লিজ ট্রাস হচ্ছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী অভিষেক আজ

২০ হাজার ভোটে হেরে গেলেন ঋষি

আজাদী ডেস্ক | মঙ্গলবার , ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ৩:৫৫ পূর্বাহ্ণ

যুক্তরাজ্যে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের নেতৃত্বের দৌড়ে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাককে হারিয়ে নতুন নেতা নির্বাচিত হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পর গতকাল সোমবার এ খবর জানিয়েছে বিবিসি। ট্রাসই হতে চলেছেন নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। আজ মঙ্গলবার তিনি ও বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্কটল্যান্ডের বালমোরালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের
সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। রানির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন জনসন। বিদায়ী ভাষণও দেবেন তিনি। এরপর রানির উপস্থিতিতেই নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে ট্রাসের অভিষেক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে ট্রাসকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন।
পার্টিগেট কেলেঙ্কারির কারণে বিরোধিতার মুখে পড়ে গত জুলাই মাসে দলীয় নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। তারপরই কনজারভেটিভ পার্টির নতুন নেতা নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় পার্টি নেতৃত্বের দৌড়ে ভোটাভুটি শেষ হয়। প্রায় দুমাস ধরে চলা নেতা নির্বাচনের এই প্রক্রিয়ায় চূড়ান্ত ধাপের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং সাবেক চ্যান্সেলর ঋষি সুনাক। প্রথম দিকের ভোটে ভারতীয় বংশোদ্ভুত ঋষি সুনাককেই এগিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছিল। এতে তিনিই প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বলে ধারণা জোরদার হচ্ছিল। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বদলেছে দৃশ্যপট। ভোটাররা বরিসের মন্ত্রিসভায় সুনাকের কার্যকারিতাও বিশ্লেষণ করে দেখেছে। যুক্তরাজ্যে মূল্যস্ফীতি বাড়ার সময় সুনাক চ্যান্সেলর অফ এঙচেকার হিসেবে তেমন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেননি। এমনকী সম্প্রতি লিজ ট্রাসের সঙ্গে মুখোমুখি টিভি বিতর্কে তার কর-হ্রাসর নীতির তীব্র সমালোচনাও করেছিলেন সুনাক। কেউ কেউ বলছেন, এসব কারণে ভোটারদের নিজের দিকে টানতে ব্যর্থ হয়েছেন সুনাক।
কনসারভেটিভ পার্টির সদস্যদের ভোটে শেষ পর্যন্ত জয়ী হয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস। তিনি ৮০ হাজার ৩২৬ ভোট পান, আর তার প্রতিদ্বন্দ্বী ঋষি সুনাক পান ৪৩ শতাংশ অর্থাৎ ৬০ হাজার ৩৯৯ ভোট। কনসারভেটিভ পার্টির ভোটের ফল ঘোষণার পর লিজ ট্রাস তার প্রথম ভাষণে বলেন, ব্রিটিশ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা এবং কর কমানোর জন্য তার একটি ‘বলিষ্ঠ পরিকল্পনা’ রয়েছে।
যুক্তরাজ্যের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মার্গারেট থ্যাচার। তিনি ১৯৭৯ সাল হতে টানা ১১ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। টেরিজা মে ২০১৬ সালে যুক্তরাজ্যের দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। লিজ ট্রাস হবেন যুক্তরাজ্যের তৃতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। ছাত্র জীবনের শুরুতে লিজ ট্রাস মধ্যপন্থী লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পরে তিনি ডানপন্থী কনসারভেটিভ পার্টিতে যোগ দেন। ২০১০ সালে তিনি প্রথম দল থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কনসারভেটিভ পার্টির পেছন সারি থেকে যেভাবে সরকারের শীর্ষ পদে তার দ্রুত উত্থান ঘটেছে, তা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বিস্মিত করেছে।
ট্রাসের জয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে ঋষি সুনাক এক টুইটে বলেছেন, কনজারভেটিভরা ‘একই পরিবার’। তাদের সবারই নতুন নেতার নেপথ্যে একতাবদ্ধ হয়ে থাকা দরকার। ট্রাসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বরিস জনসনও। নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লিজ ট্রাসকে প্রথমেই জ্বালানির বাড়তে থাকা দামের রাশ টেনে ধরার চাপে পড়তে হবে। এ বিষয়ে এক সপ্তাহের মধ্যেই একটি পরিকল্পনা ঘোষণার প্রতিশ্রুতি ট্রাস আগেই দিয়ে রেখেছেন। তবে পরিকল্পনার বিস্তারিত প্রকাশ করেননি তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যে নবনির্বাচিত টরি লিডার এলিজাবেথ ট্রাস এমপিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়েছেন। এক অভিনন্দন বার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আপনার নিয়োগ আপনার দেশকে অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার জন্য আপনার নেতৃত্বের প্রতি ব্রিটিশ জনগণের বিশ্বাস ও আস্থার প্রমাণ। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা এবং সহনশীলতার অভিন্ন মূল্যবোধে গভীরভাবে নিহিত বিদ্যমান ঐতিহাসিক সম্পর্কের কথা পুনর্ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন যে, বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং টেকসই উন্নয়নের ক্ষেত্রে জোরদার সহযোগিতা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হয়েছে। তিনি অত্যন্ত প্রশংসার সঙ্গে উল্লেখ করেন, সবকিছুর ঊর্ধ্বে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশ-ব্রিটিশ প্রবাসীরা দুই দেশের উন্নয়নে অভিন্ন সম্পদ হিসাবে কাজ করছেন।
যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে সাধারণত রানি এলিজাবেথ বাকিংহাম প্রাসাদে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেটিই রীতি। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম হচ্ছে। এই প্রথম ইংল্যান্ডের বাইরে কেউ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পদে নিযুক্ত হতে চলেছেন। চলাফেরায় অসুবিধার কারণে রানি এখন স্কটল্যান্ডের বালমোরাল প্রাসাদে। নতুন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী সেখানে গিয়ে রানির হাত থেকে নিয়োগপত্র নেবেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসেই মোজাম্মেলের এবার জমি দখলের চেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধসবুজ বনে নীলাভ পাখি