অনেক দিন ধরে অস্থির ভোজ্যতেলের বাজার। সপ্তাহের দুদিন দাম কমছে তো বাকি চারদিন আবার ঊর্ধ্বমুখী। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে সয়াবিন ও পাম অয়েল মণপ্রতি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকার। বর্তমানে এক লিটার সয়াবিন তেল কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১৫৩ টাকা; যা তেলের বাজারে রেকর্ড।
খাতুনগঞ্জের তেল ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে এখনো বুকিং দর ওঠানামা করছে। তাই সয়াবিন ও পাম উভয় তেলের দাম স্থির থাকছে না। তেলের বাজার পুরোটাই আমদানি নির্ভর। আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দাম এমনিতে কমে যাবে।
তবে ভোক্তাদের অভিযোগ, বরাবরের মতোই বাজার চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসায়ীরা তেলসহ ভোগ্যণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে কারসাজির মাধ্যমে দাম বৃদ্ধি করে থাকেন। এখন ভোজ্যপণ্যের লাগাম টানবে কে, এটাই বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৪৯০ টাকায়। ১০০ টাকা বেড়ে গিয়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৫৯০ টাকায়। অন্যদিকে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৯১০ টাকায়। বর্তমানে মণপ্রতি ১৫০ টাকা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৬০ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের কয়েকজন তেল ব্যবসায়ী জানান, খাতুনগঞ্জের বাজারে পণ্য বেচাকেনা ও লেনদেনে যুগ যুগ ধরে কিছু প্রথা চালু আছে। নিজেদের সুবিধার অনেক প্রথা আছে যেগুলো আইনগতভাবে স্বীকৃত নয়। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ডেলিভারি অর্ডার (ডিও) স্লিপ। তেল কিংবা অন্য কোনো পণ্য কেনাবেচায় ডিও বেচাকেনার মাধ্যমে আগাম লেনদেন হচ্ছে। দেখা যায়, পণ্য হাতে না পেলেও ওই স্লিপটি বেচাকেনা হচ্ছে। কোনো কোম্পানি বাজার থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্যের ডিও কিনে নেয়। যে দরে ডিও কেনা হয় তার বাজারদর যদি বেড়ে যায়, তখন পণ্যটি ডেলিভারি দিতে তারা গড়িমসি করে। আবার দেখা যায়, কোম্পানির পণ্যই আসেনি কিন্তু ডিও কিনে রেখেছেন অনেক বেশি। এর ফলেও কোম্পানি বাজারে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না। ফলে এসব পণ্যের দামও নিয়ন্ত্রণে থাকে না। এক্ষেত্রে তেল ও চিনির ডিও বেচাকেনা বেশি হয়। বলা যায়, ডিও কারসাজির কারণে মাঝে মাঝে পণ্যের দাম বাড়ে। এই সুযোগে কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেন।
দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী জাহানারা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আবু বক্কর আজাদীকে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে ভোজ্যতেলের আন্তর্জাতিক বাজার বাড়তি। ফলে ধাপে ধাপে বেড়েছে তেলের বাজার। বর্তমানে বাজার ওঠানামার মধ্যে আছে। আমরা যতটুকু জেনেছি, তেলের উৎপাদন প্রত্যাশামতো হয়নি। বিশেষ করে আমাদের দেশে পাম তেল আসে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া থেকে। সেসব দেশে করোনার কারণে উৎপাদন ভালো হয়নি। এছাড়া সয়াবিন আমদানি হয় ব্রাজিল ও অস্ট্রেলিয়া থেকে। সেখানেও সমস্যা ছিল।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আজাদীকে বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজার সবসময় ব্যবসায়ীদের মর্জির ওপর নির্ভর করে। তারা নিজেদের স্বার্থে বিভিন্ন অজুহাত দাঁড় করিয়ে ক্রেতাদের পকেট কাটেন। তবে ভোগ্যপণ্যের বাজারে যেভাবে তদারকি হওয়া দরকার সেটিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। প্রশাসন মাঝে মাঝে আকস্মিক অভিযানে বের হয়ে কিছু জরিমানা করে। তারপর আবার চুপ হয়ে যায়। প্রশাসনকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিতে হবে।












