বর্তমান সময়ের বিশ্ব আত্মকেন্দ্রিক, সবাই নিজেকে মগ্ন। নিজে সফল হবার স্বার্থপর প্রতিযোগিতায় ধাবমান। প্রথমত সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধহীনতা, অশান্তি ও বিভাজনের প্রেক্ষাপটে ‘একতাতে সমৃদ্ধি’ ধারণাটি অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং আমাদের জন্য একটি নতুন দিক নির্দেশনার দুয়ার উন্মোচন করেছে। এই থিম আমাদের সমাজের শৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি মানবিক সম্পর্ক এবং সামাজিক সমতার গুরুত্বকে চিহ্নিত করে পারস্পরিক সমপ্রীতির বাতাবরণ। একতায় সমৃদ্ধির এই মূলমন্ত্রকে উপজীব্য করে। যখন আমরা একসঙ্গে সম্মিলিত ভাবে কাজ করি, তখন আমাদের উদ্যম, শক্তি, সক্ষমতা ও আত্মনিবেদন লক্ষ্য অর্জন সহজসাধ্য হয়ে যায়। একত্রিত প্রচেষ্টা থেকে আসা এই সমন্বয়ই প্রকৃত সমৃদ্ধির জন্ম দেয়। বর্তমান সময়ে আমাদের সমাজে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যা মোকাবেলা করতে হচ্ছে। এর জন্য আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং ঐক্যের একটি দৃঢ় অনুভূতি থাকা আবশ্যক। একত্রিত হয়ে আমরা যে কোনও চ্যালেঞ্জ সহজেই মোকাবেলা করতে পারি।
‘একতাতে সমৃদ্ধি’–এই থিমের প্রেক্ষাপটে ইতিহাসের বিভিন্ন মহান ব্যক্তিত্বদের উক্তি আমাদেরকে আরও বেশি উদ্বুদ্ধ করে। তাদের এই উক্তিগুলো আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সকল অসংগতি, অশান্তি ও বিভাজন অতিক্রম করতে পারি।
বিখ্যাত হেলেন কেলার এর মহান উক্তি: ‘একা আমরা খুব কম করতে পারি; কিন্তু একত্রে আমরা অনেক কিছু করতে পারি।’ এই উক্তিটি একতার শক্তি এবং সহযোগিতার গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি নির্দেশ করে যে একত্রে কাজ করার মাধ্যমে একটি সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব।
একইভাবে মহান রাষ্ট্রনায়ক– থিওডোর রুজভেল্ট এবং নেলসন ম্যান্ডেলা একতা ও সমৃদ্ধির গুরুত্ব সম্পর্কে কিছু প্রভাবশালী উক্তি করেছেন। তন্মধ্যে উল্লেখ হলো: থিওডোর রুজভেল্ট–এর-‘জীবনের সেরা পুরস্কার হলো এমন কাজের সুযোগ পাওয়া, যা কঠোর পরিশ্রম করার যোগ্য।’ এই উক্তি একতার গুরুত্বকে নির্দেশ করে, যেখানে মানুষ একত্রিত হয়ে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে একটি লক্ষ্য অর্জন করতে পারে। নেলসন ম্যান্ডেলার বাণী– ‘কোনো কিছু করা সম্ভব মনে হয় না যতক্ষণ না তা করা হচ্ছে।’ এই উক্তি আমাদের হতাশাগ্রস্ত অবস্থানে সাহস জোগায় এবং বোঝায় যে একতা এবং সহযোগিতার মাধ্যমেই অসম্ভবকে সম্ভব করা যায়।
যখন মানুষ সমষ্টিগতভাবে কাজ করে, তখন তারা নতুন সম্ভাবনা ও সাফল্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারে। ভিন্ন ভিন্ন পেশা, সংস্কৃতি এবং বৈচিত্র্যের মানুষ যখন একত্রিত হয়, তখন তারা একে অপরের শক্তি এবং অভিজ্ঞতা থেকে উপকৃত হয়। আমাদের ঐক্য শক্তিশালী হলে, সেই ভিত্তিতে আমরা একটি ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত সুস্থ সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তুলতে পারি।
২০২৫–২০২৬ সেবাবর্ষের জন্য মাননীয় জেলা গভর্নর লায়ন মোসলেহউদ্দিন আহমদ অপু এমজেএফ এর কল ‘একতাতে সমৃদ্ধি’ অত্যন্ত যুগোপযোগী বলে মনে করি। লায়ন্স জেলা ৩১৫ বি৪ এর সকল লায়ন্স ও লিওস্ নেতৃবন্দ ও ক্লাবসদস্য একসাথে একতাতে সহানুভূতি, সদিচ্ছা এবং অংশগ্রহণের সংস্কৃতি গড়ে তুলে, জেলা গভর্নর এর কার্যক্রমকে শক্তিশালী করতে পারি। যা সমাজিক ও মানবিক মূল্যবোধে সম্মানিত একটি সুদৃঢ় এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে সাহায্য করবে। মনে রাখতে হবে সমাজে প্রকৃত সমৃদ্ধি অর্জন করা প্রায় অসম্ভব, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা সবাই একত্রিত না হই এবং একটি উন্নত, সুদৃঢ় এবং সমৃদ্ধ জাতি গঠনে নিজেদের নিয়োজিত না করি। সুতরাং, আসুন আমরা সবাই একত্রিত হই, ‘একতাতে সমৃদ্ধি’। শুভকামনা রইলো!
লেখক: সাবেক কেবিনেট সেক্রেটারী, লায়ন্স জেলা ৩১৫ বি৪।