লিচু খেতে চাই বিশেষ সতর্কতা

মোঃ ইকবাল হোসেন | শুক্রবার , ৩০ মে, ২০২৫ at ৬:৩১ পূর্বাহ্ণ

ষড় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। এখানে প্রতিটা ঋতু ভিন্ন ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে বৈচিত্র্যময়। শীতের বৈচিত্র যেমন পিঠাপুলি, গ্রীষ্মের বৈচিত্র্য ফল। বৈশাখ এবং জৈষ্ঠ্য মাস নিয়ে গ্রীষ্ম ঋতু। গ্রীষ্মের এই কাঠফাটা গরমে শরীরে এবং মনে প্রশান্তি দেয় গ্রীষ্মের ফলের সমাহার। জৈষ্ঠ মাসকে বলা হয় মধুমাস। এই সময়ে বাহারি জাতের সুস্বাদু ফলের সমাহার থাকে। এই ফলগুলো যেমন মিষ্টি তেমনি পুষ্টিকর। সবধরনের ভিটামিন আর খনিজে ভরপুর এসব ফল। এরমধ্যে লিচু অন্যতম। আসুন জেনে নিই লিচু সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

লিচু স্বাদে ভরপুর পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ ফল। লিচুর ভিটামিন সি রক্তের শ্বেত কণিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। শরীরের ইম্যিউনিটি সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।

লিচুতে আছে শক্তিশালী ভাইরাস বিরোধী গুণাবলী। এর লিচিট্যানিন শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণকে প্রতিহত করে। লিচুতে পর্যাপ্ত পরিমাণে কপার আছে যা, শরীরে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে কোষে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি করে। আয়রন, ফলিক এসিড শরীরে লোহিত রক্ত কণিকা উৎপাদনে সহায়তা করে।

লিচুতে আছে ফ্ল্যাভানল, যা প্রদাহ কমায়। লিচুতে পর্যাপ্ত পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, ম্যাঙ্গানিজ, এবং কপার আছে। এসব মিনারেল হাড়ের যত্নেও সহায়ক।

লিচুর অলিগোনল নামের উপাদান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিইনফ্লুয়েঞ্জা হিসেবে কাজ করে। এ উপাদান রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, ত্বকে ক্ষতিকর অতি বেগুনি রশ্মির প্রভাব থেকে রক্ষা করে।

লিচুর অন্যতম উপাদান এপিকেচিন, যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে খুবই চমৎকার একটি উপাদান। এপিকেচিন রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি ডায়াবেটিসজনিত জটিলতাগুলো প্রতিরোধে দুর্দান্ত ভুমিকা পালন করে। তবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পাকা লিচুর চেয়ে কিছুটা কাঁচা লিচু বেশি কার্যকরী। রোগীদের জন্যও লিচু বেশ উপকারী ফল। তবে অতিরিক্ত পাকা লিচু খেলে ডায়াবেটিক ব্যক্তির ডায়াবেটিস বেড়ে যেতে পারে।

তবে লিচুতে হাইপোগ্লাইসিন নামে একটি রাসায়নিক থাকে, যা শরীরে শর্করা তৈরি রোধ করে। এটি আমাদের যকৃতে গ্লুকোজ উৎপাদন ও চর্বি ভাঙতে বাধা দেয়। তাই খালি পেটে অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে গিয়ে তা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তাই শিশুদের খালিপেটে কখনো লিচু দেওয়া যাবে না। হাইপোগ্লাইসিনের প্রভাবে শিশুর শরীরে হঠাৎ করে গ্লুকোজের অভাব দেখা দেয়। কিছু টক্সিন তৈরী হয়, টক্সিনগুলো মস্তিষ্কে চলে যায়। ফলে শিশুর মাথাব্যথা, বমি, ঘাম, খিঁচুনি বা অচেতন হয়ে পড়তে পারে। আধা পাকা ও কাঁচা লিচুতে এই সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এভাবে আক্রান্ত অর্ধেকেরও বেশি শিশু মারা যায়। তবে যেসব শিশু বেশি অপুষ্টির শিকার তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়

তাই বাচ্চাকে লিচু খাওয়ানোর সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে, লিচু যেন পাকা হয় এবং শিশু যেন অনেক্ষণ খালিপেটে থাকার পরে লিচু না খায়। ২১০ বছরের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে বেশি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

সতর্কতা:

) শিশুদের হাতে লিচু দেওয়ার আগে লিচু থেকে বিচিটা বের করে দিতে হবে। বাচ্চাদের গলায় লিচুর বিচি আটকে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। ২) ডায়াবেটিক ব্যক্তিরা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে দিনে ৬৭ টি লিচু খেতে পারবেন।

) যারা ওজন কমাতে চান তারাও পরিমিত পারিমানে লিচু খাবেন। ৪) প্রধান খাবারের পরপরই ফল খাওয়া উচিৎ নয়। এতে ওজন ডায়াবেটিস দুইটাই বেড়ে যাবে। তাই স্ন্যাক্স হিসাবে ফল খাবেন। ৫) বিকালের পরে আর কোন ফল নয়, যা খাওয়ার তা বিকালের আগেই খাবেন। ৬) প্রয়োজনে একজন পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিবেন।

লেখক: জ্যেষ্ঠ পুষ্টি কর্মকর্তা,

চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতাল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজলান্তর
পরবর্তী নিবন্ধঅকশান গ্রন্থে রয়েছে প্রেমের পরিপূর্ণতা ও প্রতিবন্ধকতার অন্তর্দ্বন্দ্ব