লেভেলক্রসিংয়ে মানুষের প্রাণহানি কমাতে হবে

| সোমবার , ১৮ আগস্ট, ২০২৫ at ৮:৪৬ পূর্বাহ্ণ

তুলনামূলক দুর্ঘটনা কম ও ভ্রমণ আরামদায়ক বলে রেলে ভ্রমণের প্রতি যাত্রী সাধারণের পক্ষপাত বেশি। কিন্তু রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রেলের সুনামকে ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে। ১৬ আগস্ট দৈনিক আজাদীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, চট্টগ্রামকক্সবাজার ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথ জুড়ে ৭২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৫৬টি পুরোপুরি অরক্ষিত। দেশের প্রধান পর্যটন শহর কক্সবাজার রুটের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি রেলপথে এতগুলো লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান না থাকায় ক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হচ্ছে। ছোটবড় দুর্ঘটনা ঘটছে প্রায় সময়। এই দীর্ঘ রেলপথে মাত্র ১৬টি ক্রসিংয়ে গেট বা গেটম্যান আছেন বলে জানান রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের পরিবহন বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। দোহাজারীকক্সবাজার রেলপথের আনুষ্ঠানিক যাত্রার পৌনে দুই বছরের মাথায় চট্টগ্রামকক্সবাজার রেলপথে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে, যার জন্য মূলত অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংকেই দায়ী করা হচ্ছে। গত এক বছরেই চট্টগ্রামকক্সবাজার রেলপথে গেটম্যান বিহীন অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলোতে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে ১৭ জনের। এ ছাড়াও ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বেশ কয়েকবার।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২৩ সালের ১১ নভেম্বর প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বহুল প্রতীক্ষিত ১০২ কিলোমিটার দীর্ঘ দোহাজারীকক্সবাজার রেললাইনটি উদ্বোধন করা হয়। ১ ডিসেম্বর থেকে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকাকক্সবাজার ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এরপর থেকেই দেশের মানুষের কাছে দিনদিন ট্রেনে করে দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজার ভ্রমণের আকর্ষণ বাড়ছে। রেলওয়ের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ থেকে খবর নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার পর্যন্ত রেললাইন চালু হওয়ার পর থেকে অর্থবছরে (গত বছরের ১ জুলাই থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত) ঢাকাকক্সবাজার রুটে চলাচলরত দুই জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং চট্টগ্রামকক্সবাজার দুই জোড়াসহ চলাচলরত চার জোড়া ট্রেন থেকে প্রায় শত কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব আয় হয়েছে। অথচ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রেলপথের আনুষ্ঠানিক যাত্রার পৌনে দুই বছরের মাথায় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে, যার জন্য মূলত অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংকেই দায়ী করা হচ্ছে। সবশেষ গত ১ আগস্ট কক্সবাজারের রামু উপজেলার রশিদনগর এলাকায় একটি অনুমোদিত লেভেল ক্রসিং (যেখানে কোনো গেটম্যান নেই) পার হওয়ার সময় কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী ট্রেনের ধাক্কায় একটি সিএনজি টেক্সি দুমড়েমুচড়ে যায়। এতে সিএনজি চালকসহ চার যাত্রী নিহত হন।

অভিযোগ আছে, ক্রসিংগুলোর প্রতি রেল কর্তৃপক্ষের কোনো নজরদারি নেই। নেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। তাই এসব ক্রসিংয়ে যানবাহন চলাচলের সময় ব্যারিকেড দিতে দেখা যায় না, প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাব রয়েছে। এমনকি এসব ক্রসিংয়ের নিরাপত্তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষেরও কোনো মাথাব্যথাও নেই। তাছাড়া রেল ক্রসিং পার হওয়ার সময় বিভিন্ন যানবাহন ও জনসাধারণের মধ্যে বেপরোয়া মনোভাব কাজ করায় অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। বাসের সঙ্গে, কখনো মাইক্রোবাসসহ অন্য যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে এসব প্রাণহানি ঘটে। অথচ দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, এসব ক্রসিং নিরাপদ করার বিষয়টি রেল কর্তৃপক্ষের অগ্রাধিকারে নেই। রেল ক্রসিংয়ে দায়িত্বরত গেটম্যানরা যেন তাদের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে সে ব্যাপারে উদাসীনতা লক্ষ্যণীয়। রেলক্রসিংয়ে দিনের পর দিন দুর্ঘটনা ঘটে চলবে আর সেটা বন্ধ করতে কোনো পদক্ষেপ কেউ নেওয়া হবে নাতা নিতান্তই দুঃখজনক। এর দায় তো রেল কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারে না।

লেভেলক্রসিংয়ে মানুষের প্রাণহানি কমাতে হবে। কিন্তু লেভেলক্রসিংয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কেউ দায়িত্ব নিতে চাইছেন না। শুধু চট্টগ্রামকক্সবাজার রুট নয়, রেলওয়ের তথ্য অনুসারে সারাদেশে মোট রেলক্রসিংয়ের মধ্যে অনুমোদন নেই ১ হাজার ৩২১টির। এসব ক্রসিংয়ের বেশিরভাগই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সড়কে। আরও আছে অন্যান্য সংস্থার যেমন পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন এবং সওজ বিভাগের সড়কে লেভেলক্রসিং রয়েছে। সব মিলিয়ে দেশের ৮২শতাংশ রেলক্রসিংই অরক্ষিত। অবৈধ রেলক্রসিং বন্ধ করতে হবে। এখানে নিরাপদব্যবস্থা বাড়াতে হবে। লেভেল ক্রসিং গেট কমিয়ে আনা, গেটের মানোন্নয়ন, কোনো কোনো স্থানে ওভারপাস নির্মাণ জরুরিএসব বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। তবে দেশের অরক্ষিত ক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে