সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হওয়া পাথর ৭ দিনের মধ্যে উদ্ধার করে আগের জায়গায় প্রতিস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একইসঙ্গে এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার বেঞ্চ কয়েকটি বিষয়ে রুলসহ এ আদেশ দেয়। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) পক্ষে রিট আবেদনটি করেন সরওয়ার আহাদ। শুনানি করেন মনজিল মোরসেদ। এর আগে বুধবার রাত ১০টা থেকে লুট হওয়া পাথর উদ্ধার করে ফের একই স্থানে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসন জানায়, লুট হওয়া পাথর উদ্ধারে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে অভিযান শুরু করেছে যৌথ বাহিনী।
সারারাত বিভিন্ন স্থানে পরিচালিত অভিযানে পাথরবোঝাই ১৩০টি ট্রাক জব্দ করা হয়। সব মিলিয়ে এই একদিনেই লুট হওয়া ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে ফের সাদাপাথর এলাকাসহ ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ফেলা হয়েছে। খবর বিডিনিউজের। গতকাল সকালে সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ সাংবাদিকদের বলেন, বুধবার রাত থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হয়েছে। এখনো চলছে। অভিযানে জব্দ করা পাথর আবার সাদাপাথরে নিয়ে রাখা হবে। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ ও গোয়াইনঘাটে দুটি তল্লাশি চৌকি স্থাপন করে পাথর তোলা বন্ধে সার্বক্ষণিক নজরদারি শুরু হবে।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ–কমিশনার (গণমাধ্যম) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, বুধবার রাত পৌনে ১১টা থেকে সিলেট–ভোলাগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের সালুটিকর এলাকায়, পরে সিলেট ক্লাবের সামনে তল্লাশি চৌকি বসিয়ে যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সিলেট শহরতলির বড়শালা এলাকায় যৌথ বাহিনী তল্লাশি চৌকি বসিয়ে অভিযান চালাচ্ছে। অভিযানে বিভিন্ন স্থান থেকে লুট হওয়া ১২ হাজার ঘনফুট পাথর জব্দ করে ফের সাদাপাথর এলাকাসহ ধলাই নদীর বিভিন্ন স্থানে ফেলা হয়েছে বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আজিজুন্নাহার।
এদিকে সিলেটের পর্যটনকেন্দ্র সাদাপাথর এলাকা থেকে বালু ও পাথর লুটপাটের ঘটনায় এক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোরে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি উজায়ের মাহমুদ আদনান। তিনি বলেন, উপজেলার পূর্ব ইসলামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলমগীর আলমকে তার বাসা থেকে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। আলমগীর আলম জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির স্থানীয় সরকারবিষয়ক সম্পাদক।
লুটের পাথর মাটি দিয়ে ঢাকছেন ব্যবসায়ীরা : সিলেটের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র ‘সাদাপাথর’ থেকে লুট হাওয়া পাথর উদ্ধারে প্রশাসনের অভিযান শুরু করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ক্র্যাশার মিল ব্যবসায়ীরা লুট করা পাথরের উপর বালু ও মাটি ফেলে আড়াল করার চেষ্টা করছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে সিলেট সদর উপজেলার ধোপাগুল লালবাগ, সালুটিকর ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ এলাকায় এই দৃশ্য দেখা গেছে।
অভিযান শুরুর পর থেকে এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অধিকাংশ ক্র্যাশার মিল বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। অনেক ক্র্যাশার মিল মালিক, বালু ও পাথর উত্তোলনের সঙ্গে জড়িতরা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান।
ভোলাগঞ্জের পাথর ভাঙার মিল এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, মিলের সামনে আমদানি করা পাথর রাখা হয়েছে। আর মিলের পেছনে থাকা লুট হওয়া পাথর বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো মিলে দ্রুত ভেঙে ফেলা হচ্ছে সাদাপাথরের লুট হওয়া পাথর। সদর উপজেলার ধুপাগুল–লালবাগ এলাকায় মিলের পাশে থাকা মাটি তোলে পাথরের উপর ফেলে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ধোপাগুল শহীদ মিনার এলাকায় মিলেও এ রকম দৃশ্য চোখে পড়েছে। তবে সাংবাদিক পরিচয় জেনে এ নিয়ে এলাকার বাসিন্দা কিংবা মিল কর্মচারী কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
একজন বাসিন্দা (৩০) বলেন, প্রশাসনের অভিযান শুরুর পর পাথর মিলের মালিকেরা লুট হওয়া পাথর নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সরকারি অভিযানের দলের সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিতে বালু বা মাটি দিয়ে উপরে প্রলেপ দিচ্ছেন। যাতে বালু বা মাটির স্তূপ বলে মনে হয়। কোনো কোনো মিলে পাথরগুলোকে কালো বা পুরাতন দেখানোর জন্য মাটি আর বালু একসঙ্গে লাগানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে সিলেট সদর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা খোশনূর রুবাইয়াৎ বলেন, আমাদের অভিযান চলমান আছে ওই এলাকায়। বালু–মাটি দিয়ে পাথর লুকালো তাদের বিরুদ্ধে অভিযান হবে। আমরা খবর পেয়েছি, সদর উপজেলার বিভিন্ন বাড়িতে পাথর লুকানো হচ্ছে। এসব পাথর উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলবে।
কোম্পানীগঞ্জের ইউএনও আজিজুন্নাহার বলেন, পাথর উদ্ধারে আমাদের অভিযান চলমান আছে। বালু বা মাটি দিয়ে লুকানো পাথর অভিযানকালে উদ্ধার করা হবে।