লাইলাতুল কদর : পাপে তাপে দগ্ধ মানুষের পরিত্রাণের সুযোগ

আ ব ম খোরশিদ আলম খান | মঙ্গলবার , ১৮ এপ্রিল, ২০২৩ at ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ

মহান আল্লাহ্‌ তাঁর প্রিয় বান্দাদের পরিশুদ্ধ, পবিত্র এবং পাপমুক্ত করার কিছু দিনক্ষণ ও শুভ সময়, মুহূর্ত স্থির করে দিয়েছেন। পাপে তাপে অবক্ষয়ে নিমজ্জিত বান্দাদের পাপরাশির ভার হালকা করতেই মাহে রমজানে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর উপহার দিয়ে অপরিসীম করুণা ধারায় সিক্ত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছেন স্বয়ং আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন। আল্লাহ্‌ পাক অপরাধবোধে ভীত ও অনুশোচনাকারী বান্দাদের আশ্বস্ত করে পবিত্র কুরআনে অভয়বাণী দিচ্ছেন– ‘হে বান্দারা তোমরা আল্লাহ্‌র অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হয়ো না।’ যারা কায়মনোবাক্যে কৃত অপরাধ

স্বীকার করে আজ লাইলাতুল কদর রজনীতে আল্লাহ্‌কে ডাকবে তারা ক্ষমা ও মুক্তির আশা অবশ্যই করতে পারেন। কেননা, এদের মুক্তির দুয়ার উন্মুক্ত করে আল্লাহ্‌ বারবার বলেছেন– ‘ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম’। নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ পাক ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তবে দয়া ও অনুগ্রহ এমনিতেই পাওয়া যায় না। আল্লাহ্‌র কাছে রহমত ও নাজাতের জন্য দুহাত তুলে ফরিয়াদ তো করতেই হবে। আর মানুষের ফরিয়াদ, আর্জি ও আকুতি খুব বেশি করে আল্লাহ্‌র দরবারে মকবুল ও গ্রহণীয় হওয়ার মুহূর্ত লাইলাতুল কদর।

লাইলাতুল কদর মানে সৌভাগ্য রজনী। এ মহিমান্বিত রজনীকে লাইলাতুল কদর নামে অভিহিত করার তাৎপর্য কী? এ সম্পর্কে সহীহ মুসলিম শরিফের ইমাম নববী (.) লিখেছেন, এ রাতের নাম লাইলাতুল কদর এ জন্যই রাখা হয়েছে যে, কদর মানে তাকদির ভাগ্য। আর এ রাতে মানুষের পরবর্তী এক বছরের তাকদির বা ভাগ্য রিজিক, জন্মমৃত্যু ইত্যাদি কর্তব্যরত ফেরেশতাদের কাছে ন্যস্ত করা হয়। এর আরেক ব্যাখ্যা হলোকদর মানে সম্মান ও মর্যাদা। আর যেহেতু এ রাতের সম্মান, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব অনেক বেশি তাই এ রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়। (মুসলিম)। পবিত্র কুরআনে লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য গুরুত্বের সঙ্গে ব্যক্ত হয়েছে। কোরআন মজিদে লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ও পরিপূর্ণ সুরা রয়েছে। সুরাটির নাম ‘সুরা আল কদর’। সুরাটি ইরশাদ হয়েছে : ‘আমি এই কোরআন অবতীর্ণ করেছি লাইলাতুল কদরমহিমান্বিত রজনীতে। আর মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে আপনি জানেন? লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী হচ্ছে সহস্র মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। সে রাতে ফেরেশতারা ও রূহ (হযরত জিব্রাঈল আ.) অবতীর্ণ হন প্রত্যেক কাজে তাদের প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে, শান্তিই শান্তি সেই রজনী, সুবহে সাদিক পর্যন্ত।’ এ সুরাটির শানে নজুল বা অবতীর্ণের প্রেক্ষাপট সম্পর্কে হাদিস শরিফে রয়েছে, মহানবী (.) বনী ইসরাইলের চারজন নবীর উল্লেখ করে বলেন, তাঁরা প্রত্যেকে ৮০ বছর করে ইবাদতে বিভোর ছিলেন এবং এক মুহূর্তের জন্যও আল্লাহ্‌র ইবাদত থেকে বিরত হননি। আর আল্লাহ্‌র কোনো আদেশের বিপরীতেও চলেননি। এ কথা শুনে সাহাবায়ে কেরাম বিস্মিত হন। সেই মুহূর্তেই হযরত জিব্রাঈল (.) নবীজির (.) কাছে উক্ত কদরের আয়াত শুনালেন, প্রিয় নবী (.) আরো বলেছেন– ‘আল্লাহ্‌ তায়ালা আমার উম্মতদের ওপর লাইলাতুল কদর দান করেছেন। অন্য নবীদের ওপর এ বিরাট দান প্রদত্ত হয়নি।’ প্রিয় নবীর (.) সুন্নাত অনুযায়ী মাহে রমজানের শেষ দশকে এর তালাশে ইবাদত করা উচিত। পবিত্র কোরআনে এ রাতকে হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ উল্লেখ করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর কোনো রাত এ সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে।

উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনরাসুলুল্লাহ্‌ (.) ইরশাদ করেছেন : তোমরা লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করো রমজানের শেষ দশকে বিজোড় রাত্রিতে (মিশকাত)। লাইলাতুল কদর প্রাপ্তির লক্ষ্যে রমজানের শেষ দশকের রাতসমূহে ইবাদতে মশগুল থাকা উত্তম। তবে সাতাশতম রাতের ব্যাপারে নির্দিষ্ট বর্ণনা পাওয়া যায় এবং এ মোতাবেক যুগে যুগে মুসলমানরা লাইলাতুল কদর পালন করে আসছে। লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত রয়েছে। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ্‌ (.) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সাওয়াব বা পুণ্যের আশায় রমজান মাসে রোজা রাখে তার পেছনের সব পাপরাশি ক্ষমা করে দেওয়া হয় এবং যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সাওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে ইবাদত করবে তার পেছনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (বুখারি শরিফ) তবে এ রাতে ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, সুদখোর, গনক, অপরের নিন্দাকারী, হিংসুক, অন্যের সম্পদ আত্মসাৎকারী ও মাতাপিতার অবাধ্য লোকদের দোয়া কবুল হবে না। খাঁটি নিয়তে অনুশোচনা ও তাওবা করলেই মুক্তির আশা করা যায়। অন্যের সম্পদ হকদারকে ফিরিয়ে না দিলে এ রাতেও মুক্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতে হবে। এ রাতে নফল নামাজ, দোয়া দরুদ, জিকির, কোরআন তেলাওয়াত, মাতাপিতা ও মুরুব্বিদের কবর জিয়ারত এবং মহান অলী বুজুর্গদের মাজার জিয়ারত করা ও দান সদগাহ করা অতীব উত্তম। এতে অধিক পুণ্য অর্জিত হয়।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাবেক ফরেস্টার সুলতানুল ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
পরবর্তী নিবন্ধশেখ হাসিনাকে ইরানের প্রেসিডেন্টের টেলিফোন