ভূমিহীন এবং গৃহহীনদের জন্য বাড়ি তৈরি করে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা এবং এই দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য গৃহ নির্মাণ ও ভূমি প্রদান করে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করা এদের প্রতি তাঁর আন্তরিকতা, ভালবাসা এবং তাঁর দরদী মনেরই প্রমাণ। বাড়িহীন ও ভূমিহীন এই জনগোষ্ঠীর দারিদ্রতার কারণে তাদের নিম্নজীবন মানের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর দরদী মনকে বেদনায় ভারাক্রান্ত করেছিল। তাঁর ঐকান্তিক ইচ্ছা ছিল ভূমিহীন ও গৃহহীন এসব মানুষের জন্য একটি নির্দিষ্ট ঠিকানার ব্যবস্থা করে দেওয়া। তাইতো তিনি দেশের চৌষট্টিটি জেলায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রতি পরিবারকে ২ শতক ভূমি সহ একটি করে পাকা ঘর তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনকে তা বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছিলেন। এই দরিদ্র মানুষের পরিবার পিছু একটি করে বাড়ি নির্মাণের বিষয়টিতে তাঁর আবেগ জড়িত। এটা ছিল তাঁর স্বপ্ন।
অত্যন্ত বেদনা ও ক্ষোভের সাথে বলতে হয়, প্রধানমন্ত্রীর এই স্বপ্ন, তাঁর আবেগ-অনুভূতি এবং ভাল মানুষীকে অসৎ আমলা এবং চৌর্যবৃত্তিতে এবং দুর্বৃত্তায়নে সিদ্ধহস্ত ঠিকাদারগণ বানচাল করে দিল। দেশের কোন কোন জেলায় এসব ঘর যেসব দরিদ্র মানুষের জন্য বরাদ্দ হয়েছিল সেসব ঘর নির্মাণের অতি স্বল্প সময়ে ধসে পড়ায় এবং কোন কোন ঘরে বরাদ্দপ্রাপ্তরা প্রবেশের আগেই বিপদজ্জনক ফাটল সৃষ্টি হওয়ায় এসব দরিদ্র মানুষের অন্তরের পুঞ্জীভূত আশাভঙ্গ হওয়ার ক্ষোভ ও বেদনা এবং তাদের অন্তরের গহীন থেকে উৎসারিত অভিশাপ মাখানো দীর্ঘশ্বাস এসব আমলা আর চৌর্যবৃত্তিতে পণরঙ্গম ঠিকাদারদের অভিশপ্ত করলেও তারা নিকট ভবিষ্যতে বুক ফুলিয়ে ঔদ্ধত্তের সাথে জনসমাজে, আমলা সমাজে এবং প্রশাসনের দপ্তরে দপ্তরে ধান্ধাবাজির জন্য ঘুরে বেড়াবে।
চৌর্যবৃত্তির মনোভাবাপন্ন ঠিকাদার যারা এসব গৃহ নির্মাণের কাজ পেয়েছিলেন তারা যেমন এই পুকুর চুরির হোতা, তেমনি তাদের কাজের তদারকি এবং কাজের মান সঠিক রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করা ছিল সংশ্লিষ্ট উপজেলার যে সব আমলাদের তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব পালন না করে ঠিকাদারদের কাতারে শামীল হয়েছেন। যেসব কর্মকর্তা-আমলারা এসব বাড়ি নির্মাণের তদারকীতে ছিলেন তাদের কয়েকজনকে ওএসডি করার মত শাস্তি দেওয়ার মাধ্যমে দেশের জনগণের আই ওয়াশ করার চেষ্টা করা হয়েছে। এ জাতীয় পুকুর চুরি যদি কোন সাধারণ নাগরিক করত তাহলে তার কি হতো? তাকে কোমরে রশি বেঁধে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে লাল দালানে চালান করে দেওয়া হত। ওএসডি করার মাধ্যমে এসব আমলাদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। ওএসডি থাকা অবস্থায় তারা উদ্বেগহীন ভাবে দিন কাটাবেন আর বিনা কাজে বেতন পাবেন। কিছু দিন পর তাদের অন্যত্র পোস্টিং হয়ে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্পের টাকা যারা নিম্ন মানের কাজের মাধ্যমে লুটপাট করে প্রধানমন্ত্রীকে অপমান করেছে এবং যারা তারা এসব বাড়ি বরাদ্দপ্রাপ্তদের প্রতারিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হল তা দেশবাসীর এখনো অজানা।
নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার, সয়েল টেস্ট না করা, ঘরের উচ্চতা ভূমির লেভেল থেকে প্রয়োজন মত উঁচু না করা, আলগা মাটির উপর ঘরের ভিত তৈরি করা, আরসিসি লিন্টেল এবং আরসিসি পিলার না দেওয়া – এসবই এসকল ঘরের ধ্বসে যাওয়ার এবং ফাটল ধরার মূল কারণ। এসব কাজের সাথে যারা জড়িত তারা হল, এই সব ঘরের ডিজাইনার, এস্টিমেটার, প্রকৌশলী, ঠিকাদারী এবং তদারকির জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত আমলাগণ। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন যারা অর্থ লোলুপতার বশবর্তী হয়ে এভাবে ধংস করে দিল তাদের কঠোর শাস্তির আওতায় আনা দেশবাসীর দাবী। বঙ্গবন্ধুর স্বল্পকালের শাসনামলে তিনি দুর্নীতিবাজ সরকারী আমলা-কর্মচারীদের ‘চাটার দল’ বলে আখ্যায়িত করতেন। আশ্রয়ন প্রকল্প-২ এর সাথে সংশ্লিষ্ট দুর্নীতিবাজরা ঐ ‘চাটার দলে’-রই উত্তরসুরী। এই দুর্নীতির সাথে যুক্তদের ওএসডি না করে তাদের বরখাস্ত করে আইন মোতাবেক একজন নগরিকের যেভাবে বিচার হয়, সেভাবে বিচারের কাঠগড়ায় হাজির করা হোক। আশ্রয়ন প্রকল্প-২ দুর্নীতি বিষয়টি তদন্ত ও বিচারের আয়োজনের ভার দুর্নীতি দমন কমিশনের উপর ন্যস্ত করা হোক।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আশ্রয়ণ প্রকল্প শুধু আপনার স্বপ্ন নয়, এদেশের হত দরিদ্র সকলেরই স্বপ্নের প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মত একটি মহৎ কাজের টাকা আত্মসাৎ করে যারা আপনার এবং দরিদ্র মানুষের স্বপ্ন ভঙ্গ করেছে তাদের কঠোর সাজার ব্যবস্থা করা দেশের মানুষের দাবী।
লেখক : সমাজকর্মী