লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলের বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন ব্রাহ্মণবায়িয়ার যুবক নিজাম উদ্দিন। পরিবারের সবার ছোট ভাইকে হারিয়ে দিশেহারা গোটা পরিবার। ১২ বছর আগে ভাগ্য ফেরাতে লেবাননে পাড়ি জমান তিনি। শনিবার রাতে নিহত নিজামের বাড়ির লোকজন তার মৃত্যুর বিষয়টি জানতে পারে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার খাড়েরা গ্রামের মরহুম মোহাম্মদ আব্দুল কুদ্দুসের ছেলে। পাঁচ ভাই ও বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। তার মৃত্যুতে পুরো পরিবারেই নেমে এসেছে শোকের ছায়া। খবর বাংলানিউজের।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ২০০৪ সালে বাবা মারা যাওয়ার পর ভাই–বোনদের কাছে বড় হন নিজাম। পরিবারের ভাগ্য ফেরাতে ১২ বছর আগে ধার–দেনা করে প্রায় সাত লাখ টাকা ব্যয়ে তাকে লেবাননে পাঠানো হয়। তবে নিজামের ছিল না বৈধ কাগজপত্র। আর সে কারণেই তিনি সেখানে অবৈধভাবে থাকছিলেন। যখন যে কাজ পেতেন তা করতেন। কাগজপত্র না থাকায় ১২ বছরে একবারের জন্যও দেশে ফিরতে পারেননি তিনি।
এ সময়ের মধ্যেই তার মা ও এক বোন মারা যান। তাদের মৃত্যুর খবর শুনে দূর থেকে চোখের পানি ফেলা ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি নিজাম। পারেননি মা কিংবা বোনের মুখ শেষবারের মতো দেখতে। শনিবার বিকালে পরিবারের সদস্যরা খবর পান বৈরুতে কর্মস্থলে যাওয়ার পথে একটি কফিশপে অবস্থানকালে ইসরায়েলের বিমান হামলার শিকার হয়ে ঘটনাস্থলেই নিজাম নিহত হন।
নিহত নিজামের বড় বোন সাহেরা বেগম বলেন, নিজাম যখন ছোট তখনই বাবা মারা যান। তখন থেকে পরিবার অনেক আর্থিক কষ্টে দিন কাটায়। চাকরির জন্য সে ঢাকায় চলে যায়। যে টাকা বেতন পেত তা দিয়ে চলত না। তখন সে আমাকে বলে, আপা তুমি ঋণ করে হলেও আমারে বিদেশ পাঠাও।
তিনি বলেন, পরে সাত লাখ টাকা ঋণ করে তাকে বিদেশ পাঠাই। বৃষ্টি হলে ঘরের চাল দিয়ে পানি পড়ত। মনে করেছিলাম ভাইকে বিদেশ পাঠিয়েছি। টাকা দিলে নতুন ঘর তুলে ফেলব। সে সুখ আর কপালে জুটল না। বৈধ কাগজ না থাকার কারণে যে কাজ পেত, তাই করত। নিজাম প্রায়ই লেবানন থেকে কল করে বোনকে বলতেন, বুবু এত টাকা ঋণ করে গেলাম। ঋণের টাকাই শোধ করতে পারলাম না। এখন আর কয়টা দিন থাকি, ভালো কাজ পেলে ঋণের টাকা পরিশোধ করে বাড়িতে ঘর করব।
আক্ষেপ করে নিজামের বোন বলছিলেন, এর মধ্যে যে বোমা পড়ে মরে যাবে, আমরা তো কল্পনা করিনি। এখন সরকারের কাছে দাবি, আমার ভাইয়ের মরা মুখটা যেন একবার দেখতে পারি। তার মরদেহ দেশে আনার ব্যবস্থা করে দিন।
কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও শাহরিয়ার মুক্তার বলেন, আমরা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বর্তমানে তার মরদেহ লেবাননের স্থানীয় একটি হাসপাতালের হিমঘরে আছে। তার মরদহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। কোনো তথ্য পেলে তারা আমাদের জানাবে।