লাল পাহাড়ের গুহা

শিবুকান্তি দাশ | বুধবার , ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ at ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ

একটা ছায়া।ছায়াটা মানুষের মনে হয়। কিন্তু মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না। অনেক দূর থেকে দেখছে বলে হয়ত মানুষটাকে দেখা যাচ্ছে না। মিন্টু আর গিট্টু। দুই বন্ধু। তারা বেড়াতে গিয়েছে মিন্টুর মামার বাড়িতে। গিট্টু হচ্ছে মিন্টুর বাল্যবন্ধু। দুজনের পাশাপাশি বাড়ি। একই স্কুলে পড়ে। ওরা বেরিয়েছিল দুপুরের খাবার খেয়ে। ওদের ছোট মামা বারণ করেছিল বের না হতে। বিকেলে এক সাথে বের হবে বলে। ওরা কথা শোনেনি। মামাকে বাদ দিয়ে নিজেরাই মাষ্টারি করে।ওরা প্রথমে বাজারে গিয়েছিল। বাজার থেকে ওদের প্রয়োজনীয় টুকটাক জিনিষপত্র ক্রয় করেছে। ওদের যে কখন কি লাগে বলা মুশকিল।

দুই বন্ধু প্ল্যান করে মামা বাড়ি গিয়েছে। লাল পাহাড়ে একটা গুহা রয়েছে। সেই অনেক পুরানো কথা। সেখানে দুস্যরা নাকি এক সময় লুটপাট করে মানুষের সোনাদানা টাকা পয়সা দামি জিনিষ পত্র নিয়ে গুহার মধ্যে রেখে দিত। লাল পাহাড়ের পাদদেশে ছোট একটি গ্রাম। সেই গ্রামে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর। তার মধ্যে মিন্টুর মামাদের বাড়িও। মাটির গুদাম ঘর। টিনের ছাউনি। বর্ষাকালে টিনের চালে বিষ্টির রিনিঝিনি শব্দে মন নেচে উঠে।

ওরা বাজার থেকে বেরিয়ে অনেক দূর হেঁটেছে। পাহাড়ের গোড়ায় একটা বিশাল বট গাছ। গাছের নিচে এলাকার লোকজন ছায়ার জন্য দিনের বেলায় জড়ো হয়। গল্প গুজব কত কথা হয়।

মিন্টু বলল,গিট্টু বটগাছের নিচে একটু জিরিয়ে নিই। ক্লান্ত লাগছে।

আরে একটু পর সন্ধ্যা হয়ে গেলে গুহায় ঢুকবো কি করে। আর ওখানে দিনের বেলায় কেউ যায় না। আমরা অন্ধকারে কি, গিট্টুর কথাটা শেষ করার আগেই মিন্টু বলল, আরে আমরা কি বেড়াতে যাচ্ছি নাকি। অন্ধকারে গেলেই তো আমরা সাকসেসফুল ।

আরে আমাদের সাথে কি আলো আছে যে অন্ধকারে গুহায় পথ দেখব।

মিন্টু এক গাল হেসে গিট্টুকে তিরস্কারের ভঙ্গিতে পেণ্টের পেছনের পকেট থেকে টর্সলাইট টা দেখিয়ে বলল, তুই খেয়াল করিসনি দোকান থেকে এটা কিনে নিলাম।

গিট্টু আর কোন কথা না বাড়িয়ে বটগাছের মোটা এক শিড়রে ধপাস করে বসে পড়ল। এ সময় সেখানে দু’জন লোক বসা ছিল তারা মাঠে কৃষি কাজ করছিল। জিরিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়াবে। ওরা দু’জনকে এলাকায় নতুন দেখে জানতে চাইল কোথায় যাবে তারা। মিন্টু বলল আমরা গুহা দেখতে আসছি।

গুহা ? ওরে বাবা। এখন সন্ধ্যা হয়ে আসবে। তোমরা এ সময় গুহা দেখতে যাবে মানে কি ? ভুতের খাবার হবার ইচ্ছে আছে , নাকি ডাকাতের গুলির মুখে পড়তে যাবে।

গিট্টু ভয় পাবার মতো ভঙ্গি করে ওদেরকে বলল, গুহায় কি ভূত থাকে ? ডাকাত কারা ?

বাপরে বাপ। এ দেখি বিচ্ছু। ভুত ডাকাত কিছুকে ভয় পায় না।

কাকা ওসব ভুয়া। এখন আর ভুত বা ডাকাত বলে কিছু নেই। পাহাড়ে কোন লোকজনই নেই কি ডাকাতি করবে। এখানকার মানুষজন খেটে খায়। তাদের কি টাকা পয়সা আছে। আর ভুত আসবে কোত্থাকে ? আমরা ভুতের বাবা।

মিন্টু গিট্টুর কথা শুনে গ্রামের লোক দু’জন ভড়কে গেলো। ওরা মনে মনে বলছে,ওরে বাবা এই বিচ্ছু দুটো কোত্থেকে যে আসলো্‌, মায়ের কোল খালি করে বাচারা যাবে ভূতের বাড়ি। খুব আফসোস করে ওরা ওদের বাড়ির দিকে পা বাড়াল।

সূর্য তখন ডুবো ডুবো। চারদিকে কাকের পিঠের মতো কালো হয়ে আসছে পৃথিবী। চারদিক থেকে শেয়ালসহ নানা বুনো প্রাণীর ডাক ভেসে আসছে। ওরা ছায়ার মতো যা দেখেছিল সেই ছায়াটা কোথায় হারিয়ে গেছে। মিন্টু টর্সের আলো ফেলে গুহার দিকে পা বাড়ায়। পাশাপাশি গিট্টুও চলছে।দুজনের কারো মুখে কথা নেই। গুহার কাছাকাছি পৌছে গেছে ওরা।

পকেট থেকে চাকুটা বের কর। গিট্টুকে বলল মিন্টু।

গ্যাস লাইটার টা কি তোর কাছে ? মিন্টুকে জিজ্ঞেস করে গিট্টু্‌

সব আছে সব আছে। কথা বলিস না সামনের দিকে তাকা।

কই কিছু তো দেখছি না।

তোর মুন্ডু।

টর্স লাইট টা জ্বালা না। গিট্টু কথা বলার সাথে সাথে কপাট করে জোরে শব্দ তুলে কি যেনো ঘটল। ওদের মনে হয়েছে কেউ ঘরের কাঠের দরজা বন্ধ করছে। শেয়ালের হুক্কা হুয়া ডাকটা চারদিক থেকে ভেসে আসছে।ওরা একটুও ভয় না পেয়ে সামনের দিকে পা বাড়ায়। এমন সময় গুহার পাশের পাহাড়ের ছোট ছোট টিলা গুলোর উপর দাঁড়িয়ে কারা যেনো বাজনা বাজাচ্ছে। নানা রকমের অট্টহাসিও ভেসে আসছে। গিট্টু যেনো এবার ভয় পেলো।

মিন্টু টর্সের আলো জ্বেলে দেখতে চাইল কিছুু দেখা যায় কি না।

দেখে কি একটা বন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। সারা গায়ে বড় বড় চোখ। মাথায় দুটো চোখ আগুনের মতো জ্বল জ্বল করছে। চারদিকে বাজনা বাজছে যেনো নরহত্যার উৎসবের আয়োজন।ওরে বাবা গো, মাগো বলে এমন জোরে চিৎকার করে জ্ঞান হারায় গিট্টু মাটিতে পড়ে আছে। কে যেনো খুব ব্যঙ্গ করে মিন্টুকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বলল,গুহার ভেতর যাবি ?হা হা হা। যমের বাড়ি যেতো না চাইলে দৌড়ে বাড়ি ফিরে যা, যা, যা,

ওদের ঘুম ভেঙ্গে দেখে সকাল হয়ে গেছে। ছোট মামা বিল্লাল ওদের পাশে বসা। মামা হেসে হেসে বলল লাল পাহাড়ের গুহা দেখতে যাবে নাকি। লজ্জা পেয়ে হাত দিয়ে চোখ মুখ ঢেকে রাখে ওরা দুই বন্ধু।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুর পুতুল
পরবর্তী নিবন্ধবা ং লা দে শে র ফ ল