লালদিঘী মাঠকে ঘিরে ইতিহাসের বর্ণিল আয়োজন তবে প্রশ্ন খেলাধুলার জন্য উন্মুক্ত থাকবে কিনা

ক্রীড়া প্রতিবেদক | মঙ্গলবার , ১৯ এপ্রিল, ২০২২ at ১১:৩৭ পূর্বাহ্ণ

লালদিঘী মাঠ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বড় একটি অংশ। স্বাধীনতা সংগ্রাম থেকে শুরু করে বাংলাদেশের যেকোন আন্দোলন সংগ্রামের সূচনা হয়েছে এই লালদিঘী মাঠ থেকে। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষনা করেছিল এই লালদিঘী ময়দান থেকে। পাশাপাশি এই লালদিঘী মাঠে খেলে অনেক খেলোয়াড় দেশের বড় তারকা হয়েছে। ফুটবল, হ্যান্ডবল, ভলিবল, কিংবা কাবাডি এই মাঠে নিয়মিত আয়োজিত হয়েছে। জাতীয় পর্যায়ের অনেক খেলাধুলাও আয়োজিত হয়েছে এই মাঠে। তাছাড়া পাথরঘাটা, বদরপাতি, বকশির হাট, টেরিবাজার, ফিরিঙ্গিবাজার, আলকরন সহ নানা এলাকার ছেলেরা নিয়মিত খেলেছে এই মাঠে। তবে লালদিঘী মাঠ আরো একটি কারনে সারা দেশের কাছে এমনকি বিদেশেও পরিচিত। আর তা হচ্ছে জব্বারের বলী খেলা।

শত বছরের ঐতিহ্য এই বলী খেলা লালদিঘী মাঠকে নিয়ে গেছে আরো উচ্চতায়। সব সময় আলোচনায় থাকা লালদিঘী মাঠ এবারে একটু বেশি আলোচনায় এসেছে জব্বারের বলী খেলা আয়োজন করতে না পারায়। শতবর্ষী জব্বারের বলী খেলার আগের দুই আসর আয়োজিত হতে পারেনি করোনা মহামারীর কারণে। তবে এবারে সবকিছু ঠিক থাকা সত্বেও লালদিঘীর মাঠ প্রস্তুত না থাকায় এক পর্যায়ে স্থগিত ঘোষনা করা হয়েছিল জব্বারের বলী খেলার এবারের আসর। যদিও শেষ পর্যন্ত সিটি মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর হস্তক্ষেপে মাঠে গড়াচ্ছে বলী খেলা। তবে সেটা ঐতিহাসিক সেই লালদিঘী মাঠে নয়।

মাঠের বাইরে রাস্তার উপর মঞ্চ তৈরি করে হবে এবারের বলী খেলা। কেন লালদিঘী মাঠে খেলা হতে পারছে না। সেটা অবশ্য অনেকেরই জানা। ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষনাকে স্মরনীয় করে রাখতে লালদিঘী মাঠকে সাজানো হচ্ছে বর্ণিলভাবে। আগের সে মাঠকে গড়ে তোলা হয়েছে সবুজ করে। প্রায় ৭৫ হাজার বর্গফুট মাঠে ঘাস লাগানো হয়েছে। এছাড়া ১১৫০ রানিং ফুট ওয়াকওয়ে করা হয়েছে। যার প্রস্থ ৫ ফুট। এছাড়া মাঠের পূর্ব পাশে পুলিশ সদর দপ্তরের সীমানা প্রাচীরে এক হাজার দুইশত পঞ্চাশ ফুট এলাকা জুড়ে লেখা হয়েছে বাংলার মুক্তির সনদ ছয় দফা। মাঝখানে বঙ্গবন্ধু এবং ছয় দফা দাবিতে বাঙালীর আন্দোলনের ছবি।

এছাড়া ১৮টি তেরাকোটা মাটির ম্যুরালের মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ইতিহাস। প্রতিটি টেরাকোটা ম্যুরাল ৭ ফুট দৈর্ঘ এবং ৫ ফুট প্রস্থের। মাঠের দক্ষিন পাশে ৫০ ফুট দৈর্ঘ এবং ২৫ ফুট প্রস্থের মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে লালদিঘী মাঠ যেন পেয়েছে অন্য এক রূপ। শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর প্রায় ৪ কোটি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এখন কেবল প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষা। দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত হয়ে পড়ে থাকা সরকারী মুসলিম হাই স্কুলের মাঠ তথা লালদিঘী মাঠ ছয় ইঞ্চি থেকে প্রায় ১১ ইঞ্চি পর্যন্ত মাটি ভরাট করে তারপর তাতে ঘাস রোপন করা হয়েছে। মাঠের দক্ষিন পাশে লাগানো হয়েছে চায়না ঘাস।

আর পূর্ব পাশে লাগানো হয়েছে বাংলা ঘাস। আর এই সব ঘাস পরিচর্যা না করলে নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন প্রকল্পের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ব্রাদার্স সিন্ডিকেটের স্বত্বাধিকারী মো. গোলাম মর্তুজা। তিনি বলেন আমাদের কাজ শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। কিন্তু যেহেতু প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন তাই আমরা এখনো পরিচর্যার কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি। আর এই পরিচর্যার কাজটি সব সময় চালিয়ে যেতে হবে। মাঠে খেলাধুলা কিংবা জনসভা সব করা যাবে তবে তার পরিচর্যা খুব জরুরি। মাঠ ছাড়াও মাঠের চার পাশে বিভিন্ন ম্যুরাল, ফুলের গাছ, তেরাকোটা ম্যুরাল সবকিছু নিয়মিত পরিচর্যা করতে হবে। মাঠের সীমানা দেওয়ার উচু করা হয়নি যাতে যেকোন অনুষ্ঠান মাঠের থেকে সহজে দেখা যায়। মাঠের চারদিকে তিনটি গেইট রাখা হয়েছে। ঐতিহাসিক লালদিঘী মাঠ আবারো পুরানো রূপে ফিরে আসবে কিনা তা নিয়ে এরই মধ্যে সন্দেহ দেখা দিয়েছে মানুষের মধ্যে। কারন যেসব আয়োজন এই মাঠকে ঘিরে করা হয়েছে সে সব সংরক্ষন করতে হলে মাঠ এবং মাঠের চারপাশের পরিবেশে অবশ্যই নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।

যদিও টেরাকোটা ম্যুরালগুলো ১০ মি.মি. টেম্পার গ্লাস দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। যাতে সেগুলো ক্ষতি সাধিত না হয়। তাই এখন প্রশ্ন জেগেছে এত সাবধানতা এবং নিয়ম নীতি মেনে সার্বজনীনভাবে খেলাধুলার জন্য এই মাঠ ব্যবহার করা যাবে কিনা তা নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন। কারন লালদিঘী মাঠ চিরকালই ছিল উম্মোক্ত। তবে আগের মত এই মাঠে গাড়ি পার্কিং এর জণ্য ব্যবহার হয় কিনা সেটাও বড় প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। যদিও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল জানিয়েছেন লালদিঘী মাঠ আগের মত সবার জন্য উম্মুক্ত হয়ে যাবে। আবার খেলাধুলায় মেতে উঠবে সবাই এই মাঠকে ঘিরে। কিন্তু যত আয়োজন এই মাঠকে কেন্দ্র করে গদে তোলা হয়েছে তাতে প্রশ্নটা দেখা দিতেই পারে এই মাঠ খেলাধুলার জন্য কতটা উম্মুক্ত থাকবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধআবাহনী-মোহনবাগান মুখোমুখি আজ
পরবর্তী নিবন্ধসিএসইতে লেনদেন ৩৫.৫৫ কোটি টাকা