বাংলাদেশে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৮ সালের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, দেশে পাঁচ হাজারের মত ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। সেটা বেড়ে এখন কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে সেটা বলাই যায়। এসব সেন্টারগুলোর আবার রাতারাতি নাম পাল্টেও যাচ্ছে। সরকারি নিয়ম না মেনে বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছে। এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর অনেকটাতে নেই পরীক্ষা নিরীক্ষার কোন যন্ত্রপাতি কিংবা চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। পরীক্ষার নামে রোগীদের কাছ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে একজন চিকিৎসকের নাম ব্যবহার করে তৈরি করে দিচ্ছে ভুয়া রিপোর্ট। বিভিন্ন সময়ে দেশের অনেক ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলোতেই মেয়াদোত্তীর্ণ রাসায়নিক উপাদান দিয়ে প্যাথলজিক্যাল টেস্ট রিপোর্ট তৈরি, টেস্ট না করেই রিপোর্ট দেওয়া, পরীক্ষাগারে দূষিত রক্ত রাখা, লাইসেন্স না থাকা, রোগীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ নানা অনিয়ম ও অভিযোগ পাওয়া যায়। প্রতারণার মাধ্যমেই চলছে অধিকাংশ ডায়াগনস্টিক সেন্টার। অনেকের নেই চিকিৎসক, আবার নেই টেকনিশিয়ানও। সাইনবোর্ড টানিয়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করেই প্রতারণার মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা করছে এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা। এমনকি মৃত ডাক্তারের স্বাক্ষরেও দেয়া হচ্ছে প্যাথলজি রিপোর্ট। এসব বেআইনি প্রতিষ্ঠানের বেশিরভাগই ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করে না। এসব প্রতিষ্ঠানে নেই যথাযথ বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি। এই অবৈধ ব্যবসায় বেশ কিছু ভুয়া ডাক্তার জড়িত। ওইসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রও নেই। ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পরিবেশ, পরমাণু শক্তি দফতরের ছাড়পত্র এবং ট্রেড লাইসেন্স, টিআইএন ও ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন। কিন্ত অর্ধেকেরও বেশি ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমোদন ছাড়া চলছে। ফলে রোগীরা নিয়মিত প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। তাই অচিরেই ভুয়া সেবামূলক প্রতিষ্ঠান বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। লাইসেন্স নবায়নের জন্য সরকারের সময় বেঁধে দেয়া উচিত। ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো তদারকির জন্য সিটি কর্পোরেশন ও জেলার সিভিল সার্জনদের সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অনুমোদনবিহীন এবং অবৈধ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।
মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়