লালদিয়া ও পানগাঁও কনটেইনার টার্মিনালে বিনিয়োগ করা বিদেশি অপারেটররা আগামী দশ বছর ১০০ শতাংশ করমুক্ত সুবিধা পাবেন। তবে এটি কোনো নতুন প্রণোদনা নয়, সরকারের পূর্ববর্তী নীতিমালার ধারাবাহিকতাই বহাল থাকছে বলে সাংবাদিকদের কাছে স্পষ্ট করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। গতকাল বুধবার ঢাকার গুলশানে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারের বাংলাদেশ মিশন আয়োজিত অর্থনৈতিক অধিকারবিষয়ক এক আলোচনায় তিনি বলেন, লালদিয়া ও পানগাঁও–দুটো বন্দরের চুক্তি সই হয়েছে এবং পূর্বের সরকারি আদেশ অনুযায়ী সেখানে বিনিয়োগকারীদের ১০ বছরের জন্য ১০০% করমুক্ত সুবিধা দিতে হয়েছে। নতুন কিছু দেওয়া হয়নি।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করমুক্ত সুবিধার আওতায় শুধু কোম্পানিই নয়, প্রকল্পে কর্মরত বিদেশি টেকনিক্যাল স্টাফও অন্তর্ভুক্ত হবেন। রয়্যালটি, টেকনিক্যাল নলেজ ফি, লভ্যাংশসহ সব ধরনের আয় নির্ধারিত সময় পর্যন্ত করছাড় পাবে। তবে তিনি প্রশ্ন তোলেন যে, নির্বিচারে করছাড় অব্যাহত থাকলে প্রত্যক্ষ কর আদায় কীভাবে সম্ভব হবে।
সরকারের ২০১৭ সালের বিদ্যমান এসআরও অনুযায়ী, পিপিপি ভিত্তিক ১২ ধরনের অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগকারীরা ১০ বছরের আয়করমুক্ত সুবিধা পেয়ে আসছেন। এসব প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে মহাসড়ক, এঙপ্রেসওয়ে, নদী সেতু, টানেল, রেললাইন, এয়ারপোর্ট, সি পোর্ট, মনোরেল থেকে শুরু করে বাস টার্মিনাল ও বৃদ্ধাশ্রম পর্যন্ত। বিদেশি টেকনিশিয়ানদের জন্যও পূর্বের আদেশ অনুযায়ী প্রথম তিন বছরে আয়ের ওপর ৫০ শতাংশ করছাড় প্রযোজ্য।
নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক এপিএম টার্মিনালস বিএভির কাছে লালদিয়া কন্টেনার টার্মিনাল ৩০ বছরের জন্য হস্তান্তর করেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কোম্পানিটি প্রথম তিন বছরে নির্মাণ, সরঞ্জাম ক্রয় ও সংশ্লিষ্ট কাজে প্রায় ৫৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে, পাশাপাশি সাইনিং মানি হিসেবে দেবে ২৫০ কোটি টাকা। ঢাকার কাছে পানগাঁও ইনল্যান্ড কন্টেনার টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক ইনল্যান্ড লজিস্টিকস কোম্পানি মেডলগ, ২২ বছরের জন্য। উন্মুক্ত দরপত্রে তিন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে প্রতিযোগিতায় এগিয়েই তারা নির্বাচিত হয়েছে।
এ দুটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি নিয়ে দেশে জোরালো আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে পূর্ণাঙ্গ চুক্তিপত্র প্রকাশ না করায় বিতর্ক বাড়ছে। এ নিয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশিষ্ট ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, জনস্বার্থ জড়িত এমন চুক্তিতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি অপরিহার্য। তিনি মনে করেন, কী রেয়াত দেওয়া হচ্ছে এবং বিনিময়ে কী সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে–এসব বিষয়ে জনআলোচনা হওয়া উচিত।
অন্যদিকে, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কোনো দেশেই পিপিপি প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ চুক্তি প্রকাশ করা হয় না, কারণ এতে ভবিষ্যৎ দরপত্র ও বাণিজ্যিক আলোচনার ক্ষতি হতে পারে। আন্তর্জাতিক অর্থায়নকারী সংস্থাগুলোও কেবল সারাংশ প্রকাশের পরামর্শ দেয়। তার মতে, চুক্তিতে ব্যবসায়িক তথ্য ও অপারেশনাল কৌশল থাকে, যা আইনগতভাবে গোপনীয়তার আওতায় সুরক্ষিত থাকে।
সরকারের এই বড় দুটি অবকাঠামো প্রকল্প বিদেশি অপারেটরদের হাতে যাওয়ায় বাংলাদেশের বন্দর ব্যবস্থাপনায় প্রথমবারের মতো দীর্ঘমেয়াদি লিজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সুবিধা ও বিতর্ক উভয় দিক নিয়েই এখন আলোচনা বাড়ছে দেশে।












