লালদিয়া কন্টেনার টার্মিনালের জন্য আজ ৩০ বছরের পিপিপি চুক্তি সই করবে সিপিএ

| সোমবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২৫ at ৬:১৩ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) আজ ডেনমার্কভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় সমন্বিত লজিস্টিকস কোম্পানি মায়ের্স্ক গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বিভির সঙ্গে ৩০ বছরের অপারেশনচুক্তি (কেপিআই’র ভিত্তিতে বর্ধিতকরণসহ) সই করতে যাচ্ছে। সরকারিবেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) কাঠামোর আওতায় লালদিয়া কন্টেনার টার্মিনাল (এলসিটি) নির্মাণ, অর্থায়ন, ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার জন্য এই কনসেশন চুক্তি স্বাক্ষর হবে। চুক্তি সই অনুষ্ঠানটি রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অনুষ্ঠিত হবে। খবর বাসসের।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) . এম. সাখাওয়াত হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ট্রেড ও ইনভেস্টমেন্ট বিভাগের স্টেট সেক্রেটারি লিনা গ্যান্ডলোসে হ্যানসেন এবং ঢাকায় ডেনমার্ক দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিঙ মোলার। সিপিপি কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।

সমপ্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)’র নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী জানান, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি (সিসিইএ) সিপিএ ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে কনসেশন চুক্তির বিষয়ে নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে। তিনি বলেন, এই ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বাংলাদেশের বন্দর খাতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে। এতে সরকারের মূলধনী ব্যয় কমবে।

তিনি জানান, বন্দরটির মালিকানা থাকবে সিপিএর হাতে, তবে নির্মাণ, পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবে এপিএম টার্মিনালস ও তাদের স্থানীয় যৌথ উদ্যোগঅংশীদার। বর্তমানে ৩৩টি দেশে ৬০টির বেশি টার্মিনাল পরিচালনাকারী এপিএম টার্মিনালস বিশ্বব্যাপী শীর্ষ টার্মিনাল অপারেটরদের অন্যতম, এবং বিশ্বব্যাংকের ২০২৪ সালের তালিকায় বিশ্বের সেরা ২০টি বন্দরের মধ্যে ১০টিতেই তারা কাজ করছে।

প্রসঙ্গত, চীন, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় বিস্তৃত অভিজ্ঞতার আলোকে এ প্রকল্প বাংলাদেশের লজিস্টিকস খাতকে এলডিসিউত্তর সময়ে বিশ্বমানের প্রযুক্তি ও দক্ষতাসম্পন্ন অবস্থানে পৌঁছে দেবে। নতুন সবুজনীতি নির্ভর বন্দরটি বর্তমানের তুলনায় দ্বিগুণ আকারের কন্টেনারবাহী জাহাজ গ্রহণ করতে পারবে। এর ফলে পরিবহন ব্যয় কমবে এবং বৈশ্বিক বাজারে সরাসরি সংযোগ বৃদ্ধি পাবে। তিনি বলেন, এটি রাজস্ব ভাগাভাগিভিত্তিক কনসেশন হওয়ায় প্রকল্পটি সরকারের মূলধনী ব্যয় কমিয়ে বিদেশি মুদ্রায় স্থায়ী রাজস্ব তৈরি করবে। এছাড়া প্রথমবারের মতো সার্বক্ষণিক (২৪/) বন্দর পরিচালনা ও রাতের নৌযাত্রা সুবিধা চালু হবে। চুক্তি অনুযায়ী এপিএম টার্মিনালস বিভি প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) নিয়ে আসবে যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় ইউরোপীয় ইকুইটি বিনিয়োগ। তিনি বলেন, বৈশ্বিক বিনিয়োগকারী হিসেবে এপিএম টার্মিনালসের আগমন আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং লজিস্টিকস, শিল্প ও সংশ্লিষ্ট খাতে আরও বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করবে। নতুন টার্মিনালটি বছরে ৮ লাখের বেশি টিইইউ সামাল দিতে সক্ষম হবে যা বর্তমান সক্ষমতার তুলনায় ৪৪ শতাংশ বেশি। তিনি জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে টার্মিনালটি চালু হলে বর্তমান বন্দরের জট কমবে এবং দ্রুত বাড়তে থাকা বাণিজ্যিক চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে। উচ্চ প্রবাহ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এলসিটি প্রকল্প সিপিএর রাজস্ব বাড়াবে। এছাড়া এপিএম টার্মিনালসের বিভিন্ন কর এবং সামুদ্রিক সেবা থেকে বাড়তি আয় হবে। নির্মাণ ও পরিচালনা পর্যায়ে সরাসরি ৫০০৭০০ জনের কর্মসংস্থান হবে, পাশাপাশি হাজারো পরোক্ষ কর্মসংস্থান তৈরি হবে কনস্ট্রাকশন, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, ফ্রেইট ফরওয়ার্ডিংসহ বিভিন্ন খাতে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পরিবেশ মানদণ্ড প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমবে এবং শ্রমিকদের কল্যাণ বাড়বে। উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশের বন্দর অবকাঠামো আধুনিক করবে এবং স্থানীয় প্রযুক্তিবিদ ও প্রকৌশলীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে। তিনি বলেন, দ্রুততর জাহাজ টার্নঅ্যারাউন্ড, উন্নত কন্টেনার ডুয়েল টাইম কমানো, অপেক্ষার সময় হ্রাসের মাধ্যমে লজিস্টিকস ব্যয় কমে যাবে। ফলে বিশেষত রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াকরণ ও হালকা প্রকৌশল খাত ব্যাপকভাবে উপকৃত হবে। এপিএম টার্মিনালসের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি স্থানীয় প্রকৌশলী, কারিগরি কর্মী ও ব্যবস্থাপকদের দক্ষতা বৃদ্ধি করবে, যা সামগ্রিক লজিস্টিকস খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়াবে। তিনি জানান, বছরে ৮ লাখের বেশি টিইইউ সক্ষমতা দেশের অভ্যন্তরীণ ডিপো, কোল্ড চেইন, শিল্পপার্ক এবং অন্যান্য করিডোরে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াবে।

সবুজ ও জলবায়ুসহনশীল অবকাঠামো গড়ে তুলতে প্রকল্পটি শক্তিসাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করবে এবং আন্তর্জাতিক জলবায়ু মানদণ্ড অনুসরণ করবে। এতে কার্বন নিঃসরণও কমবে। তিনি বলেন, এটি বাংলাদেশের এনডিসি লক্ষ্য অর্জন ও পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ আকর্ষণে সহায়ক হবে। পিপিপি প্রকল্প বাস্তবায়নের সক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে জটিল প্রকল্প পরিচালনার ইতিবাচক বার্তা বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের কাছে যাবে। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমবে, বিনিয়োগকারী বাড়বে এবং জ্বালানি, পরিবহন ও সামাজিক অবকাঠামোতেও নতুন পিপিপি প্রকল্প এগিয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধহাসিনার রায় যা-ই হোক সেটা কার্যকর হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
পরবর্তী নিবন্ধহাসিনার মামলার রায় আজ