লাল পাহাড়ের দেশে যা/ রাঙ্গামাটির দেশে যা– -/ইত্থাক তুকে মানাইছে না রে /ইক্কেবারে মানাইছে না রে।/ লাল পাহাড়ি দেশে যাবি/ হাঁড়ি আর মাদল পাবি/ মেয়ে মরদের আদর পাবি রে/ ও নাগর ও নাগর।
হ্যাঁ সেই মেয়ে মরদের আদরের প্রত্যাশায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাচ ২৮ এর এবারের আনন্দ ভ্রমণ লাল পাহাড়ের দেশে রাঙামাটির আরণ্যক হলিডে রিসোর্ট ও বার্গি লেক ভ্যালিতে।
রেডিসন ব্লু’র এর সামনে থেকে আমাদের দুটি বাস সকালে নির্ধারিত সময়ে ছুটে চলে ‘গ্রামছাড়া ওই রাঙা মাটির পথ’ এ। বাস চলা শুরু হলেই সবার হাতে হাতে সকালের নাস্তার প্যাকেট। রাউজানে হয় চা বিরতি। পাহাড়ি উঁচু –নীচু, আঁকা–বাঁকা সর্পিল রাস্তা পেরিয়ে আমরা কাঙ্ক্ষিত রাঙামাটি শহরের কাপ্তাই লেকের তীরে সেনানিবাস এলাকায় গড়ে উঠা আরণ্যক হলিডে রিসোর্টে পৌঁছি। প্রাকৃতিক নির্মল পরিবেশে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই রিসোর্টে রয়েছে ভাস্কর্য, ফুলের বাগান, প্যাডেল বোট, রেস্টুরেন্ট, সুইমিং পুল, কফিসপ, শিশুদের জন্য বিভিন্ন ধরনের রাইড, খেলাধুলার ব্যবস্থা ও বিচ্ছিন্ন একটি দ্বীপ ‘হ্যাপী আইল্যান্ড’। হ্যাপী আইল্যান্ডে অবশ্য আলাদা টিকেট নিয়ে বোট যোগে যেতে হয়। ওখানে রয়েছে ওয়াটার ওয়ার্ল্ড, পার্ক, রাইড ও সুইমিংপুল ও কফিসপ। আরণ্যক রিসোর্টে বিভিন্ন পয়েন্ট পরিদর্শন ও ফটোসেশন করে আমাদের মূল স্পট বার্গি লেক ভ্যালির উদ্দেশ্যে রওনা দিই।
রাঙামাটির সদর উপজেলার দেলিবাগান, মানিকছড়ি মুখ, আসামবস্তি কাপ্তাই সড়কে কাপ্তাই লেকের পাড়ে রাঙামাটি শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এই পর্যটন কেন্দ্রটি অবস্থিত। ১০ একর জমির ওপর বিস্তৃত জায়গায় পর্যটনকেন্দ্রটিতে রয়েছে রেস্তোরাঁ, পিকনিক স্পট, কায়াকিং ও ক্যাম্পিংয়ের ব্যবস্থা।
হ্রদের পাড়ে তৈরি করা হচ্ছে দৃষ্টিনন্দন রিসোর্ট। রয়েছে পাহাড়িদের বাসস্থানের আদলে তৈরি একটি মাচাং ঘর, যা পর্যটকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় রাঙামাটিতে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর ঐতিহ্যকে। খাবারের তালিকায় বার্গি পাখির মাংস না থাকলেও সুস্বাদু হাঁস ও পাহাড়ি মুরগীর মাংস, শীতকালীন সবজি ও মিষ্টি দই। বিকালের নাস্তার ব্যবস্থাও এই রেস্তোরাঁয়, ছিল জিলাপি ও পুরি, তবে সিলেটি পুরি নয় রাঙ্গামাটির বিশুদ্ধ ডাল পুরি। দুপুরে রসনা তৃপ্তির পরেই কাপ্তাই লেকে নৌকা ভ্রমণ।
দুটি ইঞ্জিন বোট আমাদের নিয়ে যাচ্ছে লেকের অদূরে। শীতের উত্তরীয় হাওয়া ছুঁয়ে আছে লেকের নীল জল, পাহাড় পেরিয়ে কাছে–দূরে কেবল নীল জলরাশি। জলরাশির মধ্যভাগে জেগে আছে ছোট ছোট সবুজ দ্বীপ। ঘণ্টাখানেক নৌকা ভ্রমণ শেষে ফিরে আসি বার্গি ভ্যালির তীরে। ততক্ষণে প্রস্তুত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ ও গানের শিল্পীরা। রাঙামাটির সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বর্তমান সময়ের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন রিংকু গ্রুপ। তিন শিল্পী যথাক্রমে বর্ষা চাকমা, এশা ত্রিপুরা ও রনাল চাকমা একেক পর পাহাড়ি গান, আধুনিক গান, আঞ্চলিক গান, ব্যান্ডের গান ও ছায়াছবির গান গেয়ে আনন্দ উল্লাসে আমাদের মাতিয়ে রাখে। গানের তালে তালে যে বন্ধুরা “ঝুম বালিকা ঝুম বালিকা ঝুমা ঝুমা লে” স্টাইলে অসাধারণ যে উরা ধুরা নাচ নেচেছে তাদের নাম নাই বললাম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বার্গি রেস্টুরেন্টে নাস্তা পর্ব, তারপরে গাড়ি ধরে চট্টগ্রামের পথে। জয়তু ব্যাচ ২৮।