প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ লে. কর্নেল (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তম আজ ৫ আগস্ট বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। তিনি স্ত্রী, ২ ছেলে ও ১ কন্যাসহ বহু আত্মীয়স্বজন রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে প্রেসিডেন্সি পরিবার গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
মরহুমের মরদেহ কাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় স্কুল প্রাঙ্গণে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে।
তাঁর নামাজে জানাজা বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর ওয়াসা মোড়স্থ জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা শেষে বৃহস্পতিবার আসরের নামাজের পর তাঁকে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টের সামরিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আগামীকাল স্কুল বন্ধ থাকবে।
লে. কর্নেল (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ ছিলেন বাংলাদেশের ইতিহাসের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি গোপনে পাকিস্থান সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারত হয়ে সিলেটে এসে ১ নম্বর সেক্টরের অধীনে সাব-সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একের পর এক সফল অভিযান পরিচালনা করেন। তাঁর দুর্ধর্ষ নেতৃত্বে অসংখ্য সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় লাভ করে। তাঁর এই অসাধারণ সাহস ও রণকৌশলের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ সরকার তাঁকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করে, যা মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সামরিক সম্মাননা।
মুক্তিযুদ্ধের পর তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন এবং দেশ গঠনে নিজেকে উৎসর্গ করেন। সামরিক জীবনের পর তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে পা রাখেন এবং প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন। এখানে তিনি তাঁর সামরিক জীবনের শৃঙ্খলা, দেশপ্রেম এবং নেতৃত্বের গুণাবলী দিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দেন। একজন অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি কেবল শিক্ষাদান করেননি, বরং শিক্ষার্থীদের মধ্যে সততা, নৈতিকতা এবং নেতৃত্ব গুণের বিকাশ ঘটিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এক শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করে গেছেন।
তাঁর প্রজ্ঞা, সততা এবং স্নেহময় আচরণ প্রেসিডেন্সি পরিবারের সকল সদস্যের কাছে তাঁকে প্রিয় করে তুলেছিল। স্কুলের প্রতিটি অনুষ্ঠানে তাঁর উপস্থিতি ছিল এক অনুপ্রেরণার উৎস।
প্রেসিডেন্সি পরিবার লে. কর্নেল (অব.) জিয়াউদ্দিন আহমেদ বীর উত্তমের শোকসন্তপ্ত পরিবার, বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী এবং তার প্রজ্ঞা ও সাহসে প্রভাবিত সকলের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছে। তাঁর আদর্শ এবং রেখে যাওয়া মূল্যবোধ আগামী প্রজন্মের জন্য পাথেয় হয়ে থাকবে। মহান আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফিরদাউস নসিব করেন।