চাঞ্চল্যকর ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় বান্দরবানের লামায় অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
নিহত প্রবাসীর স্ত্রীর মা লালমতি বেগম বাদী হয়ে আজ শনিবার (২২ মে) লামা থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে নিহতদের মরদেহ আজ শনিবার বিকেলে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে পুলিশ।
তবে কুয়েত প্রবাসী নুর মোহাম্মদ এখনো পর্যন্ত দেশে না পৌছায় দাফন করা হয়নি। ফ্রিজিং গাড়িতেই মরদেহগুলো সংরক্ষণ রাখা হয়েছে।
অপরদিকে, হত্যার ঘটনায় প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শুক্রবার-শনিবার ৬ জনকে আটক করেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আটককৃতরা হলো নিহত মাজেদা বেগমের দেবর মো. শাহ আলম (৪৩) ও মো. আবদুল খালেক (৪০), নিহতের বড় বোন রাহেলা বেগম (৪০), তার স্বামী মো. আবদুর রশিদ (৪৮), হাফেজ সায়েদুর রহমান (১৮) ও স্থানীয় যুবক মো. রবিউল হোসেন (২১)।
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটক ব্যক্তিদের রাত নয়টার দিকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ।
কুয়েত প্রবাসী নুর মোহাম্মদের মেয়ে রাবেয়া ইয়াছমিন বলেন, “আমার মা মাজেদা বেগমকে গলায় কাপড় পেঁচিয়ে, ছোট বোন নুরে জান্নাত রিদাকে গলা টিপে এবং মেজো বোন সুমাইয়া ইয়াছমিন রাফিকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাদের সবার শরীরে আঘাতের চিহ্ন আছে।”
রাবেয়া ইয়াছমিন আরও বলেন, “নগদ অর্থ এবং স্বর্ণালংকার লুটের জন্য এই খুনের ঘটনা সংঘটিত হয়ে থাকতে পারে। গত বৃহস্পতিবার আমার মা লামা শাখার তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে ২ লাখ টাকা উত্তোলন করেছিলেন। আমার ধারণা খুনিরা হয়ত পরিচিত হবে। না হলে তারা অনায়াসে ঘরে কীভাবে ঢুকবে? জোর করে ঢুকলে ঘরের লোকজন চিৎকার দিলে আশেপাশের মানুষ এগিয়ে আসত। তাছাড়া এমনও হতে পারে, খুনিরা হয়ত আগে থেকে ঘরে ঢুকে ওঁৎ পেতে ছিল।”
বান্দরবান র্যাব-১৫ এর কোম্পানি কমান্ডার এএসপি নিত্যান্দ দাস বলেন, “আমরা যাদের সন্দেহ করেছিলাম ইতোমধ্যে তাদের ৬ জনকে আটক করে প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়েও দেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য উদঘাটিত হবে।”
পুলিশের লামা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. রিজওয়ানুল ইসলাম বলেন, “প্রবাসীর ঘরের তালা ভেঙে প্রবেশ করে মা এবং দুই কন্যার মরদেহ খাটে ও মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেছি। লাশের সুরতহাল করে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ পাঠানো হয়েছিল বান্দরবান সদর হাসপাতালে। সেখানে ময়নাতদন্তের পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।”
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা হিসাবে লামা থানা পুলিশের পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আলমগীর জানান, ঘরের আলমারি, ওয়ারড্রব খুলে স্বর্ণালংকার লুটপাটের আলামত পাওয়া গেছে। ব্যাংক থেকে উত্তোলন করা ২ লাখ টাকাও বাসায় পাওয়া যায়নি। পুলিশ সুপার জেরিন আখতার আজ শনিবার ঘটনাস্থল পরির্দশন করেছেন।
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টা ১৫ মিনিটে লামা পৌরসভার চাম্পাতলী গ্রামে কুয়েত প্রবাসী নুর মোহাম্মদের বসতঘর থেকে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।