনসংখ্যা ৭৫ লক্ষ।

এদিকে শহরের জনসংখ্যা বাড়লেও গত কয়েক বছর ধরে চসিকের তত্ত্বাবধানে গণশৌচাগারের সংখ্যা কমেছে। চসিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ভবন, সড়ক ও নালা নির্মাণের জন্য ছয়টি গণশৌচাগার ভাঙা হয়। পরবর্তীতে ২০১৯ ও ২০২১ সালে চেরাগী পাহাড় সংলগ্ন জামালখান ও আন্দরকিল্লায় আরো দুইটি গণশৌচাগার ভাঙা হয়। এর মধ্যে আন্দরকিল্লাহ শ্রী গুরুধামের গেট সংলগ্ন গণশৌচাগারটি সরিয়ে নেয়ার দাবিতে ২০২০ সালের ১৩ অক্টোবর তৎকালীন চসিক প্রশাসককে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল।

এছাড়া জহুর হকার্স মাকের্টের একটি, দামপাড়া পুলিশ লাইন ও আবদুল মাবুদ সওদাগর হাটের তিনটি গণশৌচাগার চসিকের তত্ত্বাবধানে থাকলেও পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়।

জানা গেছে, শহরে গণশৌচাগারের অভাবের বিষয়টি উল্লেখ আছে চসিকের এক প্রতিবেদনেও। ২০২০ সালে বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টরকে লেখা এক পত্রে চসিকের বক্তব্য ছিল, শহরে প্রতিদিন সন্নিহিত উপজেলা ও দূরদূরান্ত থেকে প্রচুর মানুষ চিকিৎসা, ব্যবসা, অফিসআদালতের জরুরি কাজ ও অন্যান্য প্রয়োজনে আগমন করে থাকে। এ সকল অস্থায়ীভাবে অবস্থানকারীদের জন্য পরিচ্ছন্ন পরিবেশে শৌচকার্য সম্পাদন নিশ্চিতে জোন ভিত্তিক আরো বেশি পরিমাণে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা প্রয়োজন।

বিদ্যমান গণশৌচাগারের অবস্থান : চসিকের তত্ত্বাবধানে থাকা গণশৌচাগারগুলোর মধ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) আওতায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বেসরকারি দুস্থ স্বাস্থ্য কেন্দ্র (ডিএসকে) এর মাধ্যমে সাতটি পরিচালিত হয়। এগুলো হচ্ছেকেসি দে রোড, লালদীঘির পাড়, অক্সিজেন মোড়, বিবির হাট গরুর বাজার, শাহ আমানত সংযোগ সড়ক, কাপ্তাই রাস্তার মাথা ও ২নং গেট শেখ ফরিদ মার্কেট সংলগ্ন এলাকা। ২০১৭ সালে একটি চুক্তির আওতায় গণশৌচাগারগুলো নির্মাণ করে ডিএসকে।

বাকি ২০টি গণশৌচাগারের অবস্থান হচ্ছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগ সংলগ্ন, বহাদ্দারহাট কাঁচা বাজার, সাগরিকা গরুর বাজার, ফিরিঙ্গি বাজার, বন্দরটিলা, অলংকার মোড়, পাহাড়তলী কাঁচা বাজার, নিমতলা, শেরশাহ কলোনি, দেওয়ানহাট পোর্ট সিটি, বায়েজিদ বোস্তামী, দেওয়ানহাট শপিং কমপ্লেঙ, রিয়াজুদ্দিন বাজার, বিআরটিসি বাসস্টেশন সংলগ্ন, কোর্ট বিল্ডিং সাবরেজিস্ট্রার অফিস সংলগ্ন, বঙিরহাট, পৌর জহুর হকার্স মার্কেট (মসজিদ সংলগ্ন), ঈদগাহ, লালদীঘি মসজিদ সংলগ্ন ও ফিশারিঘাট বাজার সংলগ্ন এলাকায়।

এছাড়া একসময় ঠিকদারের মাধ্যমে পরিচালনা করলেও হাজী আবদুল আলী শপিং আর্কেড, চিটাগাং শপিং কমপ্লেঙ, কর্নেল হাট মার্কেট, চকবাজার আধুনিক চক সুপার মার্কেট, শাহ আমানত মার্কেটে অবস্থিত পাঁচটি গণশৌচাগারে ইজারাদার নিয়োগ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চসিক।

বেশিরভাগ পরিবেশসম্মত নয় : চসিকের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থাকা বেশিরভাগ গণশৌচাগার পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত নয় বলে অভিযোগ আছে এসব গণশৌচাগার ব্যবহারকারীর। এর মধ্যে বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার, শেরশাহ কলোনি, অলংকার মোড়, দেওয়ানহাট পোর্ট সিটি, ঈদগাহ, বিআরটিসি বাস স্টেশন সংলগ্ন গণশৌচাগার ও কর্নেল হাট গণশৌচাগারের অবস্থা বেশি খারাপ।

গণশৌচাগারগুলোতে আছে পানির সমস্যা। কোনোটির দরজাজানালা ভাঙা, নাই দরজার হুকও। বেশিরভাগের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন। নেই পর্যাপ্ত আলোবাতাস। কয়েকটিতে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নাই। যেগুলোতে আছে সেখানকার পরিবেশও নারীবান্ধব নয়। মাঝেমধ্যে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত টয়লেট পুরুষও ব্যবহার করে।

মোজাহিদুল ইসলাম নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের এক কর্মকর্তা বলেন, যেসব গণশৌচাগার আছে সেগুলোর পরিবেশ ভালো না। আরো অনেক বেশি উন্নত করতে হবে। জয়নাব নামে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বলেন, নারীবান্ধব গণশৌচাগারের অভাব আছে শহরে। যেগুলো আছে সেখানকার পরিবেশ উপযুক্ত নয় বলে নারীরা সেগুলো ব্যবহার করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না। এ সমস্যা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া উচিত।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজনবল সংকটে হিমশিম বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস
পরবর্তী নিবন্ধডাম্পার চালক নিহত, আহত ৮