লিটনের নান্দনিকতা নাসুমের ঘূর্ণি

৬১ রানের জয়ে টি-টোয়েন্টির ছন্দে ফিরেছে বাংলাদেশ

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ৪ মার্চ, ২০২২ at ৫:৫৫ পূর্বাহ্ণ

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ বরাবরই কেমন যেন ছন্নছাড়া। তার উপর বিশ্বকাপের সুপার লিগ পর্বের ৫টি এবং নিজেদের মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচে হেরে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। টানা আটটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে হেরে বলতে গেলে বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাস ছিল একেবারে তলানিতে। চরম এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠার যখন চেষ্টা করছিল টাইগাররা ঠিক তখনই মুখোমুখি হতে হয় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের অন্যতম শক্তিশালী দল আফগানিস্তানের। যারা কিনা পরিসংখ্যান এবং সামর্থ সবদিক দিয়ে এগিয়ে। তবে পরিসংখ্যান আর মাঠের লড়াই যে ভিন্ন সেটা প্রমাণ করে দিল বাংলাদেশ। আফগানদের এক রকম উড়িয়ে দিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের জয়ের রথে চড়ল টাইগাররা। ব্যাট হাতে লিটন দাশের ঝড় আর বল হাতে নাসুম আহমেদের ঘূর্ণিজাদুতে কুপোকাত আফগানরা। ফলে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬১ রানের জয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা ভাল হয়নি। ১০ রানের মাথায় ফিরেন নাঈম। ২৫ রানে যেতে অভিষিক্ত মুনিম শাহরিয়ারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রশিদ খান। ১৮ বলে ১৭ রান করেন এই ওপেনার। এরপর লিটন দলকে টানতে থাকেন একপ্রান্ত আগলে রেখে। কিন্তু অন্য প্রান্তে ছিল তার সতীর্থদের আসা যাওয়া। কাইস আহমেদের বলে শর্ট ফাইন লেগে ধরা পড়েন সাকিব ৫ রান করে। একটা ছক্কা মেরেই থেমে যান অধিনায়ক মাহমুদউল্ল্লাহ। ১০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। আফিফ হোসেন এসে কিছুটা সঙ্গ দেন লিটনকে। শুরুতে একটু সময় নিলেও সময় গড়ানোর সাথে সাথে আগ্রাসী হয়ে উঠেন লিটন। ৩৪ বলে ক্যারিয়ারের পঞ্চম টি-টোয়েন্টি হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন লিটন। এরপর যখন আগ্রাসী হওয়ার চেষ্টা করছিলেন তখন ফজল হক ফারুকীর শিকারে পরিণত হন। ফিরে আসার আগে লিটন ৪৪ বলে দুটি ছক্কা ও চারটি চারের সাহায্যে ৬০ রান করে আসেন। এরপর রানের গতি বাড়াতে গিয়ে আউট হন আফিফ। দুইটি চারের ২৪ বলে ২৫ রান করে ধরা পড়েন নবির হাতে। ইয়াসির আলি ও মেহেদি হাসানের রান আউটে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৫৫ রানে। আফগানদের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন ফারুকি ও ওমরজাই। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাত টি-টোয়েন্টিতে এটাই বাংলাদেশের প্রথম দেড়শ ছোঁয়া সংগ্রহ।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৫৬ রান এখন কঠিন কোনো লক্ষ্য নয়। তার উপর দলটি যখন আফগানিস্তান তখন এই লক্ষ্য মোটেও কঠিন হওয়ার কথা নয়। কিন্তু সব অনুমানকে ভুল প্রমাণিত করে দিলেন বাংলাদেশের স্পিনার নাসুম আহমেদ। প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে বিপজ্জনক রহমানউল্ল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দেন নাসুম। ইয়াসিরের হাতে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন আফগান এই ওপেনার। তৃতীয় ওভারে তিন বলের জোড়া আঘাত নাসুমের। এবার তার শিকার হজরতুল্লাহ জাজাই ও অভিষিক্ত দারবিশ রাসুলি। আগের ওভারে জীবন পাওয়া জাজাই মিড অফে নাঈমের হাতে ক্যাচ দেন। আর সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরেন রাসুলি। নিজের তৃতীয় ওভারে চতুর্থ শিকার তুলে নেন নাসুম। এক্সাট্রা কাভারে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন করিম জানাত। পরের বলে রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান মোহাম্মদ নবি। না হয় ৫টি শিকার হতো নাসুমের। ২০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খাদের কিনারায় চলে যাওয়া আফগানিস্তানকে টেনে তোলার চেষ্টা করেন নবির এবং নাজিবউল্ল্লাহ জাদরান জুটি। এ দুজন ৩৭ রান যোগ করার পর সাকিব আল হাসানের বলে ১৬ রান করা নবি ফিরলে ভাঙ্গে এ জুটি। ৫৭ রানে ৫ উইকেট নেই আফগানদের। শেষ ১০ ওভারে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ১০৩ রান। কিন্তু নাজিবুল্লাহ-আজমতউল্লাহরা রান রেটের সাথে পাল্লা দিয়ে আর দৌড়াতে পারেনি। কারণ সাকিব-শরীফুলরা ততক্ষণে চেপে বসেছে আফগানদের ঘাড়ে। শেষ পর্যন্ত ৯৪ রানেই অল আউট হয়ে যায় আফগানিস্তান। তখনো ১৪ বল বাকি। নাজিবুল্লাহ ২৭ এবং আজমতউল্লাহ করেন ২০ রান। আফগানদের ১০ উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন বাংলাদেশের চার বাঁহাতি বোলার। ১০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সফলতম নাসুম। শরিফুল ৩ উইকেট নেন ২৯ রানে। সাকিব ২ উইকেট নেন ১৮ রানে। একটি উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার উঠেছে নাসুম আহমেদের হাতে। আগামীকাল শনিবার আফগানদের বিপক্ষে প্রথম টি-টোয়ান্টি সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ দল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচট্টগ্রাম কাস্টমসে ৪৯ লট পণ্যের নিলাম ১০ মার্চ
পরবর্তী নিবন্ধমাদক নিরাময় কেন্দ্রে জুয়ার আসর